ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ছাগল হলেও করার কিছু ছিল না

mr mahএম আর মাহমুদ

জাতীয় পরিচয়পত্রে এক ব্যক্তির নাম হয়েছে ছরওয়ারের স্থলে সাওয়াল

এম.আর মাহমুদ :

যত দোষ নন্দ ঘোষ এমন একটি প্রবাদ শুনা যায় যায় হরহামেশা বাস্তবেও তাই। যেমন দূর্বল ব্যক্তির স্ত্রীর সকলেই ভাবি (লেড়ায়ারই মউক বিয়াগুনর বউজ)। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দেয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক দেয়া জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র নিয়ে সাধারণ মানুষ বড় বেকায়দায়। সামন্য ভূল সংশোধন করতে গিয়ে গো-বেচেরা পাবলিকদের খেসারত দিতে হচ্ছে তিলে তিলে।

কিছুদিন আগে নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার সুযোগ দিয়েছে। নির্ধারিত অংকের ফি: ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়ে ভুল সংশোধন ও হারানো কার্ড পুনরায় দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব কার্ড সংশোধন করতে গিয়ে কি পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তা ভুক্তভোগী ছাড়া কারো পক্ষে মন্তব্য করা কঠিন ব্যাপার। নাম, পিতা- মাতার নাম, বয়স সংশোধন করতে জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এর আদালতে গিয়ে হলফ নামা, সংবাদপত্রে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে দৌড়াঝাপের অভিজ্ঞতা যার হয় নাই সে কখনো বুঝতে পারবে না নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দেয়া জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা কি যে কঠিন কাজ। কার ভুলের মাশুল কে দিচ্ছে এ নিয়ে কোন মন্তব্য করার সুযোগ নেই। কারণ কেহই দায় স্বীকার করতে রাজি নয়। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় যারা কাজ করেছে তাদের যোগ্যতা নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। বাংলা, ইংরেজিতে শুদ্ধভাবে যারা লিখতে পারে না তারাও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে নিয়োজিত হয়েছিল। একটি কথা না বললে হয় না: দেশে হঠাৎ বড় ধরণের ঘূর্ণিঝড় হলে বেশির ভাগ মানুষের বাড়িঘর নষ্ট হয়ে যায়। সে সময় দা, কুড়াল, হাতুড়ী থাকলেই যে কেউ মেস্ত্রী হয়ে যেতে পারে। ওভাবেই সারা দেশে যখন ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে অদক্ষ কম্পিউটার অপারেটর দ্বারা এ কাজ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের এ সর্বনাশ ঘটেছে। এখন তার ঘানি টানতে হচ্ছে সাধারণ ভোটারদেরকে।

ক’দিন আগে চকরিয়া উপজেলার বমু বিলছড়ির একজন ভোটার তার জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের ভুল সংশোধন করতে গিয়ে কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হলফ নামা করেছে। ভাগ্যচক্রে হলফনামাটি পড়তে গিয়ে দেখা গেছে জাতীয় পরিচয়পত্রে ওই ভোটারের নাম লেখা হয়েছে মো: সাওয়াল অথচ তার শুদ্ধ নাম মো: ছরওয়ার। বেরশিক এক ভ্রদ্র লোক হলফনামাটি দেখে ঠোঁট কাটা স্টাইলে বলতে শুনা গেছে ভাগ্য যে ভাল ছরওয়ারের পরিবর্তে জাতীয় পরিচয়পত্রে সাওয়াল হয়েছে! যদি ছাগল হয়ে যেত তখনত করার কিছু ছিল না। সাওয়ালের অর্থ খোঁজতে গিয়ে দেখা গেছে ওই শব্দটি রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা। যার অর্থ এলাকার ছেলে। এক সময়ের প্রতাবশালী সেনা শাসক নয় বৎসরের রাষ্ট্র নায়ক হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করলে তিনি রংপুরের ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই সময় রংপুরবাসী তাদের এলাকার সাওয়াল হিসেবে এরশাদকে ভোট দিয়ে সবক’টি আসনে বিজয়ী করেছিল। হতভাগা ছরওয়ার জাতীয় পরিচয়পত্রটি সংশোধনের জন্য নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে শরণাপন্ন হয়েছে। কি জানি তার ভাগ্যে কবে শুদ্ধ জাতীয় পরিচয়পত্রটি জোটে। প্রতিদিনই ভুলে ভরা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য বেশুমার মানুষ নির্বাচন অফিসে যাচ্ছে। এ ভুলের মাশুল হিসেবে ভুলের শিকার ব্যক্তিকে গুণতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। ভুলের শিকার বেশির ভাগ মানুষই হতদরিদ্র। যাদের নুন আনতে পান্থা পুরাচ্ছে। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় যেন তাদের জন্য ‘মরার উপর খারার ঘা’। অনুরূপ অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক দেয়া জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রেও। বিশেষ করে স্বল্প শিক্ষিত মানুষ জন কোন রকমে ভুল চেপে গেলেও পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী ও চাকুরীজীবিরা বড় বেকায়দায়। ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রে ভুল জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদপত্র সংশোধন করতে গিয়ে সুফল পাচ্ছে না। উদ্যোক্তারা সাফ জবাব দিচ্ছে এসব তাদের কাজ নয়। এ সব ঠিক করতে হলে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ নিয়ে হাজার হাজার আবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিদিন জমা হচ্ছে। প্রতিকার কয়েজনে পেয়েছে ভুক্তভোগীরাই জানে। জাতীয়তা পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন দুটোই একজন নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এ দলিলে যদি ভুল হয় ভুলে ভুলেই যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন কাটাতে হবে। নানা ক্ষেত্রে জটিলতার সম্মুখিন হতে হবে। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের পদ্ধতিটা সহজ করা হলে অভাগা লোকজনের জন্য উপকার হত। আইনের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্যই আইন। এ মন্ত্রের বিশ্বাসী হয়ে দু’টি বিষয় সহজ করলে সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে। দেশে অসংখ্য মানুষ মিয়ানমারের নাগরিক না হয়েও ভোটার হতে পারেনি এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। ওই সব লোক হতদরিদ্র হলে সরকারি ত্রাণ সহায়তার আওতায়ও আসছে না। তাদের অবস্থাটা কি হবে? ভুক্তভোগীরা যেখানেই এসব সমস্যা সমাধানের জন্য যায়, তখনই টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। এ অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। যাদের টাকা নাই, তারা যাবে কোথায়? বিষয়টি জরুরীভাবে সুরাহা করা দরকার বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।

 

পাঠকের মতামত: