ঢাকা,সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

চকরিয়ার আইয়ুব আলী আর নেই

কক্সবাজারে নৌকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, ১২ জেলে দগ্ধ: বার্ণ হাসপাতালে ১জনের মৃত্যু

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

# ১২ জেলের ১০ জনেরই শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে, ১জনের মৃত্যু #

কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর ঘাটে নোঙর করা যে ট্রলারে বিস্ফোরণ ঘটেছে, ওই ট্রলারে ছিলেন মোট ১৮ জন জেলে। বিস্ফোরণের সময় তাদের মধ্যে কয়েকজন ঘুমে ছিলেন। কয়েকজন ছিলেন চা বানাতে ব্যস্ত। এমন সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে দগ্ধ হলেন ১২ জন। তাদের মধ্যে ১০ জনেরই শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার মধ্যে গুরুতর আহত চকরিয়ার আইয়ুব আলী (৫৫) গতকাল জুমাবার ঢাকায় বার্ন হাসপাতালে মারা গেছে। আজ শনিবার আছরের নামাজের পর চকরিয়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে
সিকদার পাড়া জামে মসজিদে তার জানাযা শেষে দাফন করা হবে পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে এফবি লাকি নামের ট্রলারটিতে বিস্ফোরণ ঘটে।
এতে দগ্ধ জেলেরা হলেন আইয়ুব, দীল মোহাম্মদ, রফিক, মনির, শফিকুল, আরমান, রহিম, রহিমুল্লাহ, শাহিন, ওসমান, আলী আকবর ও দুলাল মাঝি। তাদেরকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সকাল ১০টায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, ১০ জনেরই শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুজনের শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দগ্ধ সবাই শহরের পশ্চিম নতুন বাহারছড়া এলাকার মো. সেলিমের মালিকানাধীন দুলাল মাঝির মাছ ধরার ট্রলারের জেলে। প্রাথমিকভাবে ১টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে বিস্ফোরণের পর ট্রলারটি ভেঙ্গে অর্ধেকটা পানির নিচে আর অর্ধেকটা উপরের দিকে রয়েছে। তবে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো কোন দোকান থেকে কিনেছে এসবের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডারের বা অন্য কোন ত্রুটি রয়েছে কিনা এগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সিরাজ মাঝি বলেন, সকাল ৮টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ হয় বাঁকখালী নদীতে নোঙর করা একটি মাছ ধরার ট্রলারে। বিকট শব্দের পর জেলেরা পানিতে পড়ে যায়। এরপর ৩টি নৌকায় করে ১২ জন জেলেকে উদ্ধার করে ঘাটে আনা হয়। এরপর ট্রলার মালিক সেলিম তাদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ট্রলারের সাবমাঝি মুহাম্মদ কামাল বলেন, ‘সাগরে ৯ দিন থাকার পর মাছ নিয়ে ট্রলারটি বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের ৬ নম্বর ঘাট এলাকায় নোঙর করা হয়। পরে যার যার মতো চলে যায়। শুক্রবার সকালে ট্রলারে কয়েকজন মাঝি-মাল্লা ঘুমাচ্ছিলেন। আমি আর দুজন ট্রলারের সামনের অংশে কাজ করছিলাম। দুয়েকজন জেলে গ্যাসের চুলায় চা বানাচ্ছিলেন। তখন হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।’তিনি জানান, ট্রলারে মোট ১৮ জন ছিলাম। তাদের মধ্যে ১২ জন দগ্ধ হয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৩৬ নম্বর বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারী ওয়ার্ডের সহকারী রেজিষ্ট্রার রাশেদ উল করিম জানান, কক্সবাজারে মাছ ধরার ট্রলারে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত ১০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই জনের শরীর ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে, তিনজন ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। বাকিরা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। তবে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। ডাক্তাররা বলছেন, ১০ জনের অবস্থাই আশংকাজনক।

পাঠকের মতামত: