ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

প্রতিটি স্কুলে হবে বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও ফুলের বাগান

চকরিয়ায় ১৪৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাজবে লাল সবুজ রঙে

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: ২০২১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী তথা মুজিববর্ষের সমাপনীকে ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার এলাকার ১৪৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষাবিভাগ। বৈশি^ক মহামারি করোনা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে প্রতিটি বিদ্যালয়কে পরিকল্পিত উন্নয়নে ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে নতুন বছরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রিয়প্রাঙ্গন উপহার দিতে এইধরণের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ।

সোমবার ২৮ ডিসেম্বর চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষ মোহনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা (এসএমসি) কমিটির সভাপতিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এসময় উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার, সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর। মতবিনিময় সভায় চকরিয়া উপজেলার ৮০টির বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি উপস্থিত থেকে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, নানাধরণের সমস্যা, লেখাপড়ার অগ্রগতি, পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট এবং বিদ্যালয়কে ঢেলে সাজাতে উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পনার সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

মতবিনিময় সভায় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর সমাপনীকে ঘিরে চকরিয়া উপজেলার ১৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পরিকল্পিত উন্নয়নে ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে আমুল পরিবর্তনে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তর যৌথভাবে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহন করেছে।

পরিকল্পনার অংশহিসেবে মুজিব শতবর্ষের আগে আমরা প্রতিটি বিদ্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কর্ণার উপহার দেব। যেখানে থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি, তাঁর লেখা আত্মজীবিনী ছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনভিত্তিক বিভিন্ন বই। একইসঙ্গে প্রতিটি বিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হবে ফুলের বাগান। আর ২০২১ সালের মার্চ মাসের আগে উপজেলার সবকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সাজানো হবে স্বাধীনতার শ্রেষ্ঠ অর্জন লাল সবুজ পতাকার প্রতিচ্ছবি লাল সবুজ রঙে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চকরিয়া উপজেলার ৭৫টি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। যারমধ্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য দুই কোটি টাকা বিভাজন করা হয়েছে। আমরা উল্লেখিত টাকার বিপরীতে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের আধুনিকায়নে কাজ করবো। প্রতিটি ক্লাসরুমে বসানো হবে আধুনিকমানের টাইলাইস। এছাড়াও যেসব বিদ্যালয়ে মাঠ ভরাট করণ, বাউন্ডারী দেওয়া, গেইট নির্মাণ, ওয়াশরুম সংস্কার এবং বিশেষ সংস্কার প্রয়োজন সবই করা হবে উল্লেখিত টাকা থেকে। আর এসব উন্নয়নযঞ্জ করতে যদি অর্থসংকট তৈরী হয় প্রয়োজনে তাঁরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মতবিনিময় সভায় ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরীজ বলেন, জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীর এইদিনে চকরিয়া উপজেলাবাসির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ একটি বড় অর্জন উপহার দিয়েছেন। যেটি অতীত ইতিহাসে ছিল কল্পনাপ্রসুত। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার সুদক্ষ মনিটরিংয়ের মধ্যদিয়ে চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ১৪০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে চকরিয়াবাসিকে ধন্য করেছেন। তাঁর এই অর্জনে প্রাথমিক শিক্ষাপরিবার আজ গর্বিত।

মতবিনিময় সভায় চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার বলেন, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও চেতনা নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে ছড়িয়ে দিতে এবং মায়ের ভাষা বাংলার প্রচলন সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে আমরা এই উদ্যোগটি গ্রহন করি।

পাশাপাশি শহীদ মিনার দেখে শিশুদের স্কুলগামী করা, ঝরে পড়া রোধ, জাতীয় পতাকা ও সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মূল্যবোধের হাতেখড়ি দেওয়ার লক্ষ্যেই এ ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ ছিল আমাদের। আর প্রতিটি বিদ্যালয় কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক মহল সবার সহযোগিতায় আমরা শহীদ মিনার নির্মাণকাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে এই কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষ নির্দেশনা দেন। এতদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিশেষ দিবসগুলোতে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শ্রদ্ধা জানাতো। এখন নিজের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরের কাছেই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ১৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে জমি সংক্রান্ত জটিলতা কেটে গেলে সহসা অবশিষ্ট থাকা চারটি বিদ্যালয়েও শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

 

পাঠকের মতামত: