নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়ায় সালিশি বৈঠকের নোটিশ দিয়ে পরিষদ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর ও হামলার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিরুদ্ধে।
আজ শুক্রবার ( ২৮ জুন) বিকেলে এই অভিযোগে বরইতলী একতা বাজারে বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
অভিযুক্তরা হলেন- বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান সালেকুজ্জামান, দুই ইউপি সদস্য আলমগীর, নাসিম হেজাজী, অফিস সহকারী মহসিন রিমন ও গ্রাম-পুলিশ রিদুয়ান।
এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেছে স্থানীয় পহর চাঁদা এলাকার মৃত মোজাফফর আহমদের ছেলে এনামুল হক।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আজ শুক্রবার ( ২৮ জুন) বিকেলে বরইতলী একতা বাজারে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। একই দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় বাজারে মারধরের শিকার হওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দীন দুলাল, সাহাব উদ্দিন, ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক আইয়ুব খান মিন্টু, সালেহ আহমদ প্রমুখ।
হামলার শিকার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ইনস্ট্রাক্টর (রেডিওলজি) মাহমুদুল হক বলেন, গত রবিবার (২৩ জুন) জায়গা-জমি সংক্রান্ত অভিযোগের সাক্ষী দিতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দুপুর ২টার দিকে গ্রাম আদালতের বিচারকার্য শুরু হয়। শুরুতে মনোযোগ সহকারে বাদী পক্ষের অভিযোগটি শুনেন ইউপি চেয়ারম্যান সালেকুজ্জামান। পরে বিবাদী পক্ষের বক্তব্য প্রদানের সময় তাদের বক্তব্য না শুনে খোদ চেয়ারম্যান নিজেই হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন।
চেয়ারম্যানের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ দেখে বিবাদী পক্ষের লোকজন একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিষদের এজলাস কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলমগীরসহ গ্রাম-পুলিশরা। মেম্বার আলমগীর ও গ্রাম পুলিশরা শক্ত কাঠের লাঠি (বাটাম) দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে আমাদেরকে। এ সময় আমার অপর ভাই এনামুল হকের মুখে লাঠির আঘাতে দাঁতের উপরের চোয়ালে গুরুতর জখম হয়ে একটি দাঁত মাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং একই সময় আকবর হোছেন ও আমাকে বেধড়ক পিটিয়ে পিঠে, কোমরে ও হাতে গুরুতর জখম করে। আঘাতে হাতের হাড় ভেঙে যায়।
ওই সময় শোর-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশের কবল থেকে উদ্ধার করে আমাদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান।
বাদি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদে সেবা প্রার্থীদের আটক রেখে মারধরের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি অপরাধে অভিযোগ দায়ের করলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) কক্সবাজারকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রেখে সেবাপ্রার্থী মাহমুদুল হকের উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান বলেন, বিচারকার্যে বিঘ্ন ঘটানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দরজা বন্ধ করে মারধরের বিষয়টি সঠিক নয়।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে শুনেছি, এ বিষয়ে আদালত যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা আমরা কার্যকর করব।
পাঠকের মতামত: