ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকা আসছেন ৭৩ দেশ-সংস্থার ৫৫০ প্রতিনিধি, জিএফএমডি সম্মেলন বৃহস্পতিবার

অভিবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং এ খাতের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনায় আগামী বৃহস্পতিবার (৮ই ডিসেম্বর) থেকে ঢাকায় শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-জিএফএমডি সম্মেলন। অভিবাসী ও উন্নয়নবিষয়ক বৈশ্বিক ওই ফোরামের এটি নবম সম্মেলন। আন্তর্জাতিক ওই সম্মেলনের সফল বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যস্ত এবারের চেয়ারম্যান রাষ্ট্র বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন সম্মেলনে ২০ মন্ত্রীসহ ৭৩ দেশ ও ২৭ সংস্থার প্রায় সাড়ে ৫০০ প্রতিনিধি যোগ দিচ্ছেন। প্রতিনিধিদের নিবন্ধন এবং প্রাথমিক সম্মতি পাওয়ার পর তাদের আবাসনসহ অন্যান্য প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর কূটনৈতিক জোনের এক অনুষ্ঠানে মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সেই প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন। সচিব জানান, চলতি বছর জুড়ে বাংলাদেশের সভাপতিত্বে জিএফএমডি’র কর্মযজ্ঞ চলেছে। ঢাকা ছাড়াও নিউ ইয়র্ক, জেনেভা ও ব্যাংককে বৈঠক হয়েছে। ঢাকায় সমাপনী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য জার্মানির কাছে চেয়ারম্যানশিপ হস্তান্তর করা হবে। আগামী বছর জার্মানি ও তুরস্ক যৌতভাবে জিএফএমডি’র সভাপত্বি করবে। এর আগে (গত সপ্তাহে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সচিব বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনে পূর্বের অভিজ্ঞতা নেই। আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই। সম্মেলনের সফল বাস্তবায়ন চাই।’ সম্মেলনটি ৮-১২ই ডিসেম্বরের এবারের সম্মেলনের মধ্যবর্তী অর্থাৎ ১০ই ডিসম্বের এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। ওইদিন সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। শুরুর দু’দিনে হবে সিভিল সোসাইটি ডে। আর শেষ দু’দিন হবে গভর্মেন্ট ডে। উদ্বোধনী দিনটি হবে কমন ডে। এ আয়োজনে সিভিল সোসাইটি এবং সরকারি প্রতিনিধি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অভিবাসন ও উন্নয়নের অর্থনীতি, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও সুশাসন- মোটাদাগে এই ৩টি থিমের আওতায় ৬ টি বিষয়ের ওপর সম্মেলনে আলোচনা হবে। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে এবারের সম্মেলনে কল্যাণমুখী ‘মাইগ্রেশন কম্প্যাক্ট’ রচনার পথ সুগম হবে বলে আশা করছে ঢাকা।
কানেক্টিভিটি মুখ্য আলোচ্য: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক বৈশ্বিক ফোরাম (জিএফএমডি)’র ৫দিন ব্যাপী সম্মেলনে ৭৩টি দেশের পাঁচ শতাধিক সরকারি-বেসসরকারি প্রতিনিধি ছাড়াও এবারই প্রথম ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এবারের সম্মেলনের মূল ইস্যু কানেক্টিভিটি। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য অভিবাসন’। জিএফএমডি অভিবাসন বিষয়ক একটি আন্তঃদেশীয় প্লাটফর্ম। যেখানে এত দিন সরকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ খাতের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতেন। ২০০৭ সালে বেলজিয়াম সম্মেলনে মাধ্যমে যাত্রা শুরু হওয়া জিএফএমডি এভাবেই চলে আসছিল। কিন্তু এবারের আয়োজনের ‘নতুন’ অনেক কিছু যুক্ত হচ্ছে, এর তাৎপর্যও অনেক। পররাষ্ট্র সচিব আসন্ন সম্মেলনের বিশেষত্ব প্রসঙ্গে বলেন, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা (৯/১১), ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সামপ্রতিক জোয়ার এবং ইউরোপ-আমেরিকায় অভিবাসীদের জন্য সহানুভূতিশীল নয়, এমন সরকার ক্ষমতায় আসায় এ খাতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। ৯/১১ এরপর সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে অভিবাসনকে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হলেও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে অভিবাসনের মরিয়া প্রচেষ্টা আবারো একটি ধাক্কা দিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে আসন্ন ঢাকা সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ- মন্তব্য পররাষ্ট্র সচিবের। তবে এ সম্মেলনে অভিবাসন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জোরালো হবে এবং এই নিয়ে একটি ‘কমপ্যাক্ট’ তৈরিতে দরকষাকষিতে ঢাকা সুবিধা পাবে বলেও আশা তার। আসন্ন সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোন আলোচনার সুযোগ আছে কি-না? জানতে চাওয়া হলে জিএফএমডি আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ঢাকার কর্মকর্তারা বলেন, এটি একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম। এতে দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। তবে সেখানে অভিবাসন বিষয়ক যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সম্মেলনে মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে নেপি’ড থেকে কোনো প্রতিনিধি আসছেন না-কী ঢাকাস্থ দূতাবাসের কর্মকর্তারা যোগ দেবেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নাগরিক কমিটি গঠন: জিএফএমডি-২০১৬ সফল আয়োজনে বাংলাদেশে একটি নাগরিক সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর জিএফএমডি (বিসিএসসিসি) ২০১৬ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটির নাম উন্মোচন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের তরফে জানানো হয়- গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সিআর আবরারের সভাপতিত্বে এ নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওয়ারবির সৈয়দ সাইফুল হক, আইন ও সালিশ  কেন্দ্রের নূর খান, ব্র্যাক’র হাসান ইমাম, ওকাপের শাকিরুল ইসলাম, ইনাফির আতিকুন নবী, বাসুগের বিমান বড়ুয়া চৌধুরী, মাইগ্র্যান্টস রাইটস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি উইলিয়াম গয়েস ও মাইগ্র্যান্টস ফোরাম অব এশিয়ার প্রতিনিধি টেটি ম্যাকাবুয়াগ এর সঙ্গে রয়েছেন।

পাঠকের মতামত: