কক্সবাজার প্রতিনিধি :: পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে পুরো কক্সবাজারে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে জালনোট চক্রের সিন্ডিকেট। সম্প্রতি বিভিন্ন উপজেলায় আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে এ চক্রের কয়েক সদস্য । কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার গরু বাজারকে টার্গেট করে কমপক্ষে নারীসহ ৩০/৩৫ জন সদস্য জড়িত বলে ধারণা করা হয়। জেলা ব্যাপী রয়েছে জাল নোট চক্রের তৎপরতা। দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি হওয়া সত্ত্বেও জাল নোট চক্রের সদস্যদের সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। জাল নোট সংক্রান্ত অপরাধে ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। কিন্তু মামলার দূর্বলতায় জালিয়াতকারীরা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। পুলিশ এ ব্যাপারে যাদের সাক্ষী করে প্রায়ই তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। ফলে মামলার নিষ্পত্তি অসম্ভব হয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে জাল নোট ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের কারণে তাদের জামিন দেওয়ার জন্য আইনী তৎপরতা চালাতে আইনজীবীদের কেউ কেউ মুখিয়ে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে তারা জামিন পান আইনের ফাঁক গলিয়ে। চার্জশীটের দূর্বলতায় অপরাধীরা রেহাই পেয়ে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি জাল করা হয় ৫শ ও ১ হাজার টাকার নোট। জাল নোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মৃত্যুদন্ডের বিধান ছিল। ১৯৮৭ সালে তা রহিত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড করা হয়। মৃত্যুদন্ডের পুনঃ প্রর্বতন না হোক এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের জামিন অযোগ্য করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও আর্থিক জরিমানা সম্বলিত নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে এ অপরাধের বিচারে বিশেষ আদালত গঠনের কথা ভাবা যেতে পারে।
এছাড়া পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া,মহেশখালী কুতুবদিয়া, পেকুয়া চকরিয়া,রামু, ঈদগাঁও,সদরের বিভিন্ন হাট বাজারে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। বিশেষ করে ঈদুল আযহার সময় গৃহস্থদের প্রয়োজনীয় আদা, মরিচ, তেল, পেয়াজ, রসুনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এ সুযোগে বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী নকল মালামাল বিক্রি করতেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা ইদানিং ভয়ঙ্কর ও বহুমাত্রিক আকার ধারণ করেছে কক্সবাজারে। নকল ও ভেজাল ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য খাটি ও বিশুদ্ধ শব্দ দুটি কক্সবাজার থেকে নির্বাসনের পথে। ভেজালমুক্ত খাদ্য সামগ্রী এখন প্রত্যক হাট বাজারে সোনার হরিনের চেয়েও দূর্লভ। মাছ, মাংস, চাউল, আটা, তেল, ঘি, ফলমূল, শাকসবজি এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধসহ সবকিছুতেই ভেজাল। মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিষাক্ত ঔষধ মেশানো খাদ্য সামগ্রী মাছ, মাংস, ফল-ফলাদী এবং ভেজাল ঔষধ খেয়ে কক্সবাজারের মানুষজন নানা দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে ক্রমশঃ অকাল মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে পুরো জেলার জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ এসব অনৈতিকতা প্রতিরোধে যেন কেউ নেই কক্সবাজারে। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা আকষ্মিক কয়েকটি বাজারের দোকানে অভিযান পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে হাত গুটিয়ে নেয়। ফলে যা হওয়ার তাই হয়ে যায়। বিপনী বিতানগুলো হয়ে যায় ভেজালের অভয়াশ্রম। সওদাপতিদের মতে, নকল ও ভেজাল পণ্যের যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সেটা থেকে মুক্ত হয়ে জনমনে স্বস্তি আনা সম্ভব না হলে এক ধরণের নাবিশ্বাস ও ভীতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তাছাড়া জাল টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতি বাড়ায়। প্রতারণার খপ্পরে পড়ে মানুষ। কিন্তু নকল ও ভেজাল পণ্যের কারণে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য হয়ে যেতে পারে। খাদ্যপণ্যে ভেজাল ও বিষ মিশ্রণ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির সৃষ্টি করেছে। নকল, ভেজাল টিকে আছে আইনের নমনীয়তার কারণে কিংবা যথাযথ প্রয়োগের অভাবে। নকল ও ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দানই শুধু নয়। তারা যাতে ভবিষ্যতে অপরাধ ভিত্তিতে জড়িত না হয় সেজন্য নজরদারী ও বাড়াতে হবে। ভেজালের এহেন দৌরাত্ব্যের অবসানের ভেজাল বিরোধী অভিযান আবশ্যক বলে মনে করেন সওদাপতিরা।এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে প্রতিটি উপজেলার হাট বাজারগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।জালনোট চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। হাট বাজার গুলোতে কোন ধরনের যাতে জালনোট ব্যবহার না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে ব্যবসায়ীদেরকে আরো সতর্ক হওয়ারও অনুরোধ জানান পুলিশ সুপার।
পাঠকের মতামত: