হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী, রামু থেকে :
সমাজের সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়া নৈরাজ্য, অবক্ষয় এবং বিশৃঙ্খলার বলি হচ্ছে অসহায় শিশুরা। শিশুদের ওপর একের পর এক ঘটে চলেছে পৈশাচিক ঘটনা। এর যেন কোনো শেষ নেই। কয়েক দিন পরপরই শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হচ্ছে গোটা জাতি। প্রতিদিন নিত্য নতুন মাত্রায় উন্মোচিত হচ্ছে সমাজের বিকৃত চেহারা। সেই সাথে বেরিয়ে পড়ছে সমাজ, রাষ্ট্র এবং মানবিকতার অধঃপতনের ভয়াবহ চিত্র। এমনি এক ভয়াবহ ঘটনায় তোলপাড় চলছে কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়ায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের মাঝিরকাটা এলাকার দীপপাড়া গ্রামে সংঘটিত উক্ত ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০১৫ সালের আগষ্ট মাসের ২৭ তারিখে। ওই দিন ১৩ বছরের জনৈক এক শিশুকে লোকজনের অনুপস্থিতিতে তার বাড়িতে বিয়ের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন এক সন্তান ও ৬ মাসের গর্ভবতী জননীর স্বামী আলী আকবার (৩০)। এর পর কলেমা পড়ে বিয়ে করেছে বলে বিশ্বাস জন্মানোর পর লোকচক্ষুর অন্তরালে দিনের পর দিন অবুঝ শিশুটির সঙ্গে যৌনসহবাস করে আলী আকবর। ফলে শিশুটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এ ঘটনা থেকে রেহায় পেতে অবৈধ গর্ভপাতের পর ৬ মাসের ভ্রুণ মাটিচাপা দিয়ে নিজেদের ঘৃণ্য অপরাধ আরও বাড়িয়েছেন আলী আকবরের পরিবার।
এদিকে বিষয়টি এলাকায় প্রকাশ হলে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। যে তোলপাড়ের শেষ হয়নি এখনো। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১)/৩০ তৎসহ পেনাল কোডের ৩১৩ ধর্ষণ করার ও ইহাতে সহায়তা করা এবং স্ত্রী লোকের সম্মতি ব্যাতিরেকে গর্ভপাত ঘটনার অপরাধে ওই এলাকার মৃত ফজল আহমদের ছেলে আলী আকবর (৩০) ও তার ভাই মোহাম্মদ হানিফকে (৩৫) আসামি করে গত প্রহেলা মার্চ ভিকটিম নিজেই রামু থানায় মামলা দায়ের করেছে। অপরদিকে মামলা তোলে না নিলে ভিকটিম ও তার মাকে উল্টো মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন গেলে ভিকটিমের অসহায় মা জানিয়েছেন, মামলার আসামি ও তাদের স্বজনেরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে তদবির চালাচ্ছে। এমনকি মামলা তোলে না নিলে উল্টো মামলায় জড়িয়ে এলাকাছাড়া করবে বলছে। এ নিয়ে বর্তমানে তারা নানা শঙ্কায় রয়েছে।
তের বছরের ভিকটিম সিবিএনকে বলেন, দীর্ঘদিন মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে আলী মামা আমাকে বিয়ে করবে বলে প্রথমে অবৈধ কাজ করতে চায়। সে সময় আমি বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে কলেমা পড়ে আমাকে বিয়ে করেছে বলে জোরপূর্বক অবৈধ কাজ করেন। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য বলেন। আমিও লোক লজ্জার ভয়ে এ কথা কাউকে বলিনি। এ ধরণের ঘটনা অব্যাহত থাকায় আমার শরিরে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। যা প্রথমে উপলব্ধি করেন আমার প্রতিবেশী ভাবি কুলসুমা। পরে গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর কক্সবাজার কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে আলী মামার সঙ্গে বিয়ে করাবে বলে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তার বড় ভাই হানিফ আমাকে বাড়ি থেকে বের করেন। এসময় প্রতিবেশী ভাবি কুলসুমাকেও সঙ্গে নেন।
কিন্তু আমাকে পর্যায়ক্রমে নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় হানিফ। এর পর এক দালালের মাধ্যমে শহরের জনৈক ডাঃ রেশমার চেম্বারে নিয়ে যায়। অতপর ডাঃ রেশমা ইনজেকশন পুশ করে আমাকে অজ্ঞান করে ফেলেন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি আমাকে আরও একটি ইনজেকশন পুশ করে। সবশেষে কয়েকটি ট্যাবলেট দেয়। যেগুলো না খেলে আমি মারা যাবো বলে। তাই দুটি ট্যাবলেট খেয়েছিলাম।
ভিকটিম আরও বলেন, ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার থেকে বাড়িতে যায়। এগারটায় তীব্র ব্যাথা ওঠে। রাত ১টায় ভ্রুণমোচন হয়। জন্ম নেওয়া ৬ মাসের মৃত ছেলে শিশুটিকে নিকটবর্তী জায়গায় তারা মাটি চাপা দেয়।
জানতে চাইলে প্রতিবেশী ভাবি কুলসুমা বেগম বলেন, সেদিন হানিফ আমাকে জোর করে কক্সবাজার নিয়ে গিয়েছিল। তবে গর্ভপাত নষ্ট করতে হানিফ ভিকটিমকে যে নিয়ে গিয়েছিল! সেটা আমার জানা ছিলনা। রেশমার চেম্বারে হানিফ ও ভিকটিম ঢুকেছিল। আমি বাইরে বসে ছিলাম।
স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য নুরুচ্ছাফা বেগম জানিয়েছেন, শিশুকে বিয়ের প্রলোবনে ধর্ষণের পর অবৈধ গর্ভপাত ও ভ্রুণ নষ্ট করার বিষয়টি সত্য। এমন ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার। কিছু কিছু সমাজনেতা ভিকটিম ও তার পরিবারকে মামলা তোলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বলে শুনেছি। বিষয়টি খুবই দুঃখ জনক।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মামলার প্রধান আসামি আলী আকবরকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে মামলার দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ হানিফ দাবি করে জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে সে মুঠোও জড়িত নয়। হানিফ বলেন, ধর্ষণের ঘটনা সত্য কিনা বা অবৈধভাবে জন্ম নেওয়া মৃত শিশুটি আমার ভাইয়ের কিনা সেটা সৃষ্টিকর্তা ভালো জানে। তবে আমি ভিকটিমকে কক্সবাজারে নিয়ে যায়নি। একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে আমাকে মামলায় জড়িয়েছে। আমি নিরঅপরাধ।
ভিকটিমের পরিবারের এক সদস্য অভিযোগে জানিয়েছেন, ঘটনাটি আপোষ-মিমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে দেওয়ার অজু হাত তোলে নানা তালবাহানার আশ্রয় নিয়ে ছেলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী সিবিএন ও আমাদের রামুকে বলেন, বিষয়টি যেহেতু মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেহেতু আমার হস্তক্ষেপের কোন ধরণের সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর সিবিএন ও আমাদের রামুকে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০০০ এর (১)/৩০ তৎসহ পেনাল কোডের ৩১৩ ধরায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তবার পরিচালনা করছে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, এ ধরণের পৈশাচিক ঘটনা মেনে নেওয়া যায়না। অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রকাশ:
২০১৬-০৩-১৯ ১৪:৩৪:২৫
আপডেট:২০১৬-০৩-১৯ ১৪:৩৪:২৫
- কক্সবাজারে চকরিয়া থানার ওসিসহ ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
- চকরিয়ায় সড়ক বিভাগের জায়গা থেকে ৯০ অবৈধ দোকান উচ্ছেদ
- চকরিয়ায় নয়াবাদি খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার দাবি কৃষকদের
- চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনে বন্যাহাতির আক্রমণে শ্রমিক নিহত, আহত ১
- চকরিয়ায় টিআইবি সনাকের মানববন্ধন
- কক্সবাজার প্রেস ক্লাবকে সংষ্কারের দাবিতে সাংবাদিকদের সভা অনুষ্ঠিত
- অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর মৃত্যু, বিভিন্ন মহলের শোক
- জেলায় ডা:শফিকুর রহমানের আগমন ও সম্মেলন সফল করতে চকরিয়া জামায়াতের প্রস্তুতি সভা
- সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ
- নাইক্ষ্যংছড়ি’র ফুলতলী পয়েন্টে ১১বিজিবির হতে ৩১টি বার্মিজ গরু জব্দ!
- চকরিয়ায় অভিযোগের ৪ মাসেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত হয়নি
- চকরিয়ায় সড়ক বিভাগের জায়গা থেকে ৯০ অবৈধ দোকান উচ্ছেদ
- জেলায় ডা:শফিকুর রহমানের আগমন ও সম্মেলন সফল করতে চকরিয়া জামায়াতের প্রস্তুতি সভা
- নাইক্ষ্যংছড়ি’র ফুলতলী পয়েন্টে ১১বিজিবির হতে ৩১টি বার্মিজ গরু জব্দ!
- সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ
- অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর মৃত্যু, বিভিন্ন মহলের শোক
- কক্সবাজার প্রেস ক্লাবকে সংষ্কারের দাবিতে সাংবাদিকদের সভা অনুষ্ঠিত
- চকরিয়ায় টিআইবি সনাকের মানববন্ধন
- চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনে বন্যাহাতির আক্রমণে শ্রমিক নিহত, আহত ১
- চকরিয়ায় নয়াবাদি খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার দাবি কৃষকদের
- কক্সবাজারে চকরিয়া থানার ওসিসহ ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
পাঠকের মতামত: