ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

জুয়া ও ভ্যারাইটি শো‘র অভিযোগে রাজপুণ্যাহ মেলা বন্ধ করে দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা

bandarban_1বান্দরবান প্রতিনিধি :::

জুয়া, নগ্ননৃত্য ও ভ্যারাইটি শো চলায় বান্দরবানের বোমাং রাজপুণ্যাহ মেলা বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা। ১৩৯ বছরের পুরনো এই মেলা গত বুধবার শুরু হয়।

সপ্তাহব্যাপী এই মেলা জনতার রুদ্ররোষে তিনদিন পরই গুটিয়ে নিতে হয়েছে।

 সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘ভূমিকর’ ও ‘জুমকর’ পরিশোধের জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে সার্কেল চিফ বা রাজবাড়িতে প্রজাদের সমবেত হতে হত। দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো হেডম্যান-কার্বারির বিনোদনের জন্য রাজপরিবারের পক্ষ থেকে পুণ্যাহ মেলার আয়োজন করা হয়। কালক্রমে এর নাম হয় ‘রাজপুণ্যাহ। ’ পৌষের মাঝামাঝি সময়ে আয়োজিত এই মেলায় বেচাকেনা হত লোকজ সামগ্রী। সে কারণে বোমাং সার্কেলের ১১৪ মৌজার বাসিন্দারা ওই একটি দিনের জন্য পুরো বছর অপেক্ষা করতেন।

বোমাং রাজপরিবারের সূত্র জানায়, স্বাধীনতাপূর্ব সময় এটি ছিল প্রকৃত অর্থে একটি নান্দনিক লোকজ মেলা। স্বাধীনতার পর রাঙামাটির চাকমা সার্কেল এবং খাগড়াছড়ির মং সার্কেলে রাজপুণ্যাহ কিছুটা স্তিমিত হয়। তবে রাজ পরিবারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বোমাং সার্কেলে রাজপুণ্যাহ অব্যাহত থাকে এবং কালক্রমে তা আরো বড় হয়। দেশ-বিদেশের লোকজনদের দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হয় বোমাং রাজপুণ্যাহ। নানা জাতি, ভাষা, বর্ণ ও ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে বোমাং রাজপুণ্যাহ লোকজ মেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে ‘মানুষের মেলা’য় রূপ নেয়। লোভী ব্যবসায়ীদের হাতে পড়ে রাজপুণ্যাহ মেলা এখন ‘নষ্টদের মেলা’য় পরিণত হয়েছে।

গত বুধবার শুরু হওয়া বোমাং রাজপুণ্যাহর পুরো মাঠ ঘুরে এবার লোকজ কোনো সামগ্রীর দোকান পাওয়া যায়নি। দা-বটি নিয়ে কয়েকটি দোকান এলেও তা ছিল নিস্তেজ-নিরাভরণ। পুরো মাঠের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছিল মদের দোকান। ছিল হাউজি, উলঙ্গ নাচের ‘ভ্যারাইটি শো’, জুয়া, রিং-সাবানের খেলা, জেবলিং (চরকি) এবং লটারি। এর বাইরে দোকান-পাট বসেছে তিন শতাধিক। পণ্যের বৈচিত্র্য না থাকায় ব্যবসা হয়নি তাদেরও।

দোকানিরা জানান, বছর তিনেক আগেও রাজপুণ্যাহর মাঠে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় একটি দোকান মিলত। এবার নেওয়া হয়েছে দোকানপ্রতি ১৮ হাজার। ফলে মেলায় বিপুল টাকায় দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরে ১৩ লাখ টাকায় পুরো মাঠ লিজ নিয়েছেন মোহাম্মদ আলী নামের এক চাল ব্যবসায়ী। তিনি আবার এটি অন্য কয়েকজনের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে দেন। দ্বিতীয় পার্টি ১৮ হাজার টাকা করে প্রতিটি দোকান ভাড়া দিয়ে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা আদায় করেছে। কিন্তু এই লেনদেনে (টেক্স) কর বা কোনো ভ্যাট দেওয়া হয়নি।

পাঠকের মতামত: