ঢাকা,শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

লবণ লুটের প্রতিকার চাওয়ায় হাতুড়ি দিয়ে হামলা, থেঁতলে গেল চাষীর শরীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নের এরশাদ আলী ওয়াকফ এস্টেটের জমিতে উৎপাদিত লবণ লুটের প্রতিকার চাওয়ায় কৃষকদের ওপর দুই দফায় হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এতে ছয়জন কৃষক আহত হয়েছেন।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে ও শুক্রবার দুপুরে রাজাখালী ইউনিয়নের বামুলা পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহতেরা হলেন, একই এলাকার লবণ চাষী ফরিদ উদ্দিন (৫০), আব্দুল কুদ্দুস (৪০), তার ছেলে মো. নোমান (১৫), লবণ চাষী মো. আজম (২৮), সিকদার (২২) ও বদিউল আলম (৪০)। আহতদের মধ্যে মো. আজমের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পুরো শরীর থেঁতলে দেয়া হয়েছে। মাথার খুলি ভেঙে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে প্রতিবন্ধী কৃষক ফরিদ উদ্দিনের মাঠ থেকে আড়াই শত মণ লবণ লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এর প্রতিবাদ জানালে শুক্রবার দুপুরে লবন চাষী ফরিদ উদ্দিন, আব্দুল কুদ্দুস ও তার ছেলে মো. নোমানকে মারধর করা হয়। প্রতিবন্ধী কৃষক ফরিদ একই এলাকার মৃত গোলাম শরীফের ছেলে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন কৃষক ফরিদ। এর জের ধরে সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ফরিদের প্রতিবেশী কৃষক মো. আজম, সিকদার ও বদিউল আলমকে ঘরে গিয়ে মারধর করে।

ভুক্তভোগী ফরিদ উদ্দিন বলেন, এরশাদ আলী ওয়াকফ এস্টেটের ইজারাদার নুরুল আবছারের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে আমি লবণ চাষ করছি। দুইমাস চাষ করে বিক্রির জন্য লবণ জমিয়ে রেখেছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতে সন্ত্রাসীরা এসে আমার জমানো সব লবণ লুট করে নিয়ে যায়। এর প্রতিকার চাইলে সন্ত্রাসীরা আমাকে মারধর করেছে। আমাকে এলাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দিয়েছে।

ভুক্তভোগী বদিউল আলম বলেন, তপ্ত রোদে কৃষকদের ঘাম ঝরানো শ্রমে উৎপাদিত লবণ কেড়ে নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। রাজাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল ইসলাম টিপুর নেতৃত্বে জেলফেরত চিহ্নিত সন্ত্রাসী জয়নাল, আনছার, বাদশা, বদি আলম, আব্বাস, নুরুল আলম, শফি আলম, এহসান, আমির হোছাইন, খোকন, আমিন ও হাছান এস্টেটের দুই শতাধিক লবণ চাষীকে জিম্মি করে রেখেছে। এর প্রতিবাদ করলে আমাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্রধারী। তাই আমরা এখন প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

জমির ইজারাদার পেকুয়া উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, এরশাদ আলী ওয়াকফ স্টেটের মোতওয়াল্লি ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে আমি ও নবী হোসেন ৫৪ একর লবণ মাঠ ইজারা নিয়েছি। এসব লবণ মাঠে চাষা দিয়েছি। কিন্তু চাষীরা মাঠে উৎপাদিত লবণ বিক্রি করতে পারছে না। যুবলীগ নেতা আনসারুল ইসলাম টিপুর নেতৃত্বাধীন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী চাষীদের উৎপাদিত লবণ বিক্রি করতে বাধা দিচ্ছে । রাতে লবণ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলে কৃষকদের মারধর করা হচ্ছে।

কৃষকদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা আনসারুল ইসলাম টিপু বলেন, এস্টেটের মোতওয়াল্লীর কাছ থেকে আমি কিছু ইজারা নিয়েছি। এসব জমিতে আমার চাষারা শান্তিপূর্ণভাবে লবণ চাষ করছে। আমার সাথে কোন লবণ চাষীর কোনরকমের সংঘাত হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রটাচ্ছে।

এ ব্যাপারে এরশাদ আলী ওয়াকফ এস্টেটের মোতওয়াল্লি ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, ইজারার জমি চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। একজন অন্যজনের জমিতে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, লবণ চাষীদের মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) তফিকুল আলম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি রাজাখালী এরশাদ আলী ওয়াকফ এস্টেটের কৃষকদের সাথে কথা বলেছি। তাদের ওপর কোন অন্যায় হতে দেয়া হবে না।

পাঠকের মতামত: