বাংলাট্রিবিউন:
ব্যাংকিং সেবাভালো নেই দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো। ধর্মীয় মূল্যবোধকে পুঁজি করেও এসব ব্যাংক ব্যবসা জমাতে পারছে না। শুধু তাই নয়, ইসলামী শাখা খুলে বেশ কিছু সাধারণ ব্যাংকও বিপদে পড়েছে। লোকসান কমিয়ে আনতে একটি ব্যাংক তাদের ইসলামী শাখা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এক বছরের ব্যবধানে দুই ডজনের বেশি ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ৯টি কনভেনশনাল ব্যাংক ২১টি শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং চালু করলেও বর্তমানে ২০টি শাখায় তা চালু রয়েছে। ওই ৯টি ব্যাংকের ইসলামী শাখায় মোট ৪২১ জন কর্মকর্তা থাকলেও ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় ৩৯৫ জনে। ফলে এক বছরের ব্যবধানে চাকরি হারিয়েছেন ২৬ জন। এছাড়াও এসব ব্যাংকের ইসলামী শাখায় আমানতের পাশাপাশি কমে গেছে বিনিয়োগও।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ব্যাংকের রেমিটেন্স মারাত্মকভাবে কমেছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলামী ৮টি ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ হাজার ২১২ কোটি টাকার রেমিটেন্স আসলেও এ বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছে ৯ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ৯১১ কোটি টাকার রেমিটেন্স কমেছে।
এছাড়া ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে মুনাফার প্রবৃদ্ধি ক্রমেই নেতিবাচক হচ্ছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এই ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছিল ২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। অথচ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এই ব্যাংকগুলো মুনাফা করতে পেরেছে ১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবধানে মুনাফা কমেছে ৯৬০ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৮টি পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংক ছাড়া আরও ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং করছে।
এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হেলাল আহমদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়াতে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে একটা ধাক্কা লেগেছে। তবে কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামী শাখা কমে যাওয়ার তথ্যে নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
ইসলামিক ব্যাংকিং
তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কিছু কনভেনশনাল ব্যাংক তাদের অনেক শাখা ইসলামী শাখা করার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে। আবার অনেক ব্যাংক সম্পূর্ণভাবে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ফিরতে চাচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু ইসলামী ধারার ব্যাংক বিপদে আছে তা নয়, পুরো ব্যাংক খাতই রয়েছে ঝুঁকিতে। বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবাহে গতি না থাকায় ব্যাংকগুলোয় বিপুল পরিমাণের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল পড়ে আছে। অলস টাকা কাজে না লাগার কারণে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা কমেছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ২৫টি ব্যাংক এক হাজার ৫১টি শাখার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৮টি ব্যাংক তাদের এক হাজার ৬টি শাখার মাধ্যমে পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করছে। এছাড়া ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ২০ ইসলামী শাখা এবং ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ২৫ ইসলামী উইন্ডোর মাধ্যমে ব্যাংকিং করছে। যদিও এইসব ব্যাংক চলছে সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য প্রণীত আইন দিয়েই।
বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব ব্যাংক পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামী নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে এগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত ৮ ইসলামী ব্যাংক সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুনাফা করেছে এক হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে এই ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছিল ২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। এই হিসাবে ৯ মাসের ব্যবধানে ৮টি ইসলামী ব্যাংকের গড়ে মুনাফা কমেছে ৯৬২ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে পুরো ব্যাংক খাতের মোট আমানতের মধ্যে ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ ইসলামী শাখাগুলোতে। একইভাবে মোট ঋণের ২৩ শতাংশেরও বেশি পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে এই ইসলামী ব্যাংকগুলো। এছাড়া মোট রেমিটেন্সের ৩৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ এসেছে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে মোট আমানত রয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এছাড়া, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকগুলো মোট বিনিয়োগ করেছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে পুরো ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।
পাঠকের মতামত: