ঢাকা,শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

শ্বশুর-শাশুড়িকে প্রবেশন সাজা

তথ্য গোপন রেখে দুই ধর্মের নারীকে বিয়ে চকরিয়ায়, স্বামীর তিন বছরের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  ধর্মান্তরিত হয়ে প্রথমে মুসলিম নারীকে বিয়ে, সেই তথ্য গোপন রেখে ফের এক হিন্দু নারীকে বিয়ে করায় কক্সবাজারের চকরিয়া আদালতে কাজল কান্তি দে নামে এক প্রতারককে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং নগদ ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব।

একইসঙ্গে সহায়তা প্রদানের দায়ে প্রতারক কাজলের বাবা স্বপন কান্তি দে ও মা রিতা রাণীকে (বাদীর শ্বশুর-শাশুড়ি) তিন বছরের প্রবেশন সাজা প্রদান করেন আদালত। গতকাল বুধবার এই মামলার চূড়ান্ত রায় দেন আদালত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাজল কান্তি দে নামের এক গার্মেন্ট শ্রমিক ২০১০ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে সাইফুল ইসলাম সুমন নাম ধারণ করেন। এর পর শরীয়তপুরের জাজিরা থানার রূপবাবুর হাটের হাজি কালাই মোড়লের কান্দি গ্রামের হানিফ মোড়লের মেয়ে আসমা আক্তারের সঙ্গে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২০১১ সালে।

সেই সংসারে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু সেই তথ্য গোপন রেখে বাবা ও মায়ের ইন্ধনে পূর্বের নামে সনাতনী রীতিমতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন চকরিয়া পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের মৃত যোগেশ চন্দ্র দাশের কন্যা রিমিকা দাশকে। সেই সংসারেও বর্তমানে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী রিমিকার সাথে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। ওইসময়ে মোবাইলের কথোপকথনে রিমিকা জানতে পারেন তাঁর স্বামী কাজল ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম তরুণীকে প্রথম বিবাহ করেন। এর পর রিমিকা স্বামী কাজলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, তথ্য গোপন, ধর্মান্তরিত, বহু বিবাহসহ বিভিন্ন অপরাধের ধারায় ২০২১ সালের ১২ মে উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা রুজু করেন। মামলায় এজাহারনামী আসামি করা হয় স্বামী কাজল কান্তি দে, তার বাবা স্বপন কান্তি দে ও মা রিতা দে-কে।

মামলায় কাজলের প্রথম স্ত্রী আসমা আক্তারও আদালতে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দেন।
আদালত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা, সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে গতকাল মামলার এক নম্বর আসামি কাজল কান্তি দে-কে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরো এক মাস কারাদণ্ডের আদেশ দেন। একইসাথে ছেলে কাজলের এমন কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদানের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বাবা স্বপন কান্তি দে প্রকাশ সোনাইয়া ও মা রিতা রাণী দে-কে ছয় মাস করে সাজা প্রদান করেন। এ সময় দুইজনকেই নগদ ১০ হাজার করে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়। তবে কাজলের বাবা ও মায়ের বয়স বিবেচনায় নিয়ে তিন বছরের প্রবেশন সাজা দিয়ে জামিন প্রদান করেন আদালত।

এই রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ গতরাতে বলেন, ‘আদালতের রায়ে আমরা বাদীপক্ষ খুশি। এই রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন কর্ম করতে আর কেউ সাহস করবে না।’ তিনি জানান, প্রবেশনকালীন সাজায় আসামিরা এলাকায় সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন কর্মাদি সম্পন্ন করবেন। আর তাদের এই কর্মকাণ্ড নজরদারির জন্য স্থানীয় মন্দির ও সমাজ কমিটিকেও নির্দেশনা দেবেন আদালত।

 

পাঠকের মতামত: