ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

খুটাখালীর নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত একটি গ্রামের নাম পশ্চিম বাক্কুমপাড়া!

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁহ :: সরকারী বেসরকারি সকল প্রকার সুবিধা বঞ্চিত ও অবহেলিত একটি গ্রামের নাম চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী পশ্চিম বাক্কুমপাড়া। এ গ্রামের মাটি বড় উর্বর ও বরকতপূর্ন। এখানে জন্ম হয়েছে আলেম, মাশায়েখ,শিক্ষাবিদ ও গুণীজন। তারপরও চরম অবহেলিত এ গ্রামের মানুষ। তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখার যেন কেউ নেই। দেশজুড়ে যেখানে চলছে উন্নয়নের জোয়ার। তবুও আধুনিক ডিজিটাল উন্নতির ছোঁয়া আজও ছুঁতে পারেনি এ গ্রামকে। অথচ যুগযুগ ধরে এ গ্রামের কৃষক মজদুরদের কষ্ট তিতিক্ষায় রক্তঘাম বিসর্জনে উৎপাদিত ধান-সবজি এলাকার অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে। এ গ্রামের একাধিক প্রবাসী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে খুটাখালীর অর্থনিতীতে দখল করে আছে উল্ল্যেখযোগ্য অবদান। স্থানীয় বয়োবৃদ্ধের মুখের কথা পাক হানাদার বাহীনির নির্যাতন নিপীড়ন ও শোষণের ইতিহাস।কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হওয়ার পরেও স্বাধীনতার কোন স্বাদ এ গ্রামের সহজ সরল বাসিন্দারা পায়নি। মুক্তিযুদ্ধে শরীক হয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে রক্ত ঢেলে কি প্রতিদান পেলেন এমনতর প্রশ্ন এ গ্রামের বাসিন্দাদের। আদৌ কি তারা স্বাধীন দেশের নাগরিক? তাদের প্রতি সরকারের যে অবজ্ঞা অবহেলা, তা সরজমিন দেখে মনে হয়না সরকার তাদেরকে এদেশের নাগরীক হিসেবে গনণা করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিবার নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে গলাবাজ নেতারা সুন্দর হৃদয়ে গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে মেচিয়ে ভাষণ বক্তৃতা করে আর মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে ক্ষণিকের জন্য তাদের খুশী করে তুলেন। ভোটের পর এ পর্যন্ত লাঠি-বাটি চালান দিয়েও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়না। এসব রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চীর মিথ্যাচার আর ভাওতাবাজি এখানকার জনগন ভাল করেই বুঝতে পেরেছেন।অনেককেই বলতে শুনলাম এবার আর ছাড় দেবনা, প্রয়োজনে গড়ে তুলা হবে প্রতিরোধ। পশ্চিম বাক্কুমপাড়া গ্রামটিকে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড হিসেবে ধরা হলেও অনুন্যত ছিটমহল ওয়ার্ড বললেও ভুল হবেনা। কারণ জন্মের পর থেকেই দেখে আসছে এখানকার বাসিন্দারা তাঁদের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র রাস্তাটিও প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। তাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা ধানি জমির (আইল) কাটি। বর্ষা মৌসুমে কষ্ট করে এই কাটি দিয়ে চলাচল করে এ গ্রামের ৩০ টি পরিবার। ধানি জমির কাটি রাস্তা যা চলার অনুপুযোগী। নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। তারপরও নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল এই সূত্র ধরে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এ গ্রামের শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় জমির মালিকদের রোষানলে পড়ে এখন আর সেই চলার রাস্তাটিও নেই। প্রভাবশালীরা তাকেও গিলে খেয়েছে। যার কারনে এ গ্রামের লোকজন এখন করছে অনিশ্চিত জীবন-যাপন। এলাকার বয়োবৃদ্ধ নারী জানালেন, গর্ভবতী মাকে হয়তো চিকিৎসা দিতে গিয়ে পথেই নাকি মৃত্যুবরণ করতে হয়।ব্যক্তিগত, পারিবারিক যোগ্যতার কোন অপরিপূর্ণতা না থাকা সত্বেও রাস্তার দোহাই দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেনা উপযুক্ত ঘরে। নির্দোষ মেয়েটি কেন বলির পাঠা হবে এ রকম হাজারো প্রশ্ন তাদের চোখে-মুখে। তাদের অভিযোগ, সরকারের একটুখানি সুদৃষ্টির অভাবে একজন রোগী ও উপযুক্ত মেয়েটিকে বরণ করতে হচ্ছে করুণ পরিণতি! এই কষ্টের শেষ কোথায়? স্থানীয় ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার অলি আহমদ জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, এ গ্রামে রাস্তা-বিদ্যুৎ নাই কথাটা সত্য। এলাকাবাসি আমাকে বলার পর তাদের সাথে কথা বলে বিদ্যুত সংযোগের জন্য যখন গেলাম তখন কাউকে পাওয়া যায়নি। ইত্যবসরে যখন কর্মসুচির লোক দিয়ে রাস্তা করতে যায় তখন তাদের জায়গা থেকে মাটি নিতে দেয়নি। যার কারনে রাস্তা হয়নি। তারপরও তিনি রাস্তা-বিদ্যুতের জন্য সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করে যাবেন বলে আশ্বস্থ করেন। এ গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান মুহাম্মদ সাগর বলেন, ইউনিয়নের পশ্চিম বাক্কুম পাড়ার প্রায় ৩০ টি পরিবার বিদ্যুৎ এবং রাস্তা ছাড়া দীর্ঘ বছর ধরে জীবন যাপন করছে। এ গ্রামের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি হলে স্কুলে যেতে পারেনা। এতে করে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অকালে ঝরে পড়ছে। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি’র জরুরী হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন। এলাকাবাসী অবহেলিত বাক্কুমপাড়ার দিকে সুদৃষ্টি দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করে গ্রামবাসির মুখে তৃপ্তির হাসি ফোঁটাতে ও চরম সংকট থেকে মুক্তি পেতে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: