নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: দফায় দফায় কাটা হয়েছে বিলুপ্ত চকরিয়া সুন্দরবনের জেগে ওঠা চরে সৃজিত প্যারাবন। মূলত চিংড়ি প্রকল্প তৈরির উদ্দেশ্যেই পরিবেশ বিধ্বংসী এ সব কর্মকাণ্ড চালানো হয়। সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগে উজাড় হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের এই প্যারাবন। একইসাথে দেদার দখল করে নেওয়া হচ্ছে চরের জমি, মাটি ফেলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে প্রবহমান খালে। এতে ১৯৯১ সাল পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি দুটি সংস্থা কর্তৃক সৃজিত এ প্যারাবনও হারিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন চকরিয়া সুন্দরবন উপকূল ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বদরখালী, চরণদ্বীপ, চরণদ্বীপ মৌজার রামপুর, চিলখালী, গোলদিয়ার অসংখ্য শাখা-প্রশাখা খালের দুই তীরের জেগে উঠা চরে সৃজিত প্যারাবন কেটে ফেলা হয়েছে নির্দয়ভাবে। এখন সেখানে তৈরি করা হচ্ছে চিংড়িঘের। আবার খালের দুই তীর দখল করে অবৈধ স্থাপনাও নির্মাণ করছে এলাকাভেদে স্থানীয় প্রভাবশালী দখলবাজরা।
এই বিষয়ে পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম চকরিয়ার পক্ষ থেকে সভাপতি এম আর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক মনছুর আলম বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার ওসি বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশ কাটা পূর্ব পাড়ার মৃত মোস্তাক আহমদের ছেলে এহেছান উদ্দিন পশ্চিম বড় ভেওলার ডেবডেবি এলাকার কাঁকড়ার দিয়া এলাকার সামুদ্রিক জোয়ার-ভাটার নিয়ন্ত্রিত প্রবহমান খালটি গত ১৫ দিন ধরে শ্রমিক নিয়োজিত করে মাটি ফেলে পানির চলাচল বন্ধ করে দেয়। একইসঙ্গে আশপাশের চরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক হাজার বাইন, কেওড়া, গেওয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্যারাবন গাছ কেটে সাবাড় করা হয়। বর্তমানে সেখানে চিংড়িঘের তৈরির মহাযজ্ঞ চলমান রয়েছে।
পরিবেশসচেতন এই সাংবাদিকেরা বলেন, গত একবছর ধরে কাঁকড়াদিয়া খালটিতে মাটি ফেলে বাঁধ তৈরি, পর্যায়ক্রমে প্যারাবন কেটে ফেলার কর্মকাণ্ড শুরু হয়। মাঝখানে উপজেলা প্রশাসন সেই অপতৎপরতা বন্ধ করতে অভিযানে নামে।
সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আবুল মনছুরের নেতৃত্বে প্রশাসনের লোকজন খালে দেওয়া মাটির বাঁধ অপসারণ করে পানি চলাচলের প্রবাহ নির্বিঘ্ন করে। কিন্তু এর কিছুদিন না যেতেই অভিযুক্ত এহেছান উদ্দিন ফের কাঁকড়াদিয়া খালে মাটির বাঁধ দিয়ে দেয়। একইসময়ে বিভিন্ন প্রজাতির অন্তত ৫ হাজার প্যারাবন গাছ সাবাড় করে সেখানে চিংড়ি ঘের তৈরির কাজ চলছে জোরেশোরে।
পশ্চিম বড় ভেওলার ডেবডেবি এলাকায় কাঁকড়াদিয়া প্রবহমান খালে মাটির বাঁধ ও প্যারাবন উজাড়ের অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশের একটি দল সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অভিযুক্ত এহেছানকে বাড়িতে না পেয়ে ফোন করা হয়। এ সময় এহেছান থানায় এসে অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করার কথা বললেও আর আসেননি। তাই এখন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এহেছান উদ্দিনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে অসংখ্যবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
পাঠকের মতামত: