চকরিয়া নিউজ ডেস্ক :: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজধানীতে অবৈধ ক্যাসিনোগুলোর পেছনে থাকা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও লিডারদের সর্ম্পকে নানা তথ্য জানতে পেরেছে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বুধবার রাতে মোট চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে মোট ১৮২ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত।
জিজ্ঞাসাবাদে যা বলল খালেদ :
অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার দায়ে আটক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তবে তার দেওয়া তথ্য সঠিক কি না যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
র্যাবের দায়িত্বশীল এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, খালেদের নিয়ন্ত্রণাধীন আরো ক্যাসিনো আছে কি-না, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ক্যাসিনোর মতো অবৈধ ব্যবসা চালাতে গেলে অবশ্যই অর্থ ভাগাভাগির বিষয় থাকে। সে বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
স্থানীয় নেতা বা সংশ্লিষ্টদের ছত্রছায়ায় ক্যাসিনো পরিচালিত হতো বলে প্রাথমিকভাবে খালেদ জানিয়েছেন। সেসব ‘লিডার’দের ম্যানেজ করার কথা বললেও কারা কারা জড়িত সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
খালেদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে নিশ্চিত না হয়ে এখনই সে বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন র্যাবের ওই কর্মকর্তা।
খালেদের বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুত হচ্ছে :
র্যাব জানিয়েছে, ইতোমধ্যে খালেদের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল ও গুলশান থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সার্বিক বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া যাবে।
খালেদের প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করবে র্যাব :
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, তাকে আমরা স্বল্প সময় জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পেয়েছি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যগুলো সঠিক কি না, নাকি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
তার নিয়ন্ত্রনাধীন আরো ক্যাসিনো রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অনেক বিষয়েই কিছু তথ্য পেয়েছি, তবে মনে হচ্ছে এগুলো সঠিক নয়। রিমান্ডে এনে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করলে তথ্যগুলো নিশ্চিত হওয়া যাবে।
খালেদকে এখনো থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানা হবে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীতে অবৈধ কোনো ক্যাসিনো থাকতে দিবে না র্যাব :
রাজধানীতে আরো ক্যাসিনো আছে কি-না জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে যে তথ্য ছিল, সে অনুযায়ী সবকটিতে গতকাল রাতে হিট করা হয়েছে। এর বাইরে আরো ক্যাসিনো আছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র্যাব।
ক্যাসিনো অভিযানের সর্বশেষ অবস্থা :
বুধবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার মোট চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। এর মধ্যে মতিঝিলের ইয়াংমেন্স ক্লাব থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার নগদ টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামক ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। কাউকে না পেয়ে ক্যাসিনোটি সিলগালা করা হয়।
মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা, ২০ হাজার ৫০০ জাল টাকাসহ ক্যাসিনোটি গুড়িয়ে দেয়া হয়।
গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকাসহ ক্যাসিনো পরিচালনা ও খেলার অভিযোগে মোট ৪০ জনকে আটক করা হয়। এসব অভিযানে মোট ১৮২ জনের মধ্যে ৩১ জনকে ১ বছর করে এবং বাকিদের ৬ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাবের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট।
বুধবার রাতে গুলশানের বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করে র্যাব। এ সময় তার বাড়ি থেকে তিনটি অস্ত্র, গুলি, ৫৮৫ পিস ইয়াবা, ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫০ টাকা এবং ৬-৭ লাখ টাকা মূল্যের সমমান বিদেশী মুদ্রা জব্দ করা হয়েছে। অস্ত্রগুলোর একটি লাইসেন্সবিহীন, অপর দুটি লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ করে রাখা হয়েছিল।
পাঠকের মতামত: