ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় বুরো চাষে  নেক ব্লাষ্ট রোগের আক্রমণ, চাষীরা দিশাহারা 

ফারুক আহমদ, উখিয়া ::  উখিয়ায় চলতি বোরো মৌসুমের বিস্তৃত জমির  চাষাবাদে  নেক ব্লাষ্ট  স্হানীয় ভাষায় ( গেটি মরা)   নামক রোগে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে।  ফলন ঘরে তোলার আগেই এ রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে চাষীরা  দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এর ফলে এবারে ফলন  উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খোদ  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় নেক ব্লাস্ট প্রাদুর্ভাব এর কথা সত্যতা  স্বীকার করে বলেছেন, এটি আক্রমণ শুরু হলেই প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন। তবে সাধারণত ধান গাছের পাতায় ছত্রাক দেখা দিলেই ধাপে ধাপে কীটনাশক স্প্রে করে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 এদিকে স্থানীয় চাষীরা  ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন সরকারিভাবে নিয়োজিত মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের খামখেয়ালীপনা ও কৃষকদেরকে সঠিক সময়ে পরামর্শ দিতে ব্যর্থ    এবং নেক ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে পূর্ব  থেকে প্রস্তুতিমূলক ধারণা না দেওয়ায় আজ বিলের পর বিল জুড়ে নেক ব্লাস্ট রোগ মারাত্মক আকারে দেখা দিয়েছে। বিআর ২৮ নম্বর জাতের ধান চাষে  এ রোগটি বেশি প্রকোপ  দেয়া দেয়।

অভিযোগে প্রকাশ  সাবেক  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম অসুস্থতার কারনে দীর্ঘ দিন    অফিসে  অনুপস্থিত  থাকার  কারণে  উখিয়া কৃষি অফিসে  চেইন অফ কমান্ড  ভেঙ্গে পড়ে।  অর্থাৎ দায়িত্বরত,  সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ও    উপসহকারী  কৃষি কর্মকর্তা গণ যার যার  ইচ্ছামত  দায়িত্ব পালন করেছে।

 অনেকে ঘরে বসে কাগজ-কলম ঠিক রেখে কেবল অফিসে মাঠের কাজ দেখিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কৃষকদের সাথে মাসে একবারও তাদের দেখা হয়নি এমনই নজির রয়েছে।

 কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার হলুদিয়া পালং, রত্নাপালং, জালিয়া পালং, রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের ৬৪ গ্রামে প্রায় ৬ হাজার ২ শত হেক্টর  জমিতে বোরো চাষের আবাদ হয়েছে।

 তন্মধ্যে ৬০ ভাগ  জমিতে ব্রি  ২৮ নম্বর  জাতের চাষাবাদ  করেছে চাষীরা।     বর্তমানে চাষাবাদ ফলন আসতে শুরু করেছে। আর কয়েকদিন  ধান মাড়াইয়ের কাজ শুরু হবে।

 এদিকে সরোজমিন পরিদর্শনের দেখা গেছে হলদিয়া পালং, পাগলীর বিল  মরিচ্যা,  চৌধুরীপাড়া, সাবেক রুমকা, রত্না পালং, খোন্দকার পাড়া,      ভালুকিয়া পালং, গয়ালমারা, চাকবৈটা,  পাইন্যাশিয়া,     সোনাইছড়ি, জালিয়াপালং, তুতুরবিল,    হিজুলিয়া,   রাজাপালং , টাইপালং দরগাহবিল,  কুতুপালং ও পালংখালী এলাকায় শত শত একর জমিতে নেক  ব্লাষ্ট  বা গেটি মরা রোগ দেখা দিয়েছে। যা খুব মারাত্মক ধারণ করছে।

স্থানীয় চাষীরা জানান গাছের শীষ আসার পর যখন ফলন আসতে শুরু করে তখন নেক ব্লাস্ট রোগের প্রকোপটা তীব্র হয়ে উঠে।

খোন্দকার  পাড়া গ্রামের চাষী জাহাঙ্গীর আলম   কেলাসা পাড়া ছৈয়দ নূর,  পশ্চিম রত্না গ্রামের  সাধন বড়ুয়া    সহ কয়েকজন চাষী  জানান এ রোগের আক্রমণের শিকার হয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত সম্মুখীন হয়েছে তারা।

অনেকে বলেন এ রোগ দেখা দিলে ফলন আর পাওয়া যায় না। এমনকি ওষুধ ছিটিয়ে   প্রতিরোধ  করা যাচ্ছে না।

কোট বাজার উখিয়া সদর ও মরিচ্যা বাজারের  কয়েকজন কীটনাশক ব্যবসায়ী জানান প্রতিদিন শত শত কৃষক নেক ব্লাস্ট রোগের কথা বলে দোকানে ধর্না দিচ্ছে ওষুধের জন্য।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র  রায় জানান বিআর ২৮  নম্বর জাতের চাষা বাদে নেক ব্লাষ্ট রোগের প্রকোপটা বেশি।  বিভিন্ন স্থানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এটি সত্য।  উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরকে মাঠ পর্যায়ে চাষীদের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,  আগামীতে বিআর ২৮ নম্বর  জাত দিয়ে  ধান চাষ না করার জন্য চাষীদেরকে নিরুৎসাহিত করা হবে।

স্থানীয় চাষীদের মতে হাজার হাজার টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে রাত দিন পরিশ্রম করে চাষাবাদ করলেও নেক ব্লাস্ট নামক ভয়াবহ রোগের কারণে আমাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। সচেতন নাগরিক সমাজ জানান,  চলতি বোরো মৌসুমে  নেক ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

##

পাঠকের মতামত: