বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। গত একমাসের বেশী সময় ধরে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট গ্রাহকরা পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাচ্ছেন না সরকারি কর্মকর্তাদের কথায়। সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ সংকটের বিষয়ে লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলীর জবাব অনেকটা দায়সারা।
স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, গত মাসাধিককাল ধরে আলীকদম উপজেলায় ২৪ ঘন্টার মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কয়েক ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ আসলেও লো-ভোল্টেজে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর মধ্যে ফ্রিজ, মোটর, টিভি চলে না। অব্যাহত লো-ভেল্টোজের কারণে ইতোমধ্যে অনেকে ইলেক্ট্রিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দিনে ও রাতের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকলেও বিদ্যুৎ বিল আদায়ের ব্যাপারে পারাঙ্গমতা দেখাচ্ছে লামা বিদ্যুৎ বিভাগ। মিটার রিডিং এর চেয়ে অতিরিক্ত বিল করছে অহরহ। এমন অভিযোগ ভূক্তভোগী গ্রাহকদের।
এদিকে, আবহাওয়ার বিবর্তনের সাথে সাথে চাপা ও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে জনজীবন। এরমধ্যে বিদ্যুতের অব্যাহত লোড-শেডিং জনজীবনকে দুর্বিসহ করেছে আরো বেশী।
বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, মাস গেলে ঠিকই বিলটা হাতে চলে আসে, বিল পরিশোধ করতে না পারলে অতিরিক্ত ফি গুণতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে করিৎকর্মা বিদ্যুৎকর্মীরা লাইন বিচ্ছিন্ন করতে পিছপা হন না। বিদ্যুতের ভেলকিবাজি বাড়লেও প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বিদ্যুৎ বিভাগ। ২৪ ঘন্টায় ৪/৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও অনেক সময় ১৫/২০ মিনিটের বেশী স্থায়ী হয় না। এরমধ্যে লো-ভোল্টেজে অতিষ্ট গ্রাহকরা।
সূত্র জানায়, লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আওতায় পার্শ্ববতী লামা ও চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর এবং বমু-বিলছড়ি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়। এ বিদ্যুৎ সরবরাহ এলাকায় আবাসিক গ্রাহকের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর জোন হেডকোয়ার্টার, সাব জোন, বিভিন্ন সেনা ক্যাম্প, লামা উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও আলীকদম উপজেলা ৩০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বেসরকারি দপ্তরসহ বিদ্যুৎ নির্ভর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানও বিদ্যুৎ এর ভোগান্তিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিদ্যুতের ভোগান্তির কথা প্রকাশ করেছে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আল-আমিন। গত ১৬ এপ্রিল এক পোস্টে তিনি জানান, “আলীকদম উপজেলাতে সারাদিন বিদ্যুৎ নেই। এ মূহুর্তে সংকট আছে- এমন তথ্য নেই…। এ জনভোগান্তির কারণ কী…? পুনশ্চ: গত কয়েকদিন ধরেই এ অবস্থা”।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডাঃ রণি কর্মকার বলেন, “বিদ্যুৎ না পাওয়াতে ফ্রিজজাত যেসব ভ্যাকসিনগুলো রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও হাসপাতালের বেডে যেসব রোগী আছে বিদ্যুতের অভাবে তাদেরও চরম ভোগান্তি হচ্ছে”।
লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ হেলাল উদ্দিনের কাছে সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, “চকরিয়া-আলীকদমে ৩৩ কেভি লাইন উন্নীতকরণ, বৈরি আবহাওয়া, রাস্তার গাছকাটার কারণে বিদ্যুৎ সংকট চলছে! লামা বিদ্যুৎ সাব ষ্টেশনকে ১১ কেভি থেকে ৩৩ কেভিতে উন্নীত করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমাদের লোডশেডিং একটু বেশি হচ্ছে”।
পাঠকের মতামত: