ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি: আদালতের আদেশ অমান্য করে চেক হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় সীমাহীন দুর্নীতি চলছে। টাকার লোভে পড়ে আদালতের নির্দেশ মানছেনা দায়িত্বপ্রাপ্তরা। নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে বিরোধীয় জমিতেও গোপনে ক্ষতিপূরণের টাকার চেক হস্তান্তরের হিড়িক পড়েছে। এতেকরে প্রকৃত হকদাররা বঞ্চিত হওয়ার কারণে বাড়ছে মামলার জট। বদনাম হচ্ছে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, গত ১৬ জুলাই ঈদগাঁও মৌজার ৪৩ নং রোয়াদাদের অনুকূলে সেলিনা আকতার গংকে অতি গোপনে ৩৩ লাখ ১২ হাজার ৪২১ টাকার চেক (নং-০৬৯৪১৬) হস্তান্তর করেছে এলএ অফিস। এতে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা রুবেল হোসেন, সার্ভেয়ার আব্দুল কুদ্দুস ও এমদাদ হোসাইন জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, সরকারের রেল লাইন প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে ঈদগাঁও মৌজার ইসলামাবাদ ৩ নং ওয়ার্ড হিন্দুপাড়ার নুর জাহান বেগম নামের এক মহিলা রোয়াদাদ নং ৩৯, ৪৩, ৪৬, ৪৮ এর বিরুদ্ধে যুগ্ম-জেলা জজ ১ম আদালতে মামলা করেন। মামলা নং-অপর ২১৮/২০১৮। বাদি নুর জাহান বেগম ওই এলাকার মৃত আবুল খায়ের এর স্ত্রী।
মামলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাসহ মোট ৩৪ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বিরোধীয় রোয়াদাদসমূহে কোন ধরণের প্রক্রিয়া না চালানোর আদেশ দেয়।
তাছাড়া বাদীপক্ষের প্রার্থনা মোতাবেক কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ প্রচার করা হবেনা? তা নোটিশ প্রাপ্তির ২০ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার পরও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অতি গোপনে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করেছে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
একইভাবে ইসলামাবাদ হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা মৃত গোপাল চন্দ্রের ছেলে রানা দে যুগ্ম-জেলা জজ ১ম আদালতে গত ১৬ জুলাই অপর ২৫১/২০১৮ নং মামলা করেন। এতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাসহ মোট ৪৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
বাদির বিএস ৩৯৫৯ নং খতিয়ানের বিএস ৫৩১৪ দাগের সম্পূর্ণ ০.৪৪০০একর জমির রোয়াদাদ নং ১১৪ এর ক্ষতিপূরণের টাকা সরকারের হিসেবে জমার রাখার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করা হয়। নোটিশ প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেছে আদালত।
আদালতের এই আদেশটি জেলা প্রশাসককে ১৮ জুলাই লিখিত অবগত করেন বাদি রানা দে। একইভাবে ওই কপি ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ারকে দেয়া হয়। এরপরও গোপনে চেক হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে। আবেদনকারীর ফাইলটি সার্ভেয়ার আবু সাঈদের কাছে রয়েছে।
এ বিষয়ে অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন রুবেলের কাছে জানতে অফিসে গেলে দেখা যায়, তার অফিসে বেশ কয়েকজন চেনাজানা তদবিরবাজ। তারা দীর্ঘক্ষণ দরজা-জানালা বন্ধ করে কথা বলছে। এ কারণে তার অফিসে ঢুকা সম্ভব হয়নি। মুঠোফোনেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত সার্ভেয়ার আব্দুল কুদ্দুস ও এমদাদ হোসাইন অতিব্যস্ততার কারণে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন নি।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা অতিমাত্রায় দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত হয়েছে। সরকারী এই অফিসে টাকা ছাড়া ফাইল নড়েনা। সার্ভেয়ার-কাননগোদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় আবেদনকারীদের। কমিশনের টাকা দিতে না পারলে মাসের পর মাস পড়ে আছে আবেদন। এলও অফিসকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তরের আগেই কমিশনের টাকা শতভাগ পরিশোধ হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় জেলাবাসী।

পাঠকের মতামত: