এম.আর মাহমুদ:
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়া সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশের চিত্র আর চকরিয়ার চিত্র ছিল অনেকাংশে ব্যতিক্রম। এ পর্যন্ত সারা দেশে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রায় ৮৫ জনের প্রাণহানিসহ ৫ হাজারের অধিক আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাঁতরাচ্ছে। এদিক দিয়ে চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। এজন্য প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধুবাদ না জানালে অকৃতজ্ঞতাই হবে। চকরিয়ার ইউপি নির্বাচনে ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫ জন ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যান ছাড়া সকলেই নতুনভাবে নির্বাচিত হয়েছে।
নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে, ১৮টি ইউপি’র মধ্যে ২টি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তৎমধ্যে কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মনছুর স্বেচ্ছায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। পূর্ব বড় ভেওলার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইব্রাহীম আ’লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যানেরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ফাঁসিয়াখালী ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চিরিংগা ইউপিতে কৃষক লীগের জসীম উদ্দিন, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের আ’লীগ নেতা আজিমুল হক আজিম। কোনাখালীতে আ’লীগ নেতা দিদারুল হক সিকদার ও খুটাখালীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা আব্দুর রহমান পুনরায় বিজয়ী হয়ে ৫ বছরের জন্য ক্ষমতা নবায়ন করেছে। বাকিগুলোতে কুপোকাত হয়েছেন বেশিরভাগ ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যান। নতুনভাবে বিজয়ীরা হলেন কাকারায় আ’লীগের শওকত ওসমান, হারবাংয়ে আ’লীগের মিরানুল ইসলাম, পশ্চিম বড় ভেওলায় আ’লীগের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, সাহারবিলে আ’লীগের মহসীন বাবুল, কৈয়ারবিলে আ’লীগের বিদ্রোহী মক্কী ইকবাল, বদরখালীতে আ’লীগের বিদ্রোহী খাইরুল বশর, বিএমচরে আ’লীগের বিদ্রোহী এস.এম জাহাঙ্গীর আলম, বমু বিলছড়িতে বিএনপি’র আব্দুল মতলব, বরইতলীতে বিএনপি’র জালাল আহমদ সিকদার, পূর্ব বড় ভেওলায় বিএনপি’র আনোয়ারুল আরিফ দুলাল, ঢেমুশিয়ায় বিএনপি’র নুরুল আলম জিকু, লক্ষ্যারচরে স্বতন্ত্র গোলাম মোস্তফা কাইছার, ডুলাহাজারায় জাপা’র নুরুল আমিন বিজয়ী হয়েছেন। তারা সকলেই নতুন। কয়েকটি ইউনিয়নে বেশ ক’জন প্রবীণ চেয়ারম্যান প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। যে কারণে তাদের অনেক ভক্ত অনুরক্ত চরমভাবে হতাশ হয়েছে। বিশেষ করে সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের এমটিএম জিয়া উদ্দিন জিয়া ও ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, হারবাংয়ে জহির আহমদ বাবর, নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গেছে সারা দেশে প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে গিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে অনেক ভালো প্রার্থী দলীয় প্রতীক না পেয়ে ভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করতে গিয়ে বিজয়ের মুখ দেখেনি বলে ভোটারদের অভিমত। এক্ষেত্রে অনেকে দলীয় প্রতীকের কারণে বলীর পাটা হয়েছে। ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকার পর পুনরায় নির্বাচন করতে গিয়ে এমন বিপর্যয়ের ঘটনা স্বাভাবিক।
চকরিয়ায় চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে কয়েকটি ইউনিয়নে এক্সপার্ট প্রিজাইডিং অফিসারদের ফলাফল পরিবর্তনের কারণে বেশক’জন প্রার্থী বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে বেশুমার। বিশেষ করে বদরখালী আ’লীগের বিদ্রোহী আ.ন.ম হেফাজ সিকদার বনাম খাইরুল বশর। যা নিয়ে পুরো এলাকায় রয়েছে নানা গুঞ্জন। অনেক প্রার্থীর বিপর্যয় হয়েছে। তাদের আর্তনাদ শোনার কেউ নেই।
এম.আর মাহমুদ, চকরিয়া
পাঠকের মতামত: