আমার নাম জুয়েল রানা। আমি কোনো র্যাব অফিসে যাইনি। আত্মঘাতীও আমি নই। আমি তো মরিনি। ’ রবিবার রাত ১০টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ অফিসে সশরীরে হাজির হয়ে এক যুবক ঠিক এভাবেই নিজের পরিচয় দিলেন। বললেন, ‘র্যাব অফিসের আত্মঘাতী জঙ্গি হিসেবে পত্র-পত্রিকায় আমার নাম ও ছবি দেখে হতবাক হয়েছি। কীভাবে আমার ছবি ও নাম-ঠিকানা এলো বুঝতে পারছি না। ’
জুয়েলের এমন দাবির পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে আশকোনায় নির্মাণাধীন র্যাব সদর দফতরে আত্মঘাতী যুবকটি কে? নিহত যুবকের আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে এই জুয়েল রানার জীবনবৃত্তান্ত মিললই বা কী করে। এমন নানা প্রশ্ন এখন নতুন করে সামনে চলে এসেছে। র্যাব কর্মকর্তাদেরও ভাবিয়ে তুলেছে বিষয়টি। একজনের ব্যক্তিগত তথ্যের সঙ্গে আরেকজনের তথ্যের হুবহু মিল কীভাবে সম্ভব! তবে র্যাব কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, আত্মঘাতী ওই যুবক জুয়েল রানার তথ্য দিয়ে নিজের আইডি করেছিল। তাহলে এ ক্ষেত্রে দায়ী এনআইডি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়টিরও এখন খোঁজখবর চলছে। জুয়েল রানার দেশের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। তিনি মুন্সীগঞ্জের একটি ক্লিনিকে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মুন্সীগঞ্জেই। দুটি সন্তান রয়েছে তার। রবিবার রাতে জুয়েল যখন বাংলাদেশ প্রতিদিন অফিসে এসে কথা বলছিলেন, তখন তার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। তিনি বারবার জানতে চাইছিলেন, তার কোনো সমস্যা হবে কি না। তিনি জানান, র্যাব তাদের ভাঙ্গার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়েছে। বাবা-মাকে নিয়ে গেছে র্যাব দফতরে। মোবাইল ফোনে র্যাব কর্মকর্তারা তার সঙ্গে কথা বলেছেন। যেতে বলেছেন তাদের অফিসে। রবিবার রাতেই র্যাবের ডাকে তিনি উত্তরায় র্যাব কার্যালয়ে যান। গতকাল র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহ্মুদ খান জানান, জুয়েল রানা তাদের কাছেই আছে। কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জুয়েল রানা জানান, পাঁচ বছর আগে তার এনআইডি কার্ড সায়েদাবাদ এলাকা থেকে হারিয়ে যায়। এরপর তিনি আর কার্ডটি তোলেননি। এ ব্যাপারে তিনি একটি জিডিও করেছিলেন। তারও ধারণা, আইডি কার্ডটি কেউ হয়তো পেয়ে ব্যবহার করছে। যে কোনোভাবেই হাতের আঙ্গুলের ছাপও পরিবর্তন করে নিয়েছে। আশকোনায় আত্মঘাতী যুবকের লাশ চার দিন ধরে পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। শুরুতে পিরোজপুরের আমিরন বেগম নামের এক মহিলা আত্মাহুতি দেওয়া যুবককে তার ছেলে দাবি করলেও পরে তিনি নিজ অবস্থান থেকে সরে আসেন। দ্বিতীয় দফায় নিহত ওই যুবক ফরিদপুরের ভাঙ্গার জুয়েল রানা, এ বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত করেই বলেছিলেন কয়েকটি সংস্থার সদস্যরা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের (এনআইডি) ডাটাবেজে নিহতের আঙ্গুলের ছাপ জুয়েলের সঙ্গে মিলে যায়। এর পরই রাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গার গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয় জুয়েলের বাবা-মাসহ পরিবারের আট সদস্যকে। তবে জুয়েলের চাচা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের আটজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এটা সত্যি। আমরাও মনে করেছিলাম নিহত ওই যুবকই হয়তো জুয়েল। তবে আজ (রবিবার) সকালে জুয়েলের ফোন আসায় আমরা চমকে গেছি। ’ এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার জুয়েল রানা নামের যুবকের সঙ্গে আশকোনায় হামলাকারী নিহত যুবকের আঙ্গুলের ছাপ মিলে যাওয়ার বিষয়টি আমাদেরও ভাবিয়ে তুলছে। এখন জুয়েলের বাবা-মায়ের সঙ্গে নিহত যুবকের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে। পুরো বিষয়টি এনআইডি কর্তৃপক্ষও অবহিত রয়েছেন। ’ জানা গেছে, শুক্রবার রাতেই ফরিদপুর ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদাহা আদমপুরের শেখবাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জুয়েলের পরিবারের আট সদস্যকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। পরদিন বেলা ৩টার দিকে জুয়েলের বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের স্থানীয় পাখুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেওয়া হয়। বিডি-প্রতিদিন :
পাঠকের মতামত: