বাংলা ট্রিবিউন ::
মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে ও মাদকের অবাধ চালান বন্ধ করতে তালিকা বিনিময়ের উদ্যোগ নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। র্যাব, পুলিশ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ড, বিজিবি ও আনসার-ভিডিপির মধ্যে এই তালিকা বিনিময় হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উদ্যোগে সাতটি সংস্থার মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা বিনিময়ের পর একটি চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এরপরই মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে শুরু হবে যৌথ অভিযান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর একইসঙ্গে দেশব্যাপী তাদের কার্যক্রম বাড়াতে বাড়তি জনবল নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও কাজকর্মে গতি আনতে নেওয়া হচ্ছে নানারকম উদ্যোগ। আলোচনা চলছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অধীনে অস্ত্রধারী বাহিনী তৈরি করারও।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশ থেকে মাদক নির্মূল করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এজন্য সব গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা বিনিময় করা হচ্ছে। সবার তালিকা সমন্বয় করে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
মাস তিনেক আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়া এই কর্মকর্তা বলেন, অধিদফতরে আগের চেয়ে কয়েকগুণ লোকবল বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। একইসঙ্গে অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা আনাসহ মাদক নির্মূলে যথাযথ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর তেজগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ে সাতটি সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ওই বৈঠকে পুলিশ, র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আনসারের প্রতিনিধিরা আলোচনার মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা বিনিময়ের বিষয়ে একমত হন। আট সংস্থার তৈরি তালিকার সমন্বয়ে একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে যৌথ তালিকা করারও সিদ্ধান্ত হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তারা ইতোমধ্যে প্রতিটি সংস্থার কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। চিঠির সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর তাদের নিজেদের তৈরি করা তালিকা সংযুক্ত করে পাঠিয়ে দিচ্ছে। চিঠি পাঠানোর ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থার তালিকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে পাঠানো তালিকায় ১৫০ জনের নাম রয়েছে। ওই তালিকায় কক্সবাজারের সরকারি দলের এমপি বদিসহ অন্তত ১০-১৫ জন ভিআইপি ব্যক্তির নামও রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, তাদের কাছে আগে ৩ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা ছিল। ওই তালিকা পর্যালোচনার পর প্রথম পর্যায়ের জন্য বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের ১৫০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে মাদকের চোরাচালান অর্ধেকে নেমে আসবে। পরবর্তী সময়ে ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের তালিকা ধরে অভিযান চালানো হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, বড় মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে ছোটরা এমনিতেই মাদকের যোগান পাবে না। কারণ বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই মাদক সংগ্রহ করে ছোট ব্যবসায়ীরা।
বাড়ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতরের জনবল
সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বর্তমান জনবল হলো ১ হাজার ৭০৫ জন। এই লোকবল বাড়িয়ে ৮ হাজার ৪২১ জনের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এই প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। নতুন প্রস্তাবনায় একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের স্থানে চার জন, ৮ জন পরিচালকের স্থানে ১৬ জন পরিচালকের পদ তৈরি করা হবে। প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্বে একজন করে পরিচালক থাকবেন। এছাড়া নিচের দিকে অনেক বেশি পদ তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, সারা দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতর একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দেশজুড়ে মাদকের এত বিস্তৃতি হয়েছে যে, সে তুলনায় এর লোকবল খুবই কম। এত কম লোকবল নিয়ে সারা দেশ থেকে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়।
ঢেলে সাজানো হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর
জানা গেছে, নতুন মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ যোগ দেওয়া পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ১৫ দিনের কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন। কাজের গতি বাড়াতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহ ও তিরষ্কার কিংবা প্রয়োজনে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। গত ২৩ আগস্ট ঢাকা মেট্রো অঞ্চলসহ ২৭ জেলার কর্মকর্তাদের মাদক অভিযানে ব্যর্থতার কারণে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রো, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বেশি বেশি মাদক অভিযানের পাশাপাশি মাদক মামলার তদন্তের জন্য কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নিজেদের একটি আর্মড ফোর্স গঠনের জন্যও প্রক্রিয়া চলছে। মাদক তালিকায় যোগ হচ্ছে সিসা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, আইন সংশোধন করে মাদক তালিকায় নতুন করে সিসাকে মাদকদ্রব্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে রাজধানী ঢাকাতেই শতাধিক সিসা বার রয়েছে। শুধু তামাক দিয়ে এসব সিসা বার চালানোর কথা থাকলেও রুদ্ধদ্বার কক্ষে সিসার সঙ্গে নানারকম মাদক মিশিয়ে তা পরিবেশন করা হচ্ছে। সিসাকে মাদকাসক্ত হওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে গণ্য করা হলেও আইনি জটিলতার কারণে সিসা বারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা অভিযান চালাতে পারছেন না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন,আইন সংশোধন করে তালিকাভুক্ত করা হলে সিসা বার চালাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এতে সিসা বারগুলোকে নজরদারির মধ্যে রাখা যাবে, যেন কেউ সাধারণ তামাকের সঙ্গে অন্যান্য মাদক মিশিয়ে পরিবেশন করতে না পারে।
পাঠকের মতামত: