নিজস্ব প্রতিবেদক :: রেলে চড়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে যাওয়ার যে স্বপ্ন দেশের মানুষ গত কয়েক দশক ধরে দেখছেন-তা এখন সত্যি হওয়ার পথে। পর্যটন নগরীকে কেন্দ্র করে অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেওয়া কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ২৫ কিলোমিটার রেললাইন এখন দৃশ্যমান। মাটি ভরাট, ব্রিজ ও পাস নির্মাণ, রেলস্টেশন তৈরিসহ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
কাগজে কলমে আগামী জুনের মধ্যে সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের’ বাকি ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার কথা।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- কাজ শেষ হতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। এ জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ানোর এই প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সূত্র জানায়- দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১০২ রুট কিলোমিটার। এরমধ্যে কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, হারবাং এবং রামু এলাকায় ২৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। বাকি ৭৭ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনে কাজ চলছে। চলছে সিগনেলিং তার টানার কাজও। এছাড়া এখন পর্যন্ত মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে মেজর ও মাইনর ব্রিজ এবং কালভার্টগুলোর।
প্রকল্পের অধীনে সাঙ্গু নদীর উপর ১টি, মাতামুহুরী নদীর উপর ২টি এবং বাঁকখালী নদীর উপর ১টি বড় রেল ব্রিজ হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব বড় রেল ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রেল স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে মোট ৯টি। এরমধ্যে দুলাহাজরা রেল স্টেশনের কাজ শেষের দিকে। দোহাজারী, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ঈদগাঁও এবং কক্সবাজার রেল স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। শুরু হয়েছে সাতকানিয়া এবং রামুতে রেল স্টেশন নির্মাণের কাজও।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মফিজুর রহমান বলেন, করোনার ধাক্কা, ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা, বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোতে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিলো। সবকিছু কাটিয়ে এ বছরের শুরু থেকে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছিলাম। তবে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এখন নতুন করে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে প্রকল্প কাজে।
তিনি বলেন, যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে সবকিছুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ভারত ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা পাথরের দাম বেড়েছে। স্ক্র্যাপের দাম বাড়ায় লোহার দাম বাড়িয়েছেন উৎপাদনকারীরা। সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দামও বেড়ে গেছে। এসব কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরোদমে কাজ করতে পারছে না। অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পেও কিছুটা ধীরগতি এসেছে।
মফিজুর রহমান বলেন, চলতি বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। তবে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারবো। এরপর এই রেলপথে ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু হবে। কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তা ঠিক করা হবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা কাজ করছি। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।
২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তবে অর্থ সংস্থান না হওয়ায় কাজ আটকে যায়। পরে এডিবির সঙ্গে চুক্তির পর সরকার ও এডিবি মিলে এই প্রকল্পে জন্য ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থের জোগান দেয়। ২০১৮ সালে ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল ট্র্যাকের এই রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত রয়েছে এই প্রকল্পের মেয়াদ
পাঠকের মতামত: