ঢাকা,সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

মানবেতর দিন কাটছে ১০ শিক্ষক-কর্মচারী

চকরিয়ায় ডুলাহাজারা রিংভংয়ে মাদ্রাসা সুপারের লাগামহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা রিংভং রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারের সীমাহীন অনিয়ম, দূর্নীতির ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন ১০ শিক্ষক-কর্মচারী। দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে প্রাতিষ্ঠানিক স্বল্প বেতনে চাকুরী করা শিক্ষকদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে বেশ কয়েকজন নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে তাদের নামের তালিকা দিয়ে এমপিওভূক্তির আবেদন করেছেন মাদ্রাসা সুপার মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকী।

বিষয়টি বর্তমান কর্মরত শিক্ষকদের নজরে আসার পর এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোমবার (২২ নভেম্বর) উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী। পরে শিক্ষক কর্মচারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন মাদ্রাসার শিক্ষকা সাফিয়া বেগম। এ সময় মাদ্রাসার আরও ৮ শিক্ষক কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষিকা সাফিয়া বেগম বলেন, চকরিয়া উপজেলা ডুলাহাজারা ইউনিয়নে গত ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রিংভং রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা। মাদ্রাসা শুরুর প্রথম দিকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চললেও পরে তা ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। ২০০৮ সালে দাখিল শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ দানের অনুমতি পায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত দাখিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষিকা সাফিয়া বেগম আরও বলেন, দাখিল শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা সময় আমিসহ অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীরা এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি। তারপর থেকে দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে প্রাতিষ্ঠানিক স্বল্প বেতনে চাকুরী নিয়মিত চাকুরী করে আসছি এমপিওভূক্ত হওয়ার আশায়। ২০১৭ সালে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সুপার মৌলানা মহিউদ্দিন সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর পরবর্তী সুপার হিসেবে হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসেন মৌলানা মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকী। তারপর থেকে শুরু হয় মৌলানা মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকী লাগামহীন অনিয়ম দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা। ৬মাস পরপর এডহক কমিটি গঠন, শিক্ষার্থীদের বেতন উত্তোলন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাউন্টে জমা না করে নিজের পকেট ভর্তি করা, শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন না দেয়াসহ ইত্যাদি নানা অনিয়ম দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

শিক্ষিকা আয়তুন্নাহার বলেন, ২০০৮ সালে আমি এ প্রতিষ্টানে জুনিয়র ক্বারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। এরপর ২০০৯ সাল হতে শিক্ষকতা পেশা ছাড়ি নাই। একদিন এমপিওভূক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হবো এ আশায়। কিন্তু সে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে বর্তমান মাদ্রাসা সুপার মৌলানা মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকী। শিক্ষিকা অভিযোগ করেন আমিসহ অন্যান্য শিক্ষকরা এ মাদ্রাসায় দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে প্রাতিষ্ঠানিক স্বল্প বেতনে চাকুরী করলেও আমাদেরকে বাদ দিয়ে অত্যান্ত গোপনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাহিরের বেশ কয়েকজন নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে তাদের নামের তালিকা দিয়ে এমপিওভূক্তির আবেদন করেছেন মাদ্রাসা সুপার মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকী। বিষয়টি বর্তমান কর্মরত শিক্ষকদের নজরে আসার পর সকলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসা সুপারের কাছে প্রতিকার চেয়েও কোন সুরাহা না পাওয়ায় এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানের ৯ শিক্ষক-কর্মচারী।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপার মৌলানা মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকী বলেন, আমার ব্যাপারে শিক্ষকদের আনীত অভিযোগ মুঠোও সঠিক নয়। যে সকল শিক্ষক কর্মচারী বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত আছেন তারা একজনও ওমপিওভূক্ত শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বেতন মাদ্রাসা কোষাগারে জমা না দেয়ার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সংবাদ সম্মেলনে, শিক্ষক ফয়েজুর রহমান, মিজানুর রহমান, রাসেল উদ্দিন, নুরুল আযম, কম্পিউটার অপারেটর মো. জোবাইরুল ইসলাম, অফিস সহকারী সজীব দাশ ও নৈশ প্রহরী জামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

পাঠকের মতামত: