ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

দুই লাখ টাকার ঋণে ১৪ লাখ পরিশোধ, তবু দেনা ১১ লাখ!

অনলাইন ডেস্ক ::  সুদ ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে এখন পর্যন্ত অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন। সুদের বোঝা বইতে না পেরে অনেকে আত্নহত্যা করেছেন। এরপরও কমেনি সুদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নেয়া।

নাটোরে রামাইগাছি মহল্লাপাড়া। এই পাড়ায় তিন বছর আগে শাহ আলম ও শিরিন বেগম নামের এক দম্পতি ডায়াগনস্টিক সেন্টর খোলার সময় প্রতিবেশী লাকি বেগমের কাছ থেকে প্রতি মাসে সুদ দেওয়ার শর্তে সাদা স্ট্যাম্পে ও চেকের পাতায় সই করে দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন। পরে প্রতি মাসে সুদ পরিশোধ করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং বাড়তি কোনো আয় না থাকায় সংসার পরিচালনা ও সুদের টাকা দিতে গিয়ে ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে।

সেই টাকা পরিশোধ করতে একে একে প্রতিবেশি ডালিম বেগম, ফাতেমা বেগম ও মনোয়ারা বেগমের কাছ থেকেও সুদের ওপর টাকা নেন তিনি। তিন বছরের মাথায় সুদ বাবদ ১৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। তারপরও ঋণের জাল থেকে মুক্ত হতে পারেননি এই দম্পতি। এখনও তারা ১১ লাখ টাকা ঋণী। ঋণ থেকে মুক্তি পেতে শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে জেলা প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়েছেন।

এদিকে ঋণ পরিশোধ করতে গত তিন বছরে শাহ আলম পৈতৃক দুই বিঘা জমি বিক্রি করেছেন। চার শতক জমির ওপর আধাপাকা বসতবাড়ি ছাড়া এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

অবশেষে উপায় না পেয়ে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) নাটোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন নিঃস্ব শাহ আলম।

এখন সুদের টাকা দিতে না পারায় তার বাড়িঘর দখলের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শাহ আলম।

শাহ আলম বলেন, যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তারা আমাদের মানসিক নির্যাতন করছেন। বাধ্য হয়ে ডিসি ও এসপি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহ আলমের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, প্রতিদিনই টাকার জন্য বাড়িতে আসেন সুদ ব্যবসায়ীরা। আমাকে এবং আমার স্বামী-সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসব ঝামেলা দেখে ভবনের মালিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালামাল বের করে ঘর খালি করে দিয়েছেন। আমাদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সুদ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পরিবারের সবাই আত্মহত্যার চিন্তাও করেছিলাম। পাড়া-প্রতিবেশীরা আমাদের সে পথ থেকে ফিরিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লাকি বেগমের স্বামী মাসুম বলেন, তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করেন এবং তার স্ত্রী ছিট কাপড় বিক্রির ব্যবসা করেন। কোনো সুদের ব্যবসা তারা করেন না।

তিনি বলেন, শাহ আলমের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনি সাত লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। বছরখানেক শাহ আলম তাকে লাভের টাকা দিলেও এখন আর দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা বলেন, শাহ আলম সুদি ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: