ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

চাপ দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে -সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি

low

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘প্রচণ্ড চাপ’ প্রয়োগ করে একমাসের ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি জানান, প্রধান বিচারপতির এই  ছুটির রহস্য জানা এবং তা জাতির সামনে প্রকাশের চেষ্টা করবে আইনজীবী সমিতি। গতকাল সকালে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স কক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জয়নুল আবেদীন।
তিনি বলেন, আইনজীবী সমিতি মনে করে, তিনি (প্রধান বিচারপতি) যাতে একমাসের জন্য ছুটিতে চলে যান সেজন্য তার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। জাতি জানে, সারা পৃথিবীর মানুষ জানে, একটি জাজমেন্টের পরে তাকে একটি রাজনৈতিক দল, সরকার বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছিল। আমরা মনে করি, সেই চাপের অংশ হিসেবেই গতকাল (সোমবার) তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, তিনি (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) ছুটিতে যাননি, তাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি কী কারণে একমাসের ছুটি নিয়েছেন তা জানার অধিকার আইনজীবী সমিতির আছে- এমন উল্লেখ করে জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে অবশ্যই সাক্ষাৎ করতে হবে। এই বিচারাঙ্গনে কী ঘটেছে এর প্রকৃত ঘটনা জাতি জানতে চায়। মানুষ যদি জানতে না পারে তাহলে ভবিষ্যতে কোনো বিচারপতি কোনো বিচারক সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য জানার এবং তা জাতির কাছে প্রকাশ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, দেশের মানুষের আশা-ভরসার শেষ  জায়গা সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারে, সেখানে যদি সরকারের হস্তক্ষেপ হয়, তাহলে এটি জাতির জন্য হবে দুঃখজনক। তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারে না। গণতন্ত্র এভাবে চলতে পারে না। সে জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, গতকাল (সোমবার) আমরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। কেন, কী কারণে, কী চাপে, কী জন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন, কেন তিনি আইনজীবী সমিতির সঙ্গে কোনো কথা না বলে অফিস ত্যাগ করেছেন, এটি সমিতির জানার অধিকার আছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, এর আগে তিনি আমাদের দাওয়াত করেছেন আমরা যেন গেট টুগেদারে (অবকাশের পর সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সঙ্গে আইনজীবীদের শুভেচ্ছা বিনিময়) উপস্থিত থাকি। অতীতের ইতিহাস বলে, কখনো কোনো প্রধান বিচারপতি দাওয়াত করে এভাবে ছুটিতে যাননি। কেন তিনি ছুটিতে গিয়েছেন আমাদের সেটা জানার দরকার আছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. ফজলুল করিম এভাবে দাওয়াত করে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি হাঁটতে পারছিলেন না, কিন্তু স্ট্রেচারে করে এসে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। প্রধান বিচারপতির (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) এমন কী ঘটনা ঘটেছে যে কারণে তিনি আজকে (গতকাল) উপস্থিত থাকতে পারেননি। ছুটি নিয়ে চলে গেলেন! প্রেস ব্রিফিংয়ে সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, হঠাৎ করে প্রধান বিচারপতি ছুটি নেয়ায় দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। এদিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দফায় দফায় মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
এদিকে বিকালে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন সমিতির নেতৃবৃন্দ। সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম, সাবেক বিচারপতি আবদুল আউয়াল, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানসহ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী ও সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ। বৈঠক শেষে একাধিক আইনজীবী মানবজমিনকে জানান, প্রধান বিচারপতির  হঠাৎ এই ছুটিতে যাওয়া অপ্রত্যাশিত এবং উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আজ বিকাল চারটায় সুপ্রিম কোর্টে আবারো সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানান আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
গতকালের বৈঠক শেষে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, প্রধান বিচারপতির এই ছুটি নেয়া কতটা সত্য, কেন উনি আজ (গতকাল) কোর্টে আসলেন না এ নিয়ে আমরা বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এটা কেউ বিশ্বাসও করে না। উনি কি জাপান থেকে ছুটি নেয়ার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন? জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরো বৃহৎ আকারে আলোচনার জন্য আগামীকাল (আজ) আবারো বৈঠক করা হবে। অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, প্রধান বিচারপতির হঠাৎ এভাবে ছুটিতে চলে যাওয়া, এটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত, অগ্রহণযোগ্য। আগামীকাল (আজ) আবারো বৈঠক হবে। বৈঠক শেষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, প্রধান  বিচারপতির এই আকস্মিক ছুটি সবাইকে মর্মাহত করেছে। আইনজীবীরা সবাই উদ্বিগ্ন। আজ আবারো সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করব। মানবজমিন

পাঠকের মতামত: