ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারের ক্ষতি হয় এমন কোন সংবাদ করা যাবে না -অধ্যাপক আকতার চৌধুরী

ইমাম খাইর, কক্সবাজার ::  কক্সবাজারের ক্ষতি হয় এমন কোন সংবাদ করা যাবে না। একটি মিথ্যা সংবাদের কারণে শুধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়, পুরো জনপদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সংবাদ প্রচার, প্রকাশের আগে পরবর্তী ইফেক্ট খেয়াল করতে হবে।
অনলাইন সাংবাদিকদের দুইদিনের ওয়ার্কশপের প্রথম দিনে কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন) সম্পাদক ও কক্সবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আকতার চৌধুরী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শখের বসে নয়, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মেনে দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হবে। কলম আছে বলেই যেমন তেমন লিখা যাবে না। খেলাচ্ছলে যেন সাংবাদিকতা না হয়। সংবাদ প্রচারের পূর্বে ধর্ম, দেশ বা সরকারের ক্ষতি হচ্ছে কিনা, বিবেচনায় আনতে হবে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শহরের কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হলে অনলাইন সাংবাদিকদের নিয়ে কর্মশালাটির আয়োজন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা-কোস্ট ট্রাস্ট।
দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সহায়তায় কর্মশালা আকতার চৌধুরী বলেন, প্রতিজনই আজকাল সাংবাদিক। বেশি আর কম সবার কাছেই সংবাদ আছে। কেউ প্রকাশ করে, আর কেউ প্রকাশের সাহস করে না।
সামনের দিনগুলো অনলাইন সাংবাদিকতার মন্তব্য করে সিবিএন সম্পাদক বলেন, প্রতি সেকেন্ডে সংবাদ সৃষ্টি হচ্ছে। অনলাইন পোর্টালগুলো না থাকলে অনেক কাগজের পত্রিকা অালোর মুখ দেখতো না। অদূর ভবিষ্যতে কাগজের পত্রিকাগুলো যাদুঘরে যাবে। অনলাইন সাংবাদিকতাই টিকে থাকবে। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও যুগের চাহিদার কারণেই চিত্র পাল্টাচ্ছে।
দেশে প্রায় ৮ হাজার অনলাইন রয়েছে, যার অনেকগুলো বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনছে। এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করছে। সরকারের সাপোর্ট না পেলেও নিজের দায়িত্ববোধ থেকে টিকে আছে এসব অনলাইন পোর্টাল।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো বড় শক্তি মনে করেন অধ্যাপক আকতার চৌধুরী।
তিনি দুঃখ করে এ-ও বলেন, কেউ উপরে ওঠছে দেখে তাকে টেনে ধরার প্রবণতা আমাদের মাঝে বেশ লক্ষণীয়। অনুজদের দূরে ঠেলে না দিয়ে তাদের বুকে আগলে রাখতে হবে। অগ্রজদের সঠিক অভিভাবকত্ব পালন করতে হবে। তা হলে অপ-সাংবাদিকতা দূর হবে।
জনাব চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতা আজকের নতুন নয়। ১৪ শত বছর লাগে থেকেই, মুহাম্মদ (স.) এর সময়কাল থেকে সাংবাদিকতার জন্ম। বিশ্বনবী নিজেই সাংবাদিক ছিলেন। তার সঠিক নির্দেশনা বা সাংবাদিকতা মানবজাতির জন্য অনুসরণীয় হয়ে আছে। যিশু খ্রীস্টও একজন সংবাদ প্রচারক ছিলেন।
কর্মশালার রিসোর্স পার্সন জনাব আকতার চৌধুরী বলেন, প্রথাগত সাংবাদিকতার চেয়ে অনলাইন সাংবাদিকতা অনেক স্মার্ট। তবে, প্রতিদিন আমরা যে সংবাদ প্রকাশ করি তার পেছনে ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও অজামিনযোগ্য মামলার কথা মাথায় রেখে কাজ করি।
একটি ভুল তথ্যের কারণে পুরো জনপদ মুহুর্তেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। কলমের অপব্যবহারের কারণে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে ফেলছি। সংবাদে আপডেট থাকতে গিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা চলবে না। স্বার্থ হাসিলের জন্য কারো বিপক্ষে সংবাদ করা যাবে না। সংবাদে স্বচ্ছ মানসিকতা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সৎ সাংবাদিকতার জন্য বেতন-ভাতা দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদপত্রের মালিকদের চিন্তা করা দরকার।
এখনো কোন অনলাইনের স্বীকৃতি দেয় নি সরকার। সবাই আবেদিত, নিবন্ধিত নয়। সব অনলাইন পোর্টালকে নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতার আওতায় রাখতে নিবন্ধন খুবই জরুরি মনে করেন অধ্যাপক আকতার চৌধুরী।
তার মতে, অনলাইন সাংবাদিকতার কারণে প্রথাগত সাংবাদিকতা অচল হতে চলেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্ট আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, অপসাংবাদিকতারোধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনলাইন সাংবাদিকতাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। নীতিমালা সৃষ্টি না করেই আইন প্রয়োগ করা যাবে না।
কোস্ট ট্রাস্টের টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় ওয়ার্কশপে স্কাইপে কথা বলেন নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।
তিনি কক্সবাজারে সাংবাদিকদের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক বরকত উল্লাহ মারুফ।
বক্তব্য রাখেন -এনটিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি ইকরাম চৌধুরী টিপু, চ্যানেল আই’র স্টাফ রিপোর্টার সরওয়ার আজম মানিক, উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সরওয়ার আলম শাহীন।
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে অনলাইন সাংবাদিকতায় জড়িত প্রায় ২৫ জন সাংবাদিক এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছে।
২৯ ডিসেম্বর ওয়ার্কশপের সমাপনি।

পাঠকের মতামত: