ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আলীকদমে ২০টি প্রাঃ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত, শিক্ষকদের বেতন বন্ধ-ইউএনডিপির শিক্ষা সহায়তা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ

praimaryমমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম :::

জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ২০১৫ সালের জুলাই বেতন পাচ্ছেন না। ইউএনডিপি’র ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা’ প্রকল্পের আওতায় এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের জুন মাসে শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে এসব বিদ্যালয় অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। ফলে এ উপজেলার দুর্গম এলাকার দুই হাজারের বেশীর কোমলমতি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বলে স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভাবকরার জানান।

পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ইউএনডিপি’র ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা’ প্রকল্প শুরু হয় ২০০৮ সালে। শুরুতে এ প্রকল্পের নাম ছিল ‘মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্প’। ২০১০ সালের জুলাই মাসে ইউএনডিপি প্রকল্পটির পরিচালনার ভার পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করে। তখন প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা প্রকল্প’।

প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ক উইলিয়াম মার্মা বলেন, ২০১০ সালের আলীকদম উপজেলার দুর্গম ও বিদ্যালয়বিহীন পাহাড়ি এলাকাগুলোতে এ প্রকল্পের আওতায় ২০টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠা করা এসব বিদ্যালয় দুর্গম এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য খুবই প্রয়োজন। ইউএনডিপির প্রকল্পের টাকায় এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা না হলে অদুর ভবিষ্যতে ওইসব দুর্গম এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আসবাবপত্র ক্রয়খাতে আর্থিক সহায়তা দেয়া ইউএনডিপি। পাশাপাশি আলীকদমের ২০টি বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে চারজন করে শিক্ষকের বেতন-ভাতাও দেওয়া হতো। প্রত্যেক শিক্ষক মাসে তিন হাজার ৫০০ করে ভাতা পেতেন। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে ২০টি বিদ্যালয়ের ৮০ জন শিক্ষক বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

আলীকদম ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার জনপ্রতিনিধি রেংরই মুরুং ও কামপুকং মুরুং জানান, নতুন প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলো পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষার বিকাশে খুবই সহায়ক। এতদিন দুর্গমের নৃ-জনগোষ্ঠীর কোমলমতি শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। ইউএনডিপির তৈরী করা বিদ্যালয়গুলো শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌলিক শিক্ষা সহায়তা প্রকল্পের শিক্ষা কর্মকর্তা এনিন মার্মা সংবাদিকদের জানান, ইউএনডিপির প্রকল্প শুরু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলোর ব্যয় নির্বাহ করা হতো প্রকল্পের টাকায়। প্রতিটি বিদ্যালয়ের চারজন করে শিক্ষকের বেতন ভাতা দেওয়া হতো। বিদ্যালয়গুলো এখন সরকারীকরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে বিদ্যালয়গুলো। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না।

বাঘের ঝিরি পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বেতন-ভাতা বন্ধ আছে। তারপরও ১৩৭ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিবেচনায় রেখে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে জানতে পেরেছি’।

লাংরিং পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্রাহাম ত্রিপুরা বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভালবেসে বিদ্যালয়ে না এসে তো থাকতে পারি না। বেতন নেই গতবছরের জুলাই থেকে। শিক্ষকদের বেতন পাওয়ার কোন প্রতিশ্রুতি পাচ্ছিনা। বেতন ছাড়া আমরা কতদিন বিদ্যালয় চালাতে পারব তাও আমি বলতে পারছি না। বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করা হলে কোনো সমস্যা থাকত না’।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ¤্রাে বলেন, ‘প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার নৃগোষ্ঠীর শিশুরা মৌলিক অধিকার ‘শিক্ষা’ থেকে বঞ্চিত ছিল। ইউএনডিপি দুর্গম এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সে সুযোগ নিশ্চিত করেছে বটে। কিন্তু প্রকল্প মেয়াদ শেষ হবার পর সরকারিভাবে এসব বিদ্যালয় পরিচালনায় অর্থায়ন না করলে এ উপজেলার অন্তত দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা করছি। এসব বিদ্যালয় দ্রুত জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয়া হোক’।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, এসব বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য তথ্য কয়েকবার সরকারিভাবে চাওয়া হয়েছে। কয়েকবার তথ্য পাঠানো হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়গুলো টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাঠকের মতামত: