ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে পাহাড়ে লক্ষাধিক মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

38196c6e9db2c89d7afcb531ea5b15d6-26ফরিদুল মোস্তফা খান  :

কক্সবাজার শহরের আলির জাহাল সাইফুল কমিউনিটি সেন্টার সন্নিকট টমটম গেরেজের পশ্চিম পাশে বিশাল একটি পাহাড় । সেটি কেটে অবৈধ টিনসেড সেমিপাকা বাড়ি নির্মান করেছেন রামু জোয়ারিয়া নালার এক ব্যাক্তি । শুধু বসত বাড়ি নয় , তিনি একজনেই সেখানে পাহাড় কেটে সরকারি জমি অবৈধ দখলে নিয়ে ঘর ভাড়া দিয়েছেন কয়েকটি । রাস্তার পাশে আম গাছের তলায় টিনসেড এই অবৈধ স্থাপনার আড়ালে প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে আর ও পাহাড় ।প্রশাসনের নাকের ডগায় শুধু এখানেয় নয় , কলাতলী সহ জেলার আনাছে কানাছে চলছে পাহাড় কেটে বসতি নির্মানের ধুম । এ অবস্থায় নিচ্ছিত মৃত্যু জেনেও কিছুতেই পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। দিনরাত সমানে চলছে পাহাড কেটে ঘরবাডি তৈরির কাজ। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু ঘরবাডি উচ্ছেদ করলেও তা পুনরায় তৈরি হচ্ছে।

পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে শহরের ১১টির বেশি সরকারি পাহাড দখল করে তৈরি করা হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনায় বসবাস করছেন এক লাখের বেশি মানুষ।

সম্প্রতি কলাতলী পাহাড ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি এই উঁচু পাহাড কেটে ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে ৩০টির বেশি অস্থায়ী টিনের ঘর। সেখানে বসবাস করছেন ভাসমান লোকজন।

একটি ঘরের বাসিন্দা ছৈয়দ আলম (৪৪) জানান, এক মাস আগে পাহাডের এক খন্ড জমিতে তিনি টিনের ঘরটি তৈরি করেন। পাশের আরও দুটি টিনের ঘর শহরের একজন প্রভাবশালী তৈরি করে পাহারাদার হিসেবে দুটি পরিবারকে থাকতে দিয়েছেন।

এই পাহাডের পাশে আদর্শগ্রাম, টিঅ্যান্ডটি টাওয়ার, লাইট হাউস, সার্কিট হাউস, পাহাডতলী, লারপাডা, এবিসি ঘোনাসহ শহরের আরও অন্তত ১০টি পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীরা মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে পাহাড় কাটা চালাচ্ছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ, কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম করেও পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। ১১টি পাহাড় থেকে ১৫ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না গেলে ভবিষ্যতে শহরে কোনো পাহাড়ের চিহ্ন থাকবে না। তা ছাড়া বর্ষায় পাহাড় ধসে মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ২৫টির বেশি পাহাড় ধসের ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

আলির জাহাল , লারপাড়া ও পাহাড়তলীতে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা ৫০ থেকে ৭০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় ও পাদদেশে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। পাহাড় কাটার মাটি ঠেলা গাড়িতে করে ফেলা হচ্ছে শহরের বাঁকখালী নদীতে। এতে সামান্য বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।

পৌরসভার মেয়র বলেন, পর্যটন শহরের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় কয়েক লাখ ভাসমান মানুষ ঠাঁই নিয়েছে কক্সবাজার শহরে। তাঁরা পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করছে।

ফলে পাহাড় কাটার মাটি নেমে শহরের নালা ভরাট হচ্ছে। বাঁকখালী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েছে নৌচলাচলের পথ। বর্ষায় পাহাড় ধসের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। তারপরও পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কঠোর হতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, গত মে মাসেও একাধিক অভিযান চালিয়ে পাঁচটির বেশি ট্রাকসহ পাহাড় কাটার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় পাহাড় কাটা চলে।

জনবল–সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। শহরের একাধিক পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরির দায়ে গত কয়েক মাসে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় শতাধিক দখলদারের বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলা করা হয়েছে। অন্য দখলদারদেরও তালিকা তৈরি হচ্ছে। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ও প্রশানের চিহ্নিত কিছু

দুর্নীতি বাজের বিরুদ্বে পাহাড় কাটায় জড়িতদেও নানা ভাবে আশ্রয় পশ্রয়ের অভিযোগ ও উঠেছে ।

 

পাঠকের মতামত: