ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

লোহাগাড়ায় তিন গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, লোহাগাড়া :: লোহাগাড়ায় গত একমাসে তিন গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। অভিযোগ পাওয়া গেছে এসবের পিছনে পরকীয়া, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন ছিল অন্রতম।
জানা যায়, গত ১৮ জুলাই উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পূর্ব মাইজবিলা মিস্ত্রি বর পাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ফারজানা ইয়াছমিন কলি (২১) নামে এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তিনি ওই এলাকার জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আতিয়ার পাড়ার মাস্টার আজিজুর রহমানের কন্যা। ঘটনার পর নিহত গৃহবধুর লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় স্বামী। নিহতের মা রিজিয়া বেগমের অভিযোগ বিয়ের পর থেকে তার মেয়েকে স্বামী ও শ্বাশুড়ি মিলে নানা কারণে নির্যাতন করে আসছিল। তারাই তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। ঘটনার রাতেই শ্বাশুড়ি রিজিয়া বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এছাড়া গত ১২ আগস্ট উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাংলা বাজার মিয়াজি পাড়ায় শ্বশুর বাড়ি থেকে মিনু আরা বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়। স্বামী আবদুল জাব্বার হাসপাতালে স্ত্রীর লাশ রেখে পালিয়ে যায়। নিহত গৃহবধু পার্বত্য লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের মেইচ্ছ্যা ঝিরি এলাকার আবুল হাশেমের কন্যা। নিহতের মা নুরুন্নিছা বেগমের অভিযোগ শ্বশুর বাড়ির লোকজন নানা কারণে তার মেয়েকে নির্যাতন করতো। তারা তার মেয়েকে হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিল। নিহতের স্বামী আবদুল জব্বার জানায়, তার স্ত্রীর সাথে প্রতিবেশী জনৈক এক যুবকের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে বাধা দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তার স্ত্রী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

অপরদিকে, গত ২১ আগস্ট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সুখড়িকুল এলাকায় শ্বশুর বাড়ি থেকে ফাতেমা বেগম (২২) নামে এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই এলাকার মো. শরীফের স্ত্রী ও চুনতি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নতুন পাড়ার মো. ঈসমাইলের কন্যা। এ ঘটনায় নিহতের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছিল। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে। নিহতের চাচা ছিদ্দিক আহমদের অভিযোগ তার ভাতিজির স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার ভাতিজিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। নিহতের গলায় আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। নিহতের স্বামী শরীফ জানায়, তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন মনোমালিন্য ছিল না। রাতে ঘুমানোর সময় তার স্ত্রী শারীরিক অসুস্থতার কথা জানায়। সকালে রুমের ভিতর শোয়া অবস্থার তার মৃত দেহ পাওয়া যায়।

লোহাগাড়া সামাজিক ব্যাধি প্রতিরোধ ফোরামের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল খালেক চকরিয়া নিউজকে বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অবিশ্বাস, স্বামীর মাদক সেবন, পরকীয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি এবং বেকারত্ব ইত্যাদি সামাজিক ব্যাধি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, ন্যায় বিচার, সুশাসন, পারিবারিক ধর্মীয় মূল্যবোধ অনুশীলন, ধর্মীয় গুরুদের মাধ্যমে নৈতিকতা সৃষ্টিকরণে এলাকা ভিত্তিক সচেতনামূলক সভা করলে আত্মহত্যার মত সামাজিক ব্যাধি কমবে। পারিবারিক কলহ ও মাদকমুক্ত পরিবার গঠনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। কারণ আমরা আইন মানতে রাজি নই। আমাদেরকে আইন মানাতে হয়।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ চকরিয়া নিউজকে জানান, পৃথক ঘটনায় ৩ গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে ২ গৃহবধুর লাশ হাসপাতাল থেকে। অপর গৃহবধুর লাশ শ্বশুর বাড়ি থেকে। এ ঘটনায় থানায় ২টি আত্মহত্যা প্ররোচনা ও একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উভয় গৃহবধুর লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট পাবার পর তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

 

পাঠকের মতামত: