স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার-টেকনাফ শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের ইট ও পাহাড়ী বালি দ্বারা ঢালাইয়ের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ব্যবহারের আগেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে পড়ছে ইটগুলো।
জানা যায়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ৫৮০ কোটি টাকা অর্থায়নে টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কটির দ্রুত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য ৫০ কিলোমিটার সড়কের কাজটি দুটি প্যাকেজে ভাগ করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। প্রথম প্যাকেজে ১শ’ ২২ কোটি টাকা চুক্তি সাপেক্ষে কক্সবাজার লিংক রোড থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ দেয়া হয়েছে টিসিসিএল এন্ড মেসার্স জামিল ইকবাল লি: নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কক্সবাজার সওজ বিভাগের এসও তদারকির দায়িত্বে থাকলেও তাকে মোটা অঙ্কের টাকা ধরিয়ে দেয়ায় ওই এলাকায়ও আসেন না তিনি।
২য় প্যাকেজে ১শ’ ৫৪ কোটি টাকা চুক্তি সাপেক্ষে উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং উনচিপ্রাং পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ দেয়া হয়েছে তাহের ব্রাদার্স লি: ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লি: এবং সালেহ আহমদ বাবুল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। স্থানীয়রা বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারগণ সিডিউলের বাইরে ইচ্ছেমতো কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। নিয়ম না থাকলেও অবৈধভাবে উন্নয়ন কাজে রোহিঙ্গাদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে। একটি দায়িত্বশীল সূত্র প্রকল্পটির কাজের মান নিয়ে জেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় প্রশ্নও তুলেছে। তাছাড়া কাজের মান নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
২য় প্যাকেজের উখিয়ার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং উনচিপ্রাং পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজে অনিয়মের পাহাড়সম অভিযোগ রয়েছে। তারা কারও কোন কথার প্রতি তোয়াক্কা করছেনা। বিভিন্ন নেতা-নেত্রীর দোহাই দিয়ে কাজে পুকুরচুরি করছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তদারকি না থাকায় রাতের বেলায় কাজ চালানো এবং দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারী টাকা আত্মসাত করে চলেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা জানায়, এমন ইট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা হাতে ধরে চাপ দিলেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। সড়কের প্রশস্তকরণ কাজে সড়কের উভয় পাশে খোয়া এবং বালি দিয়ে ভরাট করার নিয়ম থাকলেও তারা পাহাড়ী মাটি দিয়ে কাজ চালিয়ে বিল উত্তোলন করছে ঠিকই। হোয়াইক্যং বাজার ও উনছিপ্রাং এলাকায় পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা সড়কের পাশে পরিত্যক্ত মাটি দিয়ে উভয় পাশের গর্ত ভরাট করা হয়েছে। মাত্র দুই ফুট কাদা মাঠি তুলে আবার পাহাড়ী মাটি ও পাহাড়ী বালু দ্বারা ভরাট করে উপরে ঢালায় দেয়া হয়। সিসি ঢালায়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের পুরাতন রড। রডের পরিমাণও ছিল প্রাক্কলনের নির্দেশনা মতে অনেক কম। অভিযোগ রয়েছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন আঁতাত করে রাতের আঁধারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে দায়সারাভাবে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। হোয়াইক্যং বাজার কমিটির নেতা মোর্শেদ, শফিকুর রহমান চৌধুরী, ছৈয়দ আকবর জানান, কাজের মান খুবই খারাপ। কাজের মান নিয়ে টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা ও ঠিকাদার আব্দুলল্লাহ আল জাহেদ লিটন জানান, এই প্যাকেজের ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজ দেখে হতবাক হয়েছি। এই ঠিকাদারের সিডিউলহীন কাজ চালিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
হোয়াইক্যং ইউপি মেম্বার আব্দুল বাছেত বাচ্ছু জানান, ঠিকাদার নিজস্ব দাপট দেখিয়ে যেন তেন কাজ করছেন। তারা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে কাজে। গত রমজান মাসে সিসি ঢালায়কালে রড দিয়েছে নিয়মের চেয়ে কম। কাজের গুণগত মান নিয়ে আরও বহু দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বাজার এলাকায় সিসি ঢালায়ের উভয় পাশে ড্রেন নির্মাণ করছে নিম্নমানের ইট ও বালির পরিবর্তে পাহাড়ী মাটি দিয়ে ড্রেনের গ্রান্ড ফ্লোর ঢালায় দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা মুঠোফোনে জানান, পাহাড়ী মাটি দ্বারা ভরাট করার কোন নিয়ম নেই। বালির পরিবর্তে মাঠি দিয়ে ড্রেন ঢালায়ের ব্যাপারে আমি খোঁজ নেব। এ ধরনের কাজের যথাযথ প্রমাণ পেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে তা ভেঙ্গে আবার নতুন করে কাজ করে দেব বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
পাঠকের মতামত: