ঢাকা,শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

কক্সবাজারের লবন শিল্পে অশনি সংকেত

IFসেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার ) প্রতিনিধি ::

আমদানীর ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে কক্সবাজারের লবন শিল্প। দেশের একমাত্র লবন উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজারে আর মাত্র তিনমাস পরে (আগামী নভেম্বরে) লবন উৎপাদনে মাঠে নামবেন লবন চাষীরা। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় মাঠপর্যায়ে ও গুদামে গত মৌসুমে উৎপাদিত প্রায় দুই লাখ টন লবন মজুদ রয়েছে। এতদসত্ত্বেও দেড় লাখ টন অপরিশোধিত লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। বাড়তি লবনের চাহিদা সৃষ্টি হলে এর পর আরো আমদানীর অনুমতি দেয়া হবে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সুপারিশ পাঠিয়েছে। আগামী সপ্তাহে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, শিগগির শিল্পের জন্য ৭৫ হাজার টন ও ভোজ্যলবণ ৭৫ হাজার টন আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। এতদিন স্থানীয় শিল্প সুরক্ষার জন্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বাজারে দাম নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। এখনও পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে। এর পরে আরও বাড়তি লবণের চাহিদা সৃষ্টি হলে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ভোজ্যলবণ আমদানি নিষিদ্ধ রয়েছে। উৎপাদন ঘাটতি হলে ‘কেইস টু কেইস’ ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া হয়। তাছাড়া সারা বছর প্রয়োজন অনুযায়ী শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল হিসেবে লবণ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। এবার ১৬ লাখ টন চাহিদা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে দেড় লাখ টন ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য এ পরিমাণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার লবণের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকায় দেশের একমাত্র লবন উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজারের প্রান্তিক চাষীরা কিছুটা লাভের মুখ দেখেছেন। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় গত উৎপাদন মৌসুমে প্রচুর পরিমান লবন উৎপাদন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে মজুদ রয়েছে বিপুল পরিমান লবন। এ ছাড়া আর মাত্র তিনমাস পর লবন উৎপাদনে মাঠে নামবেন চাষীরা।

বাংলাদেশ লবন চাষী সমিতির সদর উপজেলা শাখার সভাপতি হান্নান মিয়া বলেন, এমতাবস্হায় আমদানী হলে কক্সবাজারের লবন শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে। কক্সবাজার লবন শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আবছার উদ্দীন আহমদ জানান, জেলার উপকূলীয় এলাকায় গত মৌসুমে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, সরবরাহ পর্যায়ে এবং বাজারেও আড়াই লাখ টন লবন মজুদ রয়েছ। আগামী উৎপাদন মৌসুমের আগ পর্যন্ত মজুদ এসব লবন দিয়ে চাহিদা মেটানো যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

লবন চাষীরা জানান, ঢাকা-খুলনা-চাঁদপুর-নারায়নগঞ্জকেন্দ্রীক মিল মালিকদের অসাধু সংগঠন প্রতিবছর লবন আমদানী করার চেষ্টায় থাকে। উল্লেখ্য, নারায়নগঞ্জের কুখ্যাত পরিতোষ সাহার নেতৃত্বাধীন এ সিন্ডিকেট এর আগেও লবন আমদানীর জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল কক্সবাজার সফরে এসে জেলা প্রশাসক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও চাষীদের সাথে মতবিনিময় করেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনক্ষে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান এবং ককৃসবাজারের মিল মালিকরা দেশীয় লবন শিল্প রক্ষায় আমদানীর বিরোধীতা করেন। এতে লবন আমদানীর চক্রান্ত ভেস্তে যায়। কিন্তু এখন আবারো আমদানী করার জন্য আগের সেই সিন্ডিকেট মাঠে নেমেছে। সদর উপজেলার গোমাতলীর লবন চাষী সাত্তার বলেন, লবনের আশানুরূপ দাম থাকায় আসন্ন মৌসুমে চাষ করার জন্য উচ্চমূল্যে লবন মাঠ লাগিয়ত নিয়েছেন চাষীরা। এমতাবস্হায় আমদানীজনিত কারনে দরপতন হলে প্রান্তিক চাষীরা ক্ষতিতে পড়বেন।

পাঠকের মতামত: