ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

বন্যহাতির পাল এবার সাফারি পার্কে খাবারের সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: বন্যহাতির একটি পাল ঢুকে পড়েছে চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। গত দশদিন ধরে বন্যহাতির এই পালটি পার্কের অভ্যন্তরে অবস্থান করছে এবং খাবারের সন্ধানে পার্কের ভেতর এখানে-ওখানে বিচরণ করছে। তবে অন্যান্য বারের মতো বন্যহাতির পালটি পার্কের কোন স্থাপনায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত হানা দেয়নি। এরপরও পার্ক কর্তৃপক্ষ বন্যহাতির এই পালটির প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রেখেছেন। পাশাপাশি পার্কে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থীর নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিয়েছেন।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিবছরই শীতমৌসুম শুরুর পর পার্কের পূর্ব সীমান্তের দেওয়ালবিহীন এলাকা দিয়ে বন্যহাতির পাল ঢুকে পড়ে পার্কে। পাহাড়ে চরম খাদ্য সংকটের কারণে প্রতিবছরই ক্ষুধার্ত বন্যহাতির পালটি পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। অন্যান্য বার বন্যহাতির পাল পার্কের বিভিন্ন প্রাণীর বেষ্টনীতে হানা দিলেও এবার এখনো পর্যন্ত তারা শান্ত রয়েছে।

বনবিভাগ ও বন্যহাতি বিশেষজ্ঞদের মতে, চকরিয়া ও লামার সীমান্তবর্তী কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভিন্ন মৌজায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড়, বন্যহাতির বিচরণ ক্ষেত্র, আবাসস্থল ও অভয়ারণ্য ছিল। বিশেষ করে ফাঁসিয়াখালী বনবিটের সীমান্তবর্তী উচিতার বিল মৌজায় ছিল বন্যহাতির অন্যতম আবাসস্থল তথা অভয়ারণ্য। কিন্তু গত একযুগ আগে থেকে উচিতারবিলের বন্যহাতির এই অভয়ারণ্য ধ্বংস, অসংখ্য পাহাড় কেটে সাবাড় ও ঘনজঙ্গলের নিরাপদ খাদ্যভাণ্ডার তছনছ করে সেখানে অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলার কারণে বার বার বন্যহাতি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। ক্ষেতের ফসল, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে পিষে মারছে এই বন্যহাতি। একইভাবে সাফারি পার্কের অভ্যন্তরেও ঢুকে খাবারের সন্ধানে বিচরণ করছে বন্যহাতি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধ্বংস করে ফেলা বন্যহাতির এই আবাসস্থল ও অভয়ারণ্য যদি পূর্বের মতো গড়ে তোলা যায়, তাহলে শীতমৌসুমে ক্ষুধার্ত বন্যহাতির পাল আর লোকালয়ে হানা দেবে না। এজন্য বনবিভাগ তথা সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে বনের হাতিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে একসময়।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের আওতাধীন বেশিরভাগ বনবিটের বৃক্ষ নিধন, পাহাড় নিধনসহ হাতির খাবারযোগ্য গাছপালা, বাঁশঝাড় ধ্বংস করে ফেলায় সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও আমন ধান কাটাও শেষপর্যায়ে চলে আসায় ক্ষুধার্ত বন্যহাতির পাল পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে খাবারের সন্ধানে বিচরণ করছে। পার্কে ঢুকে পড়া এবারের বন্যহাতির পালে ১২টি প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৩টি বাচ্চা হাতি রয়েছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে জানান, চকরিয়া-লামার সীমান্তবর্তী এলাকা চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী বনবিটের নিয়ন্ত্রণাধীণ উচিতারবিল মৌজাসহ আশপাশের এলাকায় ঘন জঙ্গল তৈরিসহ বনে হাতির অভয়ারণ্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

x

পাঠকের মতামত: