ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

বাণিজ্যিক রাজধানীতে নেই বাণিজ্যমেলার স্থায়ী জায়গা!

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে বছরে অন্তত দুই আন্তর্জাতিক মেলা ও কয়েকেটি স্থানীয় মেলা চললেও এই মেলার জন্য স্থায়ী কোন বন্দোবস্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। বছরের পর বছর চট্টগ্রামে মেলার একটি স্থায়ী জায়গার দাবি তোলা হলেও এটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কেউই এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে অধরাই থেকে গেল চট্টগ্রামে বাণিজ্য মেলার স্থায়ী জায়গার। ভৌগোলিক অবস্থান ও অবকাঠামোর বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রাম অবহেলাতেই থেকে গেল।

অন্যদিকে দেশের পণ্য প্রদর্শনী ও বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে রাজধানীর পূর্বাচলে গত বছরের (২০২১ সাল) ২১ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। মোট ৩৩ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই জায়গায় এবার বছরের প্রথমদিন শুরু হয়েছে ২৬ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। তবে চট্টগ্রামে এবারও মেলা করতে হলে নির্ভর করতে হবে সেই খেলার মাঠের ওপরেই।

এদিকে বছরের পর বছর মৌসুম ভেদে খেলার মাঠকে রূপান্তর করতে হয় মেলার মাঠে। সেখানে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে মেলার আয়োজন করতে হয় আয়োজক কর্তৃপক্ষকে। আবার মেলা শেষে সেই অবকাঠামোকে ভেঙে মেলার মাঠকে আগের মতো খেলার মাঠের পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যেতে হয়। যার কারণে ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার। এর বাইরে মেলার স্থায়ী জায়গা না হওয়ায় নগরীর পলোগ্রাউন্ড, আউটার স্টেডিয়াম মাঠে মেলা চলাকালীন সময়ে বাধে তীব্র যানজট।

মেলার স্থায়ী জায়গা প্রসঙ্গে চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি চট্টগ্রামে মেলার একটি স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করা হোক। এর জন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনো এর কোন সুরহা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ২২টি আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করেছি। সবগুলোই হয়েছে খেলার মাঠে। চট্টগ্রামে মেলার কোন স্থায়ী জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই সেখানে মেলা করতে হয়েছে। সে জায়গায় মেলা করতে বিপুল অর্থের অপচয় হয়। কারণ সেথানে প্যাভেলিয়ন, স্টল ও পাকা রাস্তা তৈরি করে মেলা শেষে সেগুলো ভেঙে আবার খেলার মাঠে রূপান্তর করতে হয়।

চট্টগ্রামে মেলার স্থায়ী জায়গার উপর গুরুত্বারোপ করে মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে বন্দর, দুটি ইপিজেড ও একটি শিল্পাঞ্চল আছে। এর বাইরে হাজার হাজার কলকারখানা আছে। তাই চট্টগ্রামে বাণিজ্য মেলার যে গুরুত্ব আছে সেটি অন্য কোন জেলাতে নেই। তারপরও আমরা অবহেলিত। ঢাকায় মেলার স্থায়ী জায়গা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের জন্য কারো মাথাব্যাথা নেই।

মেলার স্থায়ী জায়গা প্রসঙ্গে চিটাগাং উইমেন চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ বাণিজ্য করতে চট্টগ্রামেই আসে। তাই চট্টগ্রামে বাণিজ্য মেলার বিকল্প নেই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো চট্টগ্রামে মেলার জন্য এতো বছরেও একটি স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করা গেল না। আমরা উইমেন চেম্বার চট্টগ্রামে মোট ১৩টি মেলার আয়োজন করেছি। সবই খেলার মাঠে। কিন্তু মেলার একটি জায়গা থাকলে সব সংগঠন এখানে বছরব্যাপী মেলার আয়োজন করতে পারে। এছাড়া স্থায়ী জায়গা হলে বিদেশিরাও চট্টগ্রামে মেলার আয়োজন করতে পারে।

এদিকে চট্টগ্রাম চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার ও উইমেন চেম্বার ছাড়াও চট্টগ্রামে বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানও মেলার আয়োজন করে। এসব মেলা করতে রেলওয়ের পলোগ্রাউন্ড মাঠ, আউটার স্টেডিয়াম, হালিশহরে আবাহনী মাঠ, আমবাগানে রেলওয়ের পাহাড়তলী স্কুল সংলগ্ন মাঠ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কমিউনিটি হল ভাড়া করেও মেলার আয়োজন করা হয়।

এদিকে বিভিন্ন সময়ে দাবির প্রেক্ষিতে গতকাল কালুরঘাটের মোহরা এলাকায় জেলা প্রশাসনের সমন্বিত দপ্তর এলাকা পরিদর্শন করতে এসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেছেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ১৪ একর জায়গায় মেলার জন্য একটি স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সচিব কে এম আলী আজম এর এমন বক্তব্যে আশ^স্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী মহল। কিন্তু এটি দ্রুত বস্তাবায়ন দেখতে চান তাঁরা।

পাঠকের মতামত: