ঢাকা,শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্তের বিরুদ্ধে একের পর এক শৃঙ্খলা ও এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকায় কর্মশালায় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, বিধি ভেঙে এনজিওর নার্সদের ডরমেটরি বরাদ্দ, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অবেদনবিদের (অ্যানেসথেটিস্ট) ব্যস্ত থাকা, এখতিয়ার বহির্ভূত বদলি, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনশনের কর্মীদের হয়রানি, প্রশিক্ষণের বরাদ্দ নয়ছয়, স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানী আটকে রাখা ও জনবল নিয়োগে স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে তিনটি অভিযোগ তদন্ত করে জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৮৩জন মাঠকর্মী স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৬জুন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন মেডিকেল অফিসার অংশ গ্রহণ করতে বলা হয়। মেডিকেল অফিসার না পাঠিয়ে ডা. শোভন দত্ত নিজেই কর্মশালায় অংশ নেন। কর্মশালায় পরিচালনাকারী ও প্রশিক্ষকদের সঙ্গে অশালীনমুলক আচরণ করে কর্মশালা ত্যাগ করে।

একই তারিখে ও সময় বিএমআরসি ভবনে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দিনব্যাপী কর্মশালা অংশ নেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৮জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও লাইন ডাইরেক্টর (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেন।

চিঠিতে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা বহির্ভূতভাবে একই সময়ে দুইটি ভিন্ন ভেন্যুতে কর্মশালায় অংশ নিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে, মেডিকেল অফিসার প্রেরণ না করে নিজেরা অংশগ্রহণ, প্রশিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমুলক আচরণ করে প্রশিক্ষণের বিঘ্ন ঘটিয়েছে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে ১৯জুন ডা. শোভন দত্তকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহ্রিয়ার কবীর। ৩ কার্য দিবসের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করেছে, সরকারি কাজে অশালীন ও অবজ্ঞামুলক আচরণ সরকারি কর্মচারীদের (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধির ২০০৮সালের শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চার মাস পার হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

লিখিত অভিযোগ থেকে আরও জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০এপ্রিল নিয়ম না মেনে এনজিওর নিয়োগ পাওয়া দুজন নার্সকে সরকারি নার্সিং ডরমেটরি বরাদ্দ দেন ডা. শোভন দত্ত। তাঁর বিরুদ্ধে কোবিড-১৯ ভ্যাকসিনেশনের সরকারি বরাদ্দ প্রদানে স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মচারীদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। ৩০জুন ডা. শোভন দত্ত স্বাক্ষরিত এ আদশে ১৫জন স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মচারীর অনুকূলে ৮লাখ ৮২হাজার বরাদ্দ পাস হয়। তা হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে রয়েছে। চার মাস পরও তাঁদের সম্মানী প্রদান করা হয়নি।

মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার (এমএইচভি) হিসেবে চকরিয়া উপজেলা কাজ করেন ৩১৫জন স্বেচ্ছাসেবক। প্রতিজন স্বেচ্ছাসেবক মাসিক ৩হাজার ৬শ টাকা সম্মানী পান। গত মে ও জুন মাসের সম্মানীর ২২লাখ ৬৮হাজার টাকা উপজেলা হিসাবরক্ষক কার্যালয় থেকে উত্তোলন করা হলেও এখনো এমএইচভির স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানী দেওয়া হয়নি।

এছাড়া এনজিওর অধীনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন পদে ৯জন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোপনে পছন্দের লোক নিয়োগ দেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত বলেন, ‘এমএইচভি স্বেচ্ছাসেবকরা মে ও জুন মাসের সম্মানী এখনো পায়নি তা ঠিক। কোবিড-১৯ ভ্যাকসিনেশনের নিয়োজিত কর্মচারি ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রোগ্রাম এখনো চলমান রয়েছে। কর্মশালায় আমি কিছু করিনি। আমার পাশে বসা এক সহকর্মী প্রশিক্ষণ পরিচালনাকারীর সঙ্গে বাড়াবাড়ি হয়েছিল। এক সঙ্গে এ রকম কয়েকটি কর্মশালা হতেই পারে। সম্মানীও দেয়। এতে দোষের কিছু দেখছি না।’

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান (০১৭১৫২৮২৬৩৭) এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে তাঁর অফিসে দেখার করার তাগাদা দিয়ে লাইন কেটে দেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) মো. সাখাওয়াত উল্লাহ (০১৭১১৪৩৯৮৬৮) বলেন, ‘একই তারিখ ও সময়ে দুইটি ভেন্যুতে কর্মশালায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এনজিওর অধীনে কর্মরত নার্সদের সরকারি ডরমেটরি বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাঠকের মতামত: