ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

পাল্টে যাচ্ছে কক্সবাজার উপকূল

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলা ও জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে চার স্তরের জৈব প্রতিরোধ ব্যবস্থা

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার :: প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং হারিয়ে যাওয়া জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে কয়েক স্তরের জৈব প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা একটি আদর্শ বায়োশিল্ড গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটিতে ফিরে আসা প্রকৃতি ধরে রাখতে এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ হিসাবে সম্প্রতি চার স্তরের এই জৈব প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, শামুক-ঝিনুক, সাগরলতা-বালিয়াড়ি, নিশিন্দা-রায়মুনিয়া-বরইসহ মাঝারি উচ্চতার উদ্ভিদ ও নারিকেল-ঝাউয়ের মতো দীর্ঘ উচ্চতার উদ্ভিদের আলাদা আলাদা স্তর সংরক্ষণের মাধ্যমে এই আদর্শ জৈব প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নও শুরু করে দিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সাগরলতা-বালিয়াড়ি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সৈকতের বালিয়াড়িতে গমনাগমন নিষিদ্ধ করে সাইন বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। সৈকত থেকে শামুক-ঝিনুক তোলাও বন্ধ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক জানান, সাগরলতার বালিয়াড়ির পেছনে নিশিন্দা-রায়মুনিয়া-কেয়া-বরইসহ স্থানীয় মাঝারি উচ্চতার উদ্ভিদ দিয়ে বায়োশিল্ডের পরবর্তী স্তর গড়ে তোলা হবে। আর এর পরের স্তরে থাকবে নারিকেল-ঝাউয়ের মতো দীর্ঘ উচ্চতার উদ্ভিদগুলো। আবার এসব স্তরের ফাঁকে ফাঁকে গড়ে তোলা হবে পর্যটন সুবিধাও। ফলে একদিকে সমুদ্র উপকূলে একটি শক্তিশালী জৈব প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, অন্যদিকে ঔষধী ও ফলদ বনায়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হবে ব্লু ইকোনমি। পর্যটনও আরো বিকশিত হবে।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্র তীরের ভাঙন ঠেকাতে ঝাউবনের একক বায়োশিল্ড ব্যর্থ বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে স্থানীয় জনসাধারণসহ কিছু পরিবেশ বিজ্ঞানী। সৈকতের অগ্রবর্তী অংশে সাগরলতার পরিবর্তে দীর্ঘ উচ্চতার ঝাউগাছ লাগানোর কারণে বায়ুচাপে সৈকতের বালিয়াড়ি থেকে মাটি সরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিম বলেন, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে পারেনি ঝাউগাছ। বরং ঘূর্ণিঝড়ের সময় তীব্র বায়ুর ঘর্ষণে ঝাউগাছগুলোতে আগুন ধরে যায়। পরে সৈকতের প্রায় সব ঝাউগাছ মরে যায়। ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর রাগিবউদ্দিন আহমদ বলেন, স্থানীয় উদ্ভিদ দিয়ে কক্সবাজার সৈকতে একটি আদর্শ বায়োশিল্ড থাকার দরকার ছিল। অথচ পাকিস্তান আমলে বিজাতীয় ঝাউগাছ লাগিয়ে আমাদের সৈকত ধ্বংস করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজার সৈকতে একটি আদর্শ বায়োশিল্ড ছিল না। এখন তিন স্তরের উদ্ভিদের যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা অত্যন্ত চমৎকার। পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিম তিন স্তরের উদ্ভিদের এ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি সমর্থন করে একে একটি আদর্শ বায়োশিল্ড পরিকল্পনা বলে আখ্যায়িত করেন।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন আশা করেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পর্যটন খাত ছাড়া কেবল ফলমূল ও ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি করে বছরে কয়েকশত কোটি টাকা আয় হবে। একে কেন্দ্র করে হার্বাল ওষুধ শিল্পও গড়ে উঠতে পারে।

পাঠকের মতামত: