নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। মাতামুহুরী নদীর পানির প্রবল স্রোতে তিনটি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে দূর্ভোগে পড়েছে বানবাসি মানুষ।
এদিকে, গত চারদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি বিপদ সামীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মুষলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এরমধ্যে বিএমচর ইউনিয়নের কইন্যারকুম, কোনাখালীর মরংঘোনা ও কুরইল্যারকুম পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে বানের পানি ঢুকে পড়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার বমূবিলছড়ি, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, পূর্ববড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, সাহারবিল, ডুলাহাজারা, খুটাখালী ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের নিন্মাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে শত কোটি টাকার চিংড়ি ঘের ও ক্ষেতের ফসল।
ভেঙ্গে পড়েছে আভ্যন্তরীণ গ্রামীণ সড়কগুলো। ফলে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণে বেশিরভাগ নিম্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ বেশকিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে রয়েছে। পানি বন্দি থাকা মানুষের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক জানান, তার ইউনিয়নের মরংঘোনা ও কুরইল্যারটেক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। টিউবওয়েল গুলো ডুবে থাকায় তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরী হয়েছে।
বানের পানিতে চুলা ডুবে থাকায় রান্নাবান্নার কাজ সারতে পারেনি হাজারো পরিবার। বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চকরিয়া নিউজকে জানান, তার ইউনিয়নের পাউবোর কইন্যারকুম বেড়িবাধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে বেশকিছু গ্রাম। গ্রামীণ সড়কগুলো পানির নীচে থাকায় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চিরিংগা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, চিংড়ি জোন খ্যাত তার ইউনিয়নে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বানের পানির সাথে হাজার হাজার একর চিংড়ি ঘের ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।
পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে জানান, তার ইউনিয়নের দুইটি সøুইচ গেট খোলে দেয়া হয়েছে। এরপরও হাজারো পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী জানান, ৯টি ওয়ার্ডের ৭হাজার পানিবন্দি মানুষের কাছে রান্নাকরা খাবার পৌছা দেয়া হচ্ছে। এভাবে বন্যা অব্যাহত থাকলে খাবার সরবরাহও একই নিয়মে চালু থাকবে। চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানান, পৌরসভার পাশাপাশি ১৮টি ইউনিয়নে রান্না করা ও শুকনো খাবার পৌছে দিচ্ছেন বানভাসির কাছে।
তিনি পানিবন্দি বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ১৮টি ইউনিয়নের জন্য ৪ মে: টন করে ৭২ মে: টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১শত বস্তা চিড়া, ২শত কেজি খেজুর ও গুড় বরাদ্দ দেয়ার কথা জানান তিনি।
২৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল দশটায় চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের হালকাকারা গ্রামের আরবাবুল ইসলাম নামে এক শিশু পানিতে পড়ে মারা গেছে।
পাঠকের মতামত: