শাহেদ মিজান, কক্সবাজার :: কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের অন্তত ৮০ শতাংশ খানাখন্দ হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে বড় বড় গর্তও। এতে যান চলাচলের মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এই সড়কটি কার্যত চলাচলে অযোগ্য হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার এই নাজুক দশা হয়েছে। অন্যদিকে শহরের বেশ কয়েকটি উপসড়কও খানাখন্দে ভরে গেছে। এই নিয়ে শহরবাসীর দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে সর্বস্তরের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রধান সড়কটির খানাখন্দের কারণে দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কয়েক বছর ধরে বার বার জোড়াতালি দিয়েই চালানো হচ্ছে সড়কটি। কিন্তু আর জোড়াতালি দিয়েও কাজ হচ্ছে না। দায়িত্ব নেয়ার পর গত দেড় মাসে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অন্তত পাঁচবার সড়কটি গর্ত ভরাট করেছেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তা আবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সড়কটি দিনে দিনে ক্ষয় হতে হতে একেবারে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। চলতি বর্ষা মৌসুম শুরুর পর একেবারে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। সড়কটি খুরুশ্কুল রাস্তা মাথা সংলগ্ন দীর্ঘ স্থানজুড়ে সৃষ্টি হয় বড় বড় বেশ কয়েকটি। এতে বর্ষার শুরু থেকেই ওই স্থানে যান চলাচলে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হয়। ফলে যানজটে পুরো শহর অচল হয়ে পড়েছিল। শহরের কালুরদোকান, বার্মিজ মার্কেট, পেট্রোল পাম্প লালদিঘি এলাকাসহ অন্তত ৮০ শতাংশ স্থানে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানখন্দ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটি লালদিঘির পাড় থেকে হটিকালচার পর্যন্ত স্থানে অধিকাংশ স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্ত। এর মধ্যে পিটিস্কুল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন স্থানে রয়েছে সবচেয়ে বড় গর্ত। এই গর্তটি অন্তত ২০ গজের মতো হবে। ফলে পুরো সড়কটি গর্তে পরিণত হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি জমে একটি পুকুরে পরিণত হয়েছে। এর ভেতরেও রয়েছে উঁচু নিচু আরো গর্ত। এই গর্ত দিয়ে যান চলাচল করছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। পানি থাকায় গভীর গর্তগুলো অনুমান করতে পারছে না চালকেরা। এতে নিয়মিত গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হওয়ায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লেগেই যানজট। এই যানজট ছড়িয়ে যাচ্ছে পুরো শহরজুড়ে। এছাড়াও শহরের কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, পেট্রোল পাম্প এলাকায় রয়েছে অসংখ্য গর্ত। এসব গর্তের কারণে যান চলাচলে ধীর গতি হয়ে সারাক্ষণ লেগেই লেগেই থাকছেই যানজট। এতে মানুষের দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কটি দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চরম জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মাঝে মাঝে জোড়াতালি দিয়েই এই সড়কটি টিকিয়ে রাখা হয়। কিন্তু ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় জোড়াতালিগুলোও দেয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রায় সময় যান চলাচলে চরম বিঘœ ঘটে দুর্ভোগ লেগে থাকে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে অবস্থা আরো চরম হয়েছে। এই নিয়ে সড়ক বিভাগ তাদের জোড়াতালি অব্যাহত রাখে। কিন্তু এর মধ্যে সড়কটি প্রসস্ত করণ ও উন্নয়ন করতে দায়িত্ব পায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
২০১৮ সাল থেকে এই সড়কটি নামত: কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে চয়ে যায়। কিন্তু প্রকল্প চূড়ান্ত না হওয়ায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কার্যত দায়িত্ব নেয়নি। তবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সড়কের কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়ায় সড়ক বিভাগ আর রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। ফলে গত এক বছরের বেশি সময়ে সড়টি ছিলো পুরোপুরি অভিভাবকহীন। এর মধ্যে সড়কটি একনেকে পাশ হলে টনক নড়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। তখন থেকে কার্যত দায়িত্ব নেয় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। দায়িত্ব নিয়ে সড়কের গর্তগুলোতে ইটের সুরকি ফেলে জোড়াতালি দিতে শুরু করে। কিন্তু দেয়ার আগেই তা আবার বিলিন হয়ে পূর্বে অবস্থায় পরিণত হয়। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পিটিস্কুল টেকনিক্যাল স্কুল এলাকায় বড় একটি পুকুরে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও এই বৃষ্টিতে খানাখন্দ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে সড়কটি বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্নভাবে অন্তত পাঁচবার বার সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু যান চলাচলের চাপে তা নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে বৃষ্টি হয়েই একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাতে আবারো পুরো সড়কজুড়ে মারাত্মক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
দুর্ভোগের শিকার শহরবাসী বলছেন, এই সড়কটি পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রধান সড়ক হলেও দীর্ঘ সময়ের এই সড়কের উন্নয়নে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পুরো সময়টা গেছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। এভাবে আর কত! একনেকে পাশ হওয়া প্রকল্প দ্রæত বাস্তবায়ন করে সড়কটি উন্নয়ন করে শহরবাসীকে মুক্ত করা হোক।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক প্রসস্ত করণসহ উন্নয়নের জন্য একনেকে প্রকল্প অনুমোদন। অল্প সময়ের মধ্যে কার্যাদেশ হবে বলে আশা করছি। তবে এর আগে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আগামীকালকের মধ্যে (আজ) সংস্কারের মাধ্যমে গর্তগুলো ভরাট করে দেয়া হবে।’
পাঠকের মতামত: