ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বনাম করোনা: কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান……..

:: এম.আর মাহামুদ ::

বৈষ্মিক মহামারী করোনা না ছড়ানোর লক্ষ্যে সরকার দীর্ঘ সময় লকডাউন ঘোষণা করেছে। এসময়ে বসত বাড়ী ছাড়া বেশিরভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস পাড়া বন্ধ ছিল। কিন্তু তারপরও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা মনগড়া বিদ্যুৎ বিল তৈরী করে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় করেছে। আদায়কৃত টাকা হয়তো সরকারী কোষাগারে জমা হলেও গ্রাহকেরা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অতীতে একটি বাড়িতে অতীতে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল আদায় করলেও লকডাউন চলাকালীন সময় ৩ মাসের বিল একসাথে আদায় করতে গিয়ে কোন কোন গ্রাহকের ক্ষেত্রে ৫শ টাকায় ৭শ থেকে ১হাজার টাকা আবার ১ হাজার টাকা থেকে ৩হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল করে আদায় করেছে। আবার যারা অফিসে গিয়ে প্রতিবাদ করেছে তাদেরকে কিছু কিছু ছাড়ও দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের বক্তব্য হচ্ছে মিটার রিডিং তারা নিতে পারেনি। কারণ হিসাবে যুক্তি দেখাচ্ছে “করোনা”র ভয়। যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য। তবে ১ হাজার টাকার বিলের ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল হওয়ার কোন যুক্তি আছে বলে মনে হয়না। কারণ মানুষ এখন অনেক সচেতন। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের ভয়ে সাশ্রয়ী লাইট ব্যবহার করছে। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ কেউ ব্যবহার করেনা। যারা করে তারা মাসের শেষে তিলে তিলে ভোগ করে। গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ গ্রাহক ফ্যান, বাল্ব ব্যবহার করে থাকে। আবার কোন কোন গ্রাহক মোটর নিয়ে পানি উত্তোলনও করে থাকে। এখনো গ্রামের গ্রাহকেরা এসি ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়নি। হয়তো পুরো উপজেলায় এসি ব্যবহার কারীর সংখ্যা হাতেগোনা। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা করোনার দুর্যোগ কালে লাগামহীন ভাবে বিদ্যুৎ বিল তৈরী করে আদায় করার পিছনে কোন অসৎ উদ্দ্যেশ্য কাজ করেছে বলে অনেকেরই অভিমত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ করে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোন যুক্তি নেই। কিন্তু করোনার দুর্যোগ চালাকালে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আদায়ের কারণে সরকারের ভাবমুর্তি অনেকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে বেশিরভাগ গ্রাহকের অভিমত। অপরদিকে পল্লী বিদ্যুৎ এর অবস্থাও অনেকটা অনুরুপ। এক্ষেত্রে না বললে হয়না, গ্রাহকেরা নিজের টাকায় মিটার ক্রয় করার পরও প্রতি মাসে মিটার ভাড়া আদায় করছে। বিষয়টি মাথায় আসছেনা। গ্রাহকেরা এক্ষেত্রে নিরবে হজম করে যাচ্ছে। ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই স্ট্যাটাস দিয়ে জানাতে চাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ যদি প্রতি মাসে মিটার ভাড়া আদায় করতে পারে, তাহলে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের সময় যাদের ভুমি ব্যবহার হয়েছে তাদের জমির লাগিয়তও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দাবী করতে পারে! চকরিয়ার সমবায় মার্কেট, নিউ মার্কেট ও সুপার মার্কেটসহ বেশ কটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন- দীর্ঘ ৩ মাস ধরে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও মোটা অংকের অর্থ বিদ্যুৎ বিল হিসেবে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এক দিকে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ, অপরদিকে করোনার ভয়। এরি মধ্যে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আদায় গ্রাহকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় ভাবে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জুলুম করেছে। প্রতিবাদ করে তেমন একটা প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা। তারা যা বিল করে তাই দিতে হচ্ছে। সরকার করোনার কারণে বিদ্যুৎ বিলের বিলম্ব মাশুল (সুদ) আদায় ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করেছে। ৩ মাসের বিলম্ব মাশুল (সুদ) মাফ করলেও ৬ মাসের বিল একসাথে গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে। এযেন “গরু মেরে জুতা দানের মত”। সরকার করোনা চলাকালীন সময় বিপন্ন হতদরিদ্র সহ নিম্নমধ্যভিত্ত অনেক কেই মানবিক সহায়তা দিয়েছে। এই সহায়তার বিনিময়ে যে পরিমাণ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আদায় করেছে তা মনে হয় পুষিয়ে নিয়েছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মহোদয় ঘোষণা দিয়েছেন অতিরিক্ত বিল আদায়কারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয় আল্লাহই ভাল জানে। হয়তো অতিরিক্ত বিল আদায়ের কারণে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু কর্মকর্তাকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বদলি করবে, এর বেশি তো শাস্তি আর হবেনা। কিন্তু গ্রাহকদের পকেট কেটে যে টাকা গুলো নেওয়া হয়েছে সেই টাকা গুলো কি কেউ ফিরিয়ে পাবে। হ্যা, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখাবে পরবর্তী মাসে মিটার রিডিং দেখে বিল সমন্বয় করে নেবে, এরচাইতে বেশি আরকি হবে। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের একটিই দাবী আমরা করোনার দুর্যোগে ভিক্ষা চাইনা, কুত্তা সামলাতেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত ভাবে নিবেদন করব।

লেখক: এম আর মাহমুদ, দৈনিক সমকাল-চকরিয়া প্রতিনিধি

সভাপতি. চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব, চকরিয়া, কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত: