ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

kim-jongউত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরো কঠোর করছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে তাদের ওপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করা হবে, যাতে দেশটি তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করে। বুধবার হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সিনেটের ১০০ সদস্যের সামনে বিশেষ ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের এ কৌশল ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে মোট সদস্য সংখ্যা ১০০। তাদের সবাই এতে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ব্রিফিং করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাত্তিস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন, ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স পরিচালক ড্যান কোটস। ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, ওয়াশিংটন সমঝোতার জন্য ওয়াশিংটন উন্মুক্ত থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজেকে ও তার মিত্রদের রক্ষায় প্রস্তুত থাকবে। ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায় ৫ মিনিটের মতো অবস্থান করেন। এর আগে প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ক মার্কিন শীর্ষ কমান্ডার এডমিরাল হ্যারি হ্যারিস দক্ষিণ কোরিয়ায় আধুনিক মানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের পক্ষে কথা বলেন। বুধবারের ব্রিফিংয়ে যৌথ বিবৃতি দেন জিম মাত্তিস, রেক্স টিলারসব, ড্যান কোটস। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র চায় স্থিতিশীলতা এবং কোরিয়া উপদ্বীপ অঞ্চলে পারমাণবিকীকরণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে বন্ধ করতে। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমরা সমঝোতার জন্য সব সময়ই উন্মুক্ত। উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী মনোভাব সাম্প্রতিক সময়ে চরম আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, যেকোন সময়ই তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। গত কয়েকদিনে যেমন যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তেমনি হুঙ্কার দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। কোরিয়া উপদ্বীপ অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে যুদ্ধজাহাজ। যোগ দিয়েছে ১৫৪টি ক্ষেপণাস্ত্র সহ ডুবোজাহাজ বা সাবমেরিন ইউএসএস মিশিগান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন ব্রিফিংয়ে যা বলেছে তাতে সম্ভবত যুদ্ধটা এখন আর হচ্ছে না। কারণ, তারা সমঝোতার পথ উন্মুক্ত রাখার কথা বলেছে। স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়ে কথা বলেছে। তার চেয়ে বড় কথা উত্তর কোরিয়াকে ঘায়েল করতে ট্রাম্প প্রশাসন অবরোধ কড়া করার কথা বলেছে। তবে হোয়াইট হাউজে ব্রিফিংয়ের পর ডেমোক্রেটরা বলেছেন, সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে সেখানে। ডেমোক্রেট দলের সিনেটর ক্রিস কুনস বলেছেন, ওই ব্রিফিং ছিল গুরুগম্ভীর। তাতে সামরিক সম্ভাবনার পরিকল্পনা ও চিন্তাভাবনা নিয়ে কথা বলা হয়েছে। ওদিকে উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ষষ্ঠ পারমাণবিক বোমার পরক্ষা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউজের কৌশল কি সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা চান কংগ্রেস সদস্যরা। প্রশাসন বার বারই বলছে, সামরিক অভিযানের পথ খোলা আছে। অন্যদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার মিশন বলেছে, সা¤্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে লড়াইয়ে অবশ্যই বিজয়ী হবে উত্তর কোরিয়া।  এ অবস্থায় ডেমোক্রেট সিনেটর বেন কার্ডিন বলেছেন, উত্তর কোরিয়ায় সেনা অভিযানের বিষয়ে কোনো সমাধান হয় নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছেন শুধু পরিস্থিতির উত্তাপ বাড়াতে। এডমিরাল হ্যারিস বলেছেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই’কে নিরাপদ রাখবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, তবু উত্তর কোরিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হতে পারে সেখানে। একই সঙ্গে তিনি আলাস্কায় ক্ষেপণাস্ত্র সনাক্ত করে তা নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার বিষয়ে তৎপরতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। হাওয়াইয়ে রাডার ও তার সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলেও নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলেছেন এডমিরাল হ্যারিস। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সামরিক মহড়ায় যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর উদ্দেশ্য হলো উত্তর কোরিয়াকে নিরুৎসাহ করা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা প্রস্তুত হয়ে থাকতে পারে যুদ্ধের জন্য। কোরিয়া উপদ্বীপ বিষয়ক চীনা বিশেষ প্রতিনিধি উ ডাউই বুধবার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও উত্তর কোরিয়ার আরো পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয় নিয়ে বুধবার কথা বলেছেন জাপানি প্রতিনিধি কেনজি কানাসুগির সঙ্গে। ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির সাংবাদিক বারবারা প্লেট উশার বলছেন, উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র প্রযুক্তি দেখে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন মার্কিনিরা। তারা বিশ্বাস করেন, এসব অস্ত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত করতে সক্ষম হবে। এসব অস্ত্র হবে পারমাণবিক। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের স্বত্বঃপ্রণোদিত সামরিক পদক্ষেপ বড় একটি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পাঠকের মতামত: