রাষ্ট্রদ্রোহের একটি ও নাশকতার ৯টিসহ মোট ১০ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ বুধবার ১০ মামলায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজির হওয়ার দিন ধার্য ছিল। তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে আদালতে হাজির না হওয়ায় তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সময় আবেদন দাখিল করেন। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এ সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে এ দিন ধার্য করেন।
এর আগে ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের একটি ও নাশকতার ৯টিসহ মোট ১০টি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ১ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের একটি ও নাশকতার ৯টিসহ মোট ১০টি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
খালেদার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- দারুসসালাম থানার নাশতার ৮ মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি ও যাত্রাবাড়ী থানার বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে বলা হয় এত লক্ষ শহীদ হয়েছে, এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।’
এরপর ২৩ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে ‘দেশদ্রোহী’ মনোভাব পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগ করে তা প্রত্যাহার করতে উকিল নোটিশ পাঠান সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তিনি।
২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম রাশেদ তালুকদারের আদালতে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী ১২৩ এর ‘ক’, ১২৪ এর ‘ক’ ও ৫০৫ ধারায় পিটিশন মামলা করেন। ৩ মার্চ আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন আদালত। ৫ এপ্রিল এ মামলায় তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
যাত্রাবাড়ী থানার মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলা করা হয়। এতে বাসের ২৯ যাত্রী দগ্ধ হন। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূর আলম (৬০) নামের এক যাত্রী।
ওই ঘটনায় ২৪ জানুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কেএম নুরুজ্জামান। ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) বশির উদ্দিন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিস্ফোরক আইনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৮১ জনকে।
মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন- বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
অপরদিকে ২০১৫ সালের দারুসসালাম থানা এলাকায় নাশতার অভিযোগে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়। এই ৮ মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়।
পাঠকের মতামত: