ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া-লামায় চলছে ৪০ অবৈধ ইটভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
চকরিয়া সীমানাঘেষা লামা উপজেলার ফাইতংয়ে ৪০টি অবৈধ ইটভাটায় চলছে ইট প্রস্তুত কার্যক্রম। ইতিমধ্যে সবকয়টি ভাটায় পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ ও জ্বালানি হিসাবে কাঠও মজুদ করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে ফাইতংয়ে ৩০টির বেশি ভাটার চুল্লিতে ইতিমধ্যে আগুন দেয়া হয়েছে। অনুমতি ছাড়া ইটভাটা শুরু করলেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের কোন তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।

এদিকে, গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সব অবৈধ ইটভাটা ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার ৭ দিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা জারি করেছে হাইকোর্ট। কিন্তু, বর্ষার পরপরই পাহাড়ে সবুজ প্রকৃতি সাজতে শুরু হলেও সেই পাহাড়ের বুকে আঘাত শুরু করেছে ইটভাটার মালিকরা। উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ৩০টি, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ৬টি, গজালিয়া ইউনিয়নে ২টি, সরই ইউনিয়নে ১টি ও লামা পৌরসভায় ১টি ইটভাটায় মাটির জন্য সাবাড় করা হচ্ছে অসংখ্য সবুজ পাহাড় ও ফসলি জমি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন উন্নয়নের জন্য ইটভাটা প্রয়োজন। তবে ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভাটার কারণে পাহাড়ের প্রকৃতির সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফাইতং ইউনিয়নের হরিণখাইয়া গ্রামে বিবিএম ব্রিকসের তিন পাশে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুটি বিশাল পাহাড় সাবাড় করেছে এই ব্রিক ফিল্ডটি। জ্বালানি হিসাবে মজুদ করা হয়েছে বনের লাকড়ি। এ বিষয়ে কথা হয় এই ভাটার মালিক ও ব্রিকফিল্ড মালিক সমিতির সভাপতি মোক্তার মেম্বারের সাথে। তিনি বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করেই কাজ শুরু করেছি। অনুমতি আছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভাটা করতে এখন অনুমতি লাগে না।

উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে ৩০টি ইটভাটা। সবগুলো ভাটা স্কুল, জনবসতি গ্রাম, খালের পাড় এবং সড়কের পাশে তৈরি করা হয়েছে। চলমান বর্ষার শুরু থেকে এই ইটভাটাগুলো স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মৌসুমের জন্য মাটি মজুদ করেছে। এখনো চলছে পাহাড় কাটার কার্যক্রম। ইতিমধ্যে ফাইতং এলাকায় যন্ত্রের গর্জন ও ধূলাবালুতে সবুজ প্রকৃতি হারিয়ে যাবে এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শুধু ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে ৩০টি অবৈধ ইটভাটা থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক।

ফাইতং ইউনিয়নের মে অংপাড়ার বাসিন্দা চিংহ্লামং মারমা ও মংবাচিং মারমা বলেছেন, শুধু এ বছর নয়, কয়েক বছর ধরে কাটতে কাটতে পাড়ার পাশের পাহাড়টি এখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে। তিনি আরো জানান, যেভাবে দিন-রাত অবিরাম পাহাড় কাটা হচ্ছে, তাতে এ বছর আর এ পাহাড়ের অস্তিত্ব থাকবে না। পাহাড়টি পাড়াবাসীকে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করত। ইটভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী। পাহাড় কাটতে বাধা দিলে তারা মামলা-হামলার হুমকি দেন।

ফাইতংয়ে সংরক্ষিত বনের ভেতরে থাকা অবৈধ ইটভাটাগুলো হলো কয়লাভিত্তিক এসবিএম (ফখরুল ইসলাম সওদাগরের মালিকানাধীন), এইচবিএম (পেকুয়ার হুমায়ুনের), ডিবিএম (ফাইতংয়ের জাহাঙ্গীর ও নাজেম উদ্দিনের), ইউএমবি (চকরিয়ার মিজানুর রহমান, জলিল, মোকতার, হেলাল, জসীম গংয়ের), ইউবিএম (চকরিয়ার ছালেহ আহমদ ও কবির আহমদের), এসবিডাব্লিউ (ছিকলঘাটার গিয়াসের), ফাইভবিএম (পেকুয়ার জুনাইদের), এনআরবি (চকরিয়ার আজিমের), বিএমডাব্লিউ (চকরিয়ার বেদারুল ইসলামের), এমএইচবি (চুনতির জুনাইদ ও দুবাই রফিকের), এবিসি-৩ (চুনতির বেলাল কম্পানির) ও এমবিআই (চুনতির এনামুল হকের মালিকানাধীন)।

আর জ্বালানি হিসেবে বনের কাঠের ওপর নির্ভরশীল অবৈধ ভাটাগুলো হলো এবিসি ও এবিসি-২ (চুনতির বেলাল কম্পানির), বিবিসি (ফাইতংয়ের রিংকুর), চকরিয়ার দুবাই রফিকের এবিএম, পেকুয়ার মহিউদ্দিনের এমবিএম, চুনতির নাজেম উদ্দিনের এসএমবি, আমির হামজার টিএইচবি, মোস্তাক মেম্বার গংয়ের কেবিসি, পেকুয়ার মোজাম্মেলের ইবিএম, চকরিয়ার মোকতার মেম্বারের বিবিএম, চকরিয়ার ছালেহ আহমদ ও কবির আহমদের এসকেবি, চুনতির মোকতারের থ্রিবিএম, চকরিয়ার ফরিদুল ইসলাম ওরফে টাই ফরিদের এফএসি, চকরিয়ার খাইরুল মাস্টারের ফোরবিএম, পেকুয়ার লিটন, শওকত, এখলাছ, মোকতারের ওয়াইএসবি ও চকরিয়ার মুজিব, আজিম, আমিনুল করিমের ইউবিএন।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক বেলাল জানিয়েছেন, গত ২৩ অক্টোবর বন বিভাগের পক্ষ থেকে উপজেলার সবকয়টি ব্রিকফিল্ডকে ইট প্রস্তুতকালীন সময়ে ইট পোড়ানো কাজে কোন প্রকার জ্বালানি কাঠ না পোড়ানোর জন্য ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ এর বিধি ৬ মোতাবেক নোটিশ দেয়া হয়েছে। কেউ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শীঘ্রই আমরা অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান করব। কোন অবৈধ ইটভাটা থাকবে না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সাথে নিয়ে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

পাঠকের মতামত: