নঈম নিজাম :::
সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। সকাল ৯টা ৫ মিনিট। ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল দরবার হলে প্রবেশ করেন। তার কাছে ঢাকা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিবুল হক প্যারেড হস্তান্তর করেন। এরপর ডিজি ও ডিডিজি মঞ্চে নির্দিষ্ট আসনে বসেন। বিডিআরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম সিদ্দিকুর রহমান পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, বিডিআরের নৃশংসতা মেনে নিতে পারেননি পেশ ইমাম। বিদ্রোহের কিছুদিন পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে তিনি হৃদরোগে মারা যান। কোরআন তিলাওয়াতের পর দরবারের সবাইকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে বক্তৃতা করেন মেজর জেনারেল শাকিল। তিনি আগের দিনের প্যারেডের প্রশংসা করেন। এরপর তিনি ‘অপারেশন ডাল-ভাত’ কার্যক্রম প্রসঙ্গ তোলেন। জেনারেল শাকিল জানতে চান, ডাল-ভাতের দৈনিক ভাতা সৈনিকরা ঠিকভাবে পেয়েছে কিনা। কিন্তু সৈনিকদের জবাব জোরালো ছিল না। দরবারে সাধারণত সৈনিকদের যে ধরনের তাত্ক্ষণিক স্বতঃস্ফূর্ত ইতিবাচক প্রত্যুত্তর থাকে, এ ক্ষেত্রে তা ছিল না। ডিজি ডাল-ভাতের কিছু হিসাব, সৈনিকদের ডিএ প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে আপনাদের শৃঙ্খলা ভালো ছিল না। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।’ ডিজির এ বক্তব্য সৈনিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাদের চোখ-মুখের ভাষা ছিল কিছুটা ভিন্ন। এভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বদলে গেল সব কিছু। ঘড়ির কাঁটায় আনুমানিক তখন সকাল সাড়ে ৯টা। ডিজি তখনো বক্তৃতা করছিলেন। হঠাৎ ১৩ ব্যাটালিয়নের সিপাহি মাঈন আকস্মিকভাবে অস্ত্রহাতে মঞ্চে উঠেই ডিজির দিকে অস্ত্র তাক করে। সঙ্গে সঙ্গে দরবার হলে হট্টগোল শুরু হয়। ওই সময় ডিজি শাকিল পূর্ণ ব্যক্তিত্ব নিয়ে মাথা ঘুরিয়ে তাকান। ডিজির চোখের দিকে তাকিয়ে সৈনিক মাঈন মঞ্চে অজ্ঞানের মতো হয়ে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ডিডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারী ও কর্নেল আনিস ওই সৈনিককে ধরে ফেলেন। প্রায় একই সময় ৪৪ ব্যাটালিয়নের আরেক সিপাহি কাজল মঞ্চে উঠে আসে। কিন্তু মাঈনকে পড়ে যেতে দেখে কাজল হঠাৎ কোথাও না থেমে মঞ্চের দক্ষিণ পাশে চলে যায়। কিন্তু বেরোনোর পথ না থাকায় জানালার কাচ ভেঙে ফেলে কাজল। লাফ দিয়ে বাইরে চলে যায়। তখনই শোনা যায় একটি গুলির শব্দ। মূলত এটাই ছিল প্রথম গুলির শব্দ। কী থেকে কী হয়ে গেল। দরবার হল মুহূর্তে ফাঁকা। প্রায় তিন হাজার সৈনিক এবং জেসিও মুহূর্তের মধ্যে যে যেভাবে পেরেছে জানালা বা দরজা দিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে যায়। অনেক কর্মকর্তাও ওই সময় বেরিয়ে যান। ডিজি, ডিডিজি, সব সেক্টর কমান্ডার ও পরিচালক, তিনজন মহিলা ডাক্তার, সাত-আট জন লে. কর্নেল, ১৫-১৬ জন মেজর, দুজন ক্যাপ্টেন, কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর, আরপি জেসিও, এনএসএ, ডিএডি ফসিউদ্দীন, বিডিআর মসজিদের দুই ইমাম, তিন-চার সিপাহিসহ ৪৫-৫০ জন দরবার হলে থেকে যান। অফিসাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মত্ত হন। অন্যদিকে সিপাহিরা বাইরে গিয়ে নিজেদের সংগঠিত করে এবং নানারকম গুজব ছড়িয়ে দেয়। তারা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি গ্রুপ কাজ শুরু করে। ঘটনা সামনের দিকে যেতে থাকে। ১৫-২০ মিনিট পর দরবার হলের পূর্ব-দক্ষিণ কোণ থেকে গুলির আওয়াজ আসতে থাকে। একই সঙ্গে ‘ধর, ধর’ শব্দ শোনা যায়। ওই সময় দরবার হলের ভিতরের সামনের লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে বের হয়ে যায়। এদিকে সিপাহি মাঈনকে কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের জুতার ফিতা দিয়ে বেঁধে ফেলেন। মাঈন মঞ্চের ওপর অজ্ঞানের মতো পড়ে থাকে। ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল কর্মকর্তাদের বলেন, সবাইকে যেন আবার দরবার হলের ভিতর ডেকে আনা হয়, দরবার আবার শুরু হবে। ডিজি চেয়েছিলেন সব কিছু স্বাভাবিক করতে। তার লক্ষ্য ছিল ক্ষুব্ধ সৈনিকদের শান্ত করে পরিবেশ স্বাভাবিক করতে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত, যা সেখানে অবস্থানকারী অফিসাররা তখনো পুরোপুরি আঁচ করতে পারেননি। ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে দরবার হলের বাইরে গুলির শব্দ বাড়তে থাকে। ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল একজন অফিসারকে বললেন, ‘কে ফায়ার ওপেন করেছে? তাদের ফায়ার করতে নিষেধ কর। সিচুয়েশন ট্যাকল হয়েছে।’ এর মধ্যে দেখা গেল লাল সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বাঁধা বিডিআরের একদল সৈনিক দরবার হল ঘিরে কিছুক্ষণ পর গুলি করছে। তখন দরবার হলের জানালা খুলে কর্নেল গুলজার, কর্নেল এমদাদ, লে. কর্নেল এরশাদ ও লে. কর্নেল কামরুজ্জামান চিৎকার করে বলেন, ‘তোমরা ফায়ার করো না, তোমরা ফিরে যাও।’ এ সময় ভিতরে অবস্থানকারী অফিসাররা দেখেন, ফাঁকা গুলিবর্ষণকারী সৈনিকদের আরেক দল গুলি সরবরাহ করছে। সদর রাইফেল ব্যাটালিয়নের একটি পিকআপ রাস্তা দিয়ে দরবার হলের পাশের মাঠে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে কাচ ভেঙে গুলি দরবার হলের ভিতর ঢুকছিল। কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার্থে কেউ দেয়াল ঘেঁষে, কেউ পিলারের আড়ালে আশ্রয় নেন। দরবার হলের দিকে গুলি হচ্ছে দেখে মেজর মো. মাকসুদুল হক ক্রলিং করে দরবার হলের পুব দিকে গাড়ি থামার বারান্দার নিচে পৌঁছে যান। সেখানে ৮-১০ সৈনিক ও ধর্মীয় শিক্ষক গুলি থেকে বাঁচতে শুয়ে ছিলেন। আর আনুমানিক ৫০ গজ দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে, অর্থাৎ ৫ নম্বর ফটকের দিক থেকে মাথায় লাল কাপড় বাঁধা একজন সিপাহি গাড়ি থামার বারান্দার দিকে গুলি করতে থাকে। ধর্মীয় শিক্ষকের সঙ্গে শুয়ে থাকা সৈনিকদের একজন তখন ‘আমরা সিপাহি’ বলে চিৎকার করে। জবাবে গুলিবর্ষণকারী চিৎকার করে বলে, ‘সিপাহিরা, সব মাথার ওপর হাত তুলে দৌড়ে এলাকা ত্যাগ কর।’ তখন এসব সিপাহির সঙ্গে মেজর মাকসুদও মাথার ওপর হাত তুলে দৌড় দেন এবং সামনের আবাসিক কোয়ার্টারের পেছনের দেয়াল টপকে বাইরে চলে যান। মেজর মাকসুদই প্রথম অফিসার, যিনি এভাবে পালাতে পেরেছেন। বলা যায়, ভাগ্যই তাকে সহায়তা করেছে। সিপাহিদের সঙ্গে তিনি পালাতে পেরেছেন। ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল তখনো সমাধানের পথ খুঁজছেন। চেষ্টা করছেন কীভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়। এক পর্যায়ে তিনি কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর (এসএম) নুরুল ইসলামকে বলেন, ‘সৈনিকদের এ রকম ক্ষোভ আছে আপনি তো কোনো দিন একবারও বলেননি!’ তখন কেউ একজন ডিজিকে বললেন, ‘স্যার, গাড়ি লাগানো আছে, আপনি চলে যান।’ ডিজি বলেন, ‘আমি কোথায় যাব? কেন যাব?’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঢাকা সেক্টর কমান্ডার এবং ঢাকার অধিনায়কদের উদ্দেশে বললেন, ‘ইউ অল রাশ টু দি ইউনিট অ্যান্ড গেট ব্যাক ইউর পিপল এবং সবার সঙ্গে কথা বল অ্যান্ড ট্রাই টু মটিভেট দেম।’ এরপর ঢাকা সেক্টর কমান্ডার ও অধিনায়করা দরবার হল থেকে নিজ নিজ ইউনিটের উদ্দেশে রওনা হন। ডিজি মাইকে ঢাকা সেক্টর কমান্ডার ও ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক এবং সুবেদার মেজরদের নিজ নিজ ব্যাটালিয়নে কোতের (অস্ত্রাগার) নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এবং সৈনিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের শান্ত করার নির্দেশ দেন। এ সময় ঢাকার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিব, ৩৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এনায়েত ও ১৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল বদরুল নিজ নিজ ইউনিটের দিকে রওনা দেন। এর মধ্যে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা চারদিক থেকে দরবার হলের দিকে গুলি করতে থাকে। তখন দরবার হল থেকে কিছু কর্মকর্তা ও বিডিআর সদস্য বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে বের হতে থাকেন। তদন্ত আদালতকে কামরুজ্জামান জানান, এর আগে ডিজি কথা বলেছেন সেনাপ্রধান ও র্যাবের ডিজির সঙ্গে। সবাই জানিয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী ও র্যাব চলে আসবে। লে. কর্নেল ইয়াসমীনও লক্ষ্য করেন, তখন ডিজি বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল ফোনে সাহায্যের জন্য সেনাবাহিনী পাঠাতে অনুরোধ করছিলেন। ওই সময় লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামানের মোবাইল সেটে ফোন করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়া (পরিচালক, মিলিটারি অপারেশন) জানতে চান, ভিতরে কী অবস্থা। উত্তরে অবস্থা খারাপ শুনে তিনি বলেন, ‘চিন্তা করো না, ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড থেকে দুটি ব্যাটালিয়ন মুভ করেছে।’ তখন পাশ থেকে ডিউটি কর্নেল আনিস ফোন নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে দরবার হলে আটকেপড়া রেজিমেন্টাল পুলিশ (আরপি) জেসিও আস্তে আস্তে ওয়াকিটকি শুনছিলেন। লে. কর্নেল কামরুজ্জামান ওয়াকিটকির সাউন্ড বাড়িয়ে দিতে বললে তাতে শোনা যায়, অন্য পাশ থেকে বলা হচ্ছে, ‘অফিসার মেসে অফিসারদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিডিআরের সব গেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা। তারা কোত (অস্ত্রাগার) ভেঙে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে যাচ্ছে।’ এর মধ্যে দেখা যায় এডিসি ক্যাপ্টেন মাজহার কেঁদে কেঁদে কারও সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। তাকে একজন অফিসার জিজ্ঞাসা করাতে জবাবে বললেন, ‘রাইফেল ভবনে বিদ্রোহী বিডিআররা ঢুকেছে। হাউস গার্ড অনেক আগে চলে গেছে। ম্যাডাম বলছেন, দরজা ধাক্কা দিচ্ছে।’ ডিজি শাকিল সব শুনলেন। এক পর্যায়ে তিনি মাজহারকে বললেন, ‘ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে থাকতে বল।’ সকাল ১০টার দিকে দক্ষিণ দিকের টয়লেটে লুকিয়ে থাকা মেজর মাকসুম স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারেন যে বিদ্রোহীরা তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মেজর মাকসুমের পাশে বসা মেজর মনিরও তা জানতে পারেন। দরবার হলে অবস্থানকারী কর্মকর্তারা শুনতে পান গুলির শব্দ অনেক কাছে এগিয়ে আসছে। তখন মঞ্চের সব আলো নিভিয়ে ফেলতে বলেন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল। কর্নেল আনিস একটি লম্বা কাঠ দিয়ে সব বাল্ব ভেঙে ফেলেন। ডিজি মাইকে সবাইকে শান্ত হতে বলছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘তোমরা গুলি থামাও। তোমাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে।’ এ সময় একজন সৈনিক দৌড়ে পর্দা সরিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। ওর হাতে বা কাঁধে গুলি লেগেছিল। ভিতরে থাকা একজন ধর্মীয় শিক্ষক তার পাগড়ির কাপড় দিয়ে ওই সৈনিকের ক্ষতস্থান বেঁধে দেন। এ সময় সিপাহি সেলিম, কাজল, হাবিব, আতাউর, ওবায়েদসহ আরও কয়েকজন বিডিআর সদস্য গুলি করতে করতে দরবার হলে প্রবেশ করে। তারা হুকুমের স্বরে পর্দার পেছনে লুকিয়ে থাকা কর্মকর্তাদের বের হয়ে আসতে বলে। কর্মকর্তারা তখন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজরকে (এসএম) বলেন, ‘আপনি ওদের থামতে বলেন।’ সুবেদার মেজর পর্দার বাইরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। সঙ্গে মেজর জায়েদীও যান। দুজনকেই সৈনিকরা ধরে ফেলে। তখন কয়েকটি গুলি করা হয়। তারা মাটিতে শুয়ে যান। দুজন সৈনিক মেজর জায়েদীকে তুলে বলে, ‘আমাদের সঙ্গে চল।’ দরবার হলের বাইরে নিয়ে তারা জায়েদীকে রড দিয়ে মারধর করে। তখনো কেন্দ্রীয় এসএম তার সঙ্গে ছিলেন, তার হাত থেকে রক্ত ঝরছিল। এরপর দুই সৈনিক মেজর জায়েদীকে ২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিকের বাসায় নিয়ে যায়। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা ২০ মিনিট। সিপাহি সেলিম মাইকে কর্মকর্তাদের বেরিয়ে আসতে বলে। সেলিম বলে, ‘কাম, ওয়ান বাই ওয়ান।’ এ সময় কর্মকর্তাদের রাজি করাতে কিছু সময় লাগে। ডিজিসহ কয়েকজন কর্মকর্তা মঞ্চের পর্দার ভিতরে উত্তর দিকে ছিলেন। ডিজিকে কোনায় একটি চেয়ারে বসানো হলো। অন্যরা সবাই ডিজির গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন। ডিজি শাকিল বললেন, ‘তোমরা মৃত্যুকে কেন ভয় পাচ্ছ? মরতে তো একদিন হবেই।’ কর্মকর্তারা বললেন, ‘স্যার, আপনার সেফটির দরকার আছে।’ ডিজি তখন বললেন, ‘র্যাব বা সেনাবাহিনী কেউ এখনো এলো না!’ ওই সময় কর্নেল মশিউর ডান দিকের উইং থেকে দৌড়ে বাঁ-দিকের উইংয়ে চলে এলেন। বাঁ-উইংয়ের সিঁড়িতে ডিডিজি ব্রিগেডিয়ার বারী ছিলেন। কর্নেল মশিউর দুটি সাউন্ড বক্স ওখানকার পেছনের দরজার সামনে একটার ওপর একটা রাখেন। তখন ব্রিগেডিয়ার বারী বলেন, সাউন্ড বক্স গুলি ঠেকাতে পারবে না। সকাল সাড়ে ১০টা। বিদ্রোহী সৈনিকরা চিৎকার করে কর্মকর্তাদের মঞ্চের ভিতর থেকে বের হতে বলে। তখন মঞ্চের নিচে ১৫-১৬ জন বিদ্রোহী কাপড়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে ছিল। ১০টা ৩১ মিনিটের পরপরই মঞ্চের পর্দার আড়ালে দক্ষিণ পাশে থাকা তিনজন নারী কর্মকর্তাসহ ২০-২৫ জন কর্মকর্তা হাত উঁচু করে বের হয়ে আসেন। ১০টা ৩১ মিনিটে মেজর রুখসানা তার স্বামীকে মোবাইল ফোনে বিদ্রোহীদের দরবার হলে ঢুকে পড়ার কথা জানান। তিনি পরে স্বামীর মোবাইল সেট থেকে সময় নিশ্চিত করেন। উত্তর পাশে থাকা ডিজিসহ অন্য কর্মকর্তারা তখনো বের হননি। বিদ্রোহীরা প্রথমেই কর্মকর্তাদের সবার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। সবাইকে তারা মাটিতে শুয়ে পড়তে এবং র্যাঙ্ক খুলে ফেলতে বলে। কর্মকর্তারা দরবার হলের মেঝেতে শুয়ে পড়েন। তখন তাদের ওপর দরবার হলের ভিতরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো মুখে কাপড় বাঁধা একজন বিডিআর সৈনিক তিন-চার রাউন্ড গুলি চালায়। লে. কর্নেল কায়সার ও অন্য দুজন কর্মকর্তা এতে গুলিবিদ্ধ হন। গুলি খেয়ে লে. কর্নেল কায়সার উবুড় অবস্থা থেকে চিৎ হয়ে যান। লে. কর্নেল কায়সার গুলি খাওয়ার পর দরবার হলের ভিতর মহিলা কর্মকর্তাদের দিকে এক জওয়ান দৌড়ে এসে বলে, ‘ম্যাডামদের মারিসনে, ওনারা ডাক্তার।’ তখন অন্য একজন সৈনিক তাদের নিয়ে দরবার হলের পশ্চিম ফটকের দিকে যায়। তাদের পেছন পেছন অন্য কর্মকর্তারাও আসতে থাকেন। দরবার হলের মঞ্চের পর্দার আড়ালে উত্তর দিকের উইংয়ে ডিজি, ডিডিজি, কর্নেল আনিস, কর্নেল মশিউর, কর্নেল এমদাদ, কর্নেল জাহিদ, লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান, লে. কর্নেল এরশাদ, লে. কর্নেল আজম, মেজর খালিদ, মেজর সালেহ, এডিসি ক্যাপ্টেন তানভীর, ডিএডি ফসিউদ্দীন, সঙ্গে এনএসও এবং আরপি জেসিও ছিলেন। লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান তদন্ত আদালতকে বলেন, দক্ষিণ দিকের উইংয়ে আশ্রয় নেওয়া কর্মকর্তারা হাত উপরে তুলে পর্দার বাইরে যাচ্ছেন দেখে ডিউটি কর্নেল আনিস ডিজিকে বললেন, ‘স্যার, ওই দিকে অবস্থান নেওয়া সব অফিসার সারেন্ডার করেছেন। আমাদের জন্য কী অর্ডার?’ ডিজি কী বললেন তা কামরুজ্জামান ভালোভাবে শুনতে পাননি। বিদ্রোহীরা হ্যান্ডমাইকে বলছিল, ‘ভিতরে কেউ থাকলে বের হয়ে আসেন।’ একই সঙ্গে তারা মঞ্চের দিকে গুলি ছোড়ে। হঠাৎ মুখে কাপড় বাঁধা একজন সৈনিক অস্ত্রহাতে পর্দা সরিয়ে মঞ্চে ঢুকে চিৎকার করে বলে, ‘ভিতরে কেউ আছেন? সবাই বের হন।’ একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে দুটি গুলি করে সে। গুলি কারও গায়ে লাগেনি। এরপর ডিজিসহ একে একে অন্য কর্মকর্তারা পর্দা সরিয়ে বাইরে আসেন। সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় বিদ্রোহীরা। মঞ্চের নিচে নেমেই কর্মকর্তারা ডিজি শাকিলকে মধ্যে রেখে গোল হয়ে দাঁড়ান। একজন সৈনিক চিৎকার করে বলে, ‘শুয়োরের বাচ্চারা, সারা জীবন আমাদের সিঙ্গেল লাইন করে হাঁটিয়েছিস, নিজেরা গোল করে দাঁড়িয়েছিস!’ আবার হুঙ্কার দিয়ে সে বলে, ‘সবাই সিঙ্গেল লাইন করে দাঁড়া।’ লাইনে ডিজি সবার সামনে দাঁড়ালেন। তারপর কিছুটা জ্যেষ্ঠতা মানার মতো সবাই লাইনে দাঁড়ালেন। নির্মম, নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের দিকে এগিয়ে গেলেন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তারা। বিশ্ববাসী দেখল বর্বরতার এক অধ্যায়। বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রকাশ:
২০১৬-০২-২৫ ০৭:৫৭:৩১
আপডেট:২০১৬-০২-২৫ ০৭:৫৭:৩১
- চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীতে সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপির সেক্রেটারীসহ ২জনকে কুপিয়ে জখম
- কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের জটিলতা নিরসনে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে স্মারকলিপি
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদী ফেনী থেকে গ্রেফতার
- মেদাকচ্ছপিয়ায় পিপলস ফোরাম সাধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
- সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী ও দায়িত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- পেকুয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-আহতের পরিবারকে সরকারি অনুদান
- নব্য দোসরদের কারণে সাংবাদিকরা কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সদস্য পদ পাচ্ছে না
- ঈদগাঁওতে চেয়ারম্যান জনি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
- পাউবোর অবহেলায় মাতামুহুরির সেচ সংকট, বিপাকে লক্ষাধিক কৃষক
- পেকুয়ায় অটোচালক খুনের ঘটনায় ইউপি সদস্যসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- চকরিয়ার মালুমঘাটে ট্রেনের ধাক্কায় এক বৃদ্ধ নিহত
- প্রশাসনকে সকল দলের প্রতি বৈষম্যহীন আচরণ করতে হবে
- পাউবোর অবহেলায় মাতামুহুরির সেচ সংকট, বিপাকে লক্ষাধিক কৃষক
- নব্য দোসরদের কারণে সাংবাদিকরা কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সদস্য পদ পাচ্ছে না
- ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে বন্যপ্রাণী শিকার করতে গিয়ে বন্দুক রেখে পালালো ২ জন
- পেকুয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-আহতের পরিবারকে সরকারি অনুদান
- চকরিয়ায় মাষ্টার মাইন্ড অটো ব্রিকস ফ্যাক্টরিতে ২ নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
- চকরিয়ায় আলোচিত ডাবল মার্ডার মামলার দুই পলাতক আসামি গ্রেফতার
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদী ফেনী থেকে গ্রেফতার
- ঈদগাঁওতে চেয়ারম্যান জনি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
- পেকুয়ায় অটোচালক খুনের ঘটনায় ইউপি সদস্যসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের জটিলতা নিরসনে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে স্মারকলিপি
পাঠকের মতামত: