ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

 হেলিকপ্টারে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্র ও ওষুধপত্র পাঠানো হচ্ছে

আলীকদমে দুর্গম এলাকায় ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগ

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম ::  পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নজুড়ে বসবাস করেন পাহাড়ের অন্যতম ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠী মুরুং। পুরোটাই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল এই ক্ষুদ্র জাতীসত্ত্বা। বর্তমানে কুরুকপাতা ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়ায় অবনতি হওয়া ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নয়নে একযোগে কাজ করছে সেনা বাহিনী ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মারা গেছে ১১ জন।

উল্লেখ্য, পাহাড়ের অন্যান্য ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর পাশাপাশি সবসময় বাংলাদেশ সেনা বাহিনী পাশে থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে থাকেন মুরুংরা। এ ধারাবারাহিকতার ব্যত্যয় হয়নি কুরুকপাতা ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়ায় চলমান ডায়রিয়া পরিস্থিতিতে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, এ ইউনিয়নের মাংরতম পাড়া, ম্যানলিউপাড়া এবং সমথং পাড়ায় গত ৮ জুন থেকে ব্যাপক আকারে ডায়রিয়ার প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে।

সেনা মেডিকেল টীম সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত পাড়াসমূহে মুরুং জনগোষ্ঠীর শতকরা প্রায় ষাট ভাগ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মূমুর্ষ অবস্থায় জীবন-যাপন করছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডায়রিয়ার প্রাদূর্ভাবের শুরু থেকেই আলীকদম সেনা জোনের টহল দলের মাধ্যমে আক্রান্ত পাড়াগুলোতে নিয়মিতভাবে বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ঔষধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

এছাড়াও, গত ১৪ জুন এসব এলাকায় সামরিক ও বেসামরিক চিকিৎসক দল পাঠানো হয় এবং একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। সেনা বাহিনীর এ টীমের সাথে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি চিকিৎসক দলও।

এলাকার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়াতে জনসাধারণের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আওতাধীন সদর দপ্তর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের উদ্যোগে বুধবার (১৬ জুন) জিএসও-২ (ইন্ট)-এর নেতৃত্বে আবারো ওই দূর্গম এলাকায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে জরুরী স্বাস্থ্যপরিস্থিতি মোকাবেলায় বিপুল সংখ্যক জীবনরক্ষাকারী ঔষধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, কলেরা স্যালাইন, খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য ঔষধ এবং শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও দূর্গত এলাকা থেকে তিন জন মুমূর্ষ রোগী- রেংঅং ম্রো (১১), মাংলাই ম্রো (৫) ও ওয়াই চাদ ম্রো (৫৫)-কে হেলিকপ্টার যোগে বান্দরবান সেনানিবাসস্থ হেলিপ্যাড এ নিয়ে আসা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে দূর্গতদের সহায়তায় প্রয়োজন অনুযায়ী সবধরনের সহায়তার জন্য ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।

সেনাসূত্র আরো জানায়, সেনাবাহিনী যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর যেকোন আপদকালীন সময়ে তাদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছে এটি তারই একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ।

সেনাবাহিনী ভবিষ্যতেও পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীসহ সব জাতি ও ধর্মের মানুষের পাশে থেকে তাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের যেকোন প্রয়োজনে সবসময় নিরলস ভাবে কাজ করে যাবে।

এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডাঃ মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন রোগী ভর্তি হয়। এর আগে থেকে চিকিৎসাধীন ৮ জন ডায়রিয়া রোগীর মধ্যে ৫ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন। অন্য রোগীদের অবস্থা উন্নতির দিকে।

তিনি বলেন, মেডিকেল টীমের সদস্যরা কুরুকপাতা ইউনিয়নের দুর্গত পাড়াসমুহে এবং আশেপাশে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দুর্গত এলাকায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্র ও ওষুধপত্র পাঠানো হয়েছে।

ডায়রিয়ার ভয়ে যে সকল বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে পাহাড়ের জুম ঘরে চলে গিয়েছিল তারা পাড়াতে ফিরে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। ফিল্ড হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টীমের প্রধান দুর্গত এলাকায় থেকে মুঠোফোনে এসব তথ্যাদি জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: