ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

সাংসদ বাসন্তী চাকমার অপসারণ দাবীতে আলীকদমে মানব বন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি ::

সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা কর্তৃক গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রদত্ত একটি বক্তব্যের প্রতিবাদে তার অপসারণ দাবী করে আলীকদমে বিশাল মানব বন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে প্রেসক্লাব চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত এ মানব বন্ধনে সহ¯্রাধিক পাহাড়ি-বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। মানব বন্ধনে স্মারকলিপি পাঠ করেন বিশিষ্ট মুরুং নেতা ইয়োংলক মুরুং। এতে সাংসদ বাসন্তী চাকমার কুশ পুত্তুলিকা পুড়ানো হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে চলেছে। কিন্তু সংরক্ষিত আসনের একজন মহিলা সংসদ সদস্য ২৭ ফেব্রুয়ারী জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উগ্র সাম্প্রদায়িক এক বক্তব্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পার্বত্য বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছেন। এ ধরণের বক্তব্য পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা। এ ধরণের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, সাংসদ বাসন্তী চাকমা সরকারের প্রতিনিধিত্ব না করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতিভূ হয়ে সেনাবাহিনী ও বাঙ্গালী জাতীসত্ত্বার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, জাতীয় সংসদে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত এ বক্তব্যের কারণে পার্বত্য বাঙ্গালী এবং সাধারণ উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পাহাড়ের বাঙালীদের মানসম্মান ক্ষুণœ হয়েছে। তাঁর এ বক্তব্য পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি, শৃঙ্খলা ও সকল জাতীসত্ত্বার মাঝে সম্প্রীতির সেতুবন্ধনকারী সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে কালিমা লেপন। স্মারকলিপিতে দাবী করা হয়, এমপি বাসন্তী চাকমার উস্কানীমূলক এ বক্তব্য রাষ্ট্রবিরোধী।

উল্লেখ্য যে, সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা সংসদে বলেছেন, তাঁর বয়স যখন ১৬/১৭ তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিলো। ১৯৮৬ সালের ১ মে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির একটি ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ঐ দিন “আল্লাহু আকবার” স্লোগান দিয়ে পানছড়ির দুই তিন গ্রামের পাহাড়িদেরকে জবাই করা হয়েছিল।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত সময়ে খাগড়াছড়ির পানছড়ির লোগাং, চেঙ্গী, পানছড়ি, লতিবান, উল্টাছড়িসহ ৫টি ইউনিয়নের ২৪৫টি বাংগালী গ্রামে শান্তিবাহিনী কর্তৃক অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করা হয়। এ সময় নিরস্ত্র নিরীহ ৮৫৩ জনের অধিক বাংগালী নারী, শিশু, আবালবৃদ্ধাবনিতাকে হত্যা ও বাঙ্গালী নারীদের ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় আহত হয় ৫০০ জনের অধিক বাঙ্গালী। পুড়ে দেওয়া হয় বাঙ্গালীদের ঘর বাড়ি। ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে বর্বর শান্তিবাহিনী খাগড়াছড়ির দিঘীনালায় ও মাটিরাঙ্গায় পৃথক গণহত্যা চালিয়েছিল। এছাড়াও, ১৯৮৬ সালের ১৮ মে কুমিল্লাটিলা, শুকনাছড়ি, দেওয়ান বাজার, সিংহপাড়া, তাইন্দং গণহত্যা এবং ১৯৮৬ সালের ২ জুলাই দিঘীনালা গণহত্যা সংঘটিত করে শান্তিবাহিনী। তাছাড়াও ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালীতে ৩৫ জন নিরীহ বাঙ্গালী কাঠুরিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো শান্তিবাহিনী। এতে আরো দাবী করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক (৪৯%) বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী। কিন্তু তিনি একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী এবং সেনা বাহিনীকে একতরফাভাবে দোষারূপ করেছেন।

স্মারকলিপিতে ৭৫ জন পাহাড়ি-বাঙ্গালী লোকজন স্বাক্ষর করেন। এতে সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে পাহাড়ে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে এমপি বাসন্তী চাকমাকে সংসদ সদস্য পদ থেকে অপসারণ করার দাবী করা হয়।

পাঠকের মতামত: