মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::
সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বান্দরবানের লামায় গড়ে উঠেছে ৩৪টি অবৈধ ইটভাটা। এইসব ইটভাটায় ইট প্রস্তুত কাজে প্রচুর শিশু শ্রমিক কাজ করতে দেখা গেছে। পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ, জ্বালানি হিসেবে বনজ সম্পদ উজাড় করা হচ্ছে নির্বিচারে। লামার ফাইতং ও ফাঁসিয়াখালী এলাকার লোকজন জানান, ইটভাটার মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে উপজেলা ৩ শতাধিক ছোট-বড় পাহাড় বিলীন হয়ে গেছে এবং বিশাল পরিমাণের জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে বৃক্ষশূণ্য হয়ে পড়ছে পাহাড়ি এলাকা। বান্দরবান জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, বান্দরবান জেলায় অনুমোদন প্রাপ্ত কোন ইট ভাটা নাই।
উপজেলা প্রশাসন হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে এবছর লামা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় নতুন পুরাতন মিলে গড়ে উঠেছে ৩৪টি ইটভাটা। এরমধ্যে ফাইতং ইউনিয়নে ২৪টি, ফাঁসিয়াখালী ৬টি, গজালিয়া ২টি, সরই ১টি ও লামা পৌরসভায় ১টি। কোনটির নেই সরকারি অনুমোদন। নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে এক ইটভাটা মালিক জানান, লামা উপজেলার ১৩টি ইটভাটা পরিচালনার বিষয়ে মালিকপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে। সেই রিটের অনুবলে তারা ইটভাটা চালাচ্ছে। রিটের রায় না হতে ইটভাটা চালানো যায় কিনা প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
ফাইতং এলাকার ইটভাটা গুলো হচ্ছে, এসমিএম, এফবিএম, এবিএম, এমবিএম, এবিসি, এবিসি (২), টিএইচবি, ইউবিএম, এসকেবি, এসএবি, এফএসি, এসবিডব্লিউ, পিবিসি, এমবিএম, ইবিএম, বিবিসি, এইচবিএম, এএমবি, থ্রিবিএম, ফাইতং (মানিকপুর অংশে) ফোরবিএম, মো, এনাম ব্রিকস, গিয়াস উদ্দিন ব্রিকস, মো, নাছির ব্রিকস, আব্দুর রহমান/জসিম ব্রিকস, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে এমএসবি, এএইচবি, কেবিসি, এমএইচবি, বিএনবি, পিবিএম, গজালিয়া ইউনিয়নে কেএমবি, এসবিএম, সরই ইউনিয়নে আরএনবি ও লামা পৌরসভায় এসবিএম।
লামার ফাইতং এলাকার ঘুরে দেখা যায়, ২৪টি ইটভাটার ইট-মাটি পরিবহন ও জ্বালানী লাকড়ি সংগ্রহ কাজে ব্যবহৃত ভারী ট্রাকের কারণে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙ্গে চরম বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো। পাহাড়ি গ্রাম রাইম্যাখোলা, শিবাতলী পাড়া, মংব্রাচিং কারবারী পাড়া, ফাদু বাগান পাড়া, হেডম্যান পাড়া ও বাঙ্গালি পাড়ার অধিবাসীরা জানান, ইটভাটার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে বিগত সময়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করেও প্রতিকার পায়নি। বনজ সম্পদ ব্যবহারের সহজ লভ্যতা ও দূর্বল প্রশাসনিক তদারকির কারণে ফাইতং ইউনিয়ন অবৈধ ইটভাটা স্থাপনের নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে। দিনে দিনে ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। এক নাগারে ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কারণে স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে শ্বাসকষ্ট প্রদাহ জনিত রোগ, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে লক্ষ্য করা যায় প্রত্যেকটি ইটভাটা বনের ভিতরে ও পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে। যাতে করে চরম হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ। জানা গেছে, চরম পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ফাইতং-এ ২০১৫ সালে পাহাড়ধসে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি কারো। ইটভাটাকে নিরুৎসাহিত করতে ভূমিকা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয়রা বলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের এবছর নতুন করে আরো ৩টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। সবমিলে এবার ইটভাটার সংখ্যা ৬টি। নতুন ইটভাটা করতে গিয়ে নতুন নতুন পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে এবং শেষ হচ্ছে বনাঞ্চল। প্রশাসনকে বলেও প্রতিকার মিলছেনা। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালালেও তারা চলে গেলে আবারো পুরোদমে ইটভাটা শুরু হয়। দিনের পর দিন বদলে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকা চেহারা। উঁচু উঁচু পাহাড়গুলো সমতল হচ্ছে। বৃক্ষ উজাড় হতে হতে মরুময় হয়ে গেছে পুরো এলাকা। ভরাট হয়ে গেছে ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া ও খাল। বিরানভূমিতে রূপ নিয়েছে এই জনপদ। ইটভাটার কয়েকশত গজের মধ্যেই পুলিশ ফাঁড়ি, বন বিভাগের বিট অফিসারের কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। কিন্তু বন ও পাহাড় ধ্বংসের এমন হরিলুটের মাঝখানে বসে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান মো. জালাল আহমদ জানিয়েছেন, স্থানীয় ভূমি মালিকদের কাছ থেকে জমি লিজ বা ক্রয় করে ফাইতং ইউনিয়নে ২৪টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। লামা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ শফিউর রহমান মজুমদার জানিয়েছেন, পরিবেশের এই বিরূপ প্রভাব রোধ করা না হলে স্থানীয় জনসাধারন আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হবে। লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমদ জানান, বায়ু দূষণের কারণে বিভিন্ন ফলদ বাগানের ফলন কমে যাবে। বনজ বাগান লাল হয়ে চারা/গাছ মারা যাবে এবং উল্লেখযোগ্য হারে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হবে।
লামার দায়িত্বরত পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইট ভাটা স্থাপনের জন্য কোন ছাড়পত্র প্রদান করা হয় নাই।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, আলীকদমে কোন ইট ভাটার লাইসেন্স নেই। শীঘ্রই অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
প্রকাশ:
২০১৯-০১-২৩ ১৫:৫৭:৫৫
আপডেট:২০১৯-০১-২৩ ১৫:৫৮:২৪
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহি বাস চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
- আগস্টে ৪৬৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৬
- সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে চকরিয়ায় মানববন্ধন
- চাঁদাদাবী, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চেয়ারম্যান ইউনুছসহ ১২জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
- কক্সবাজার আদালতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর যৌতুকের মামলা!
- তামাকের ব্যবহার কমাতে শক্তিশালী কর পদক্ষেপ ও আইনের বিকল্প নেই
- চকরিয়ায় পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু
- মাতামুহুরী নদীতে ১২ বসতঘর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণে জেলা প্রশাসক
- নাইক্ষংছড়িতে টানা ৩দিন বৃষ্টির পানিতে ১৪ গ্রাম প্লাবিত
- চকরিয়ায় দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্খা
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদের পুকুরে ডুবে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
- সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে চকরিয়ায় মানববন্ধন
- চকরিয়ায় দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্খা
- মাতামুহুরী নদীতে ১২ বসতঘর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণে জেলা প্রশাসক
- চকরিয়ায় পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু
- তামাকের ব্যবহার কমাতে শক্তিশালী কর পদক্ষেপ ও আইনের বিকল্প নেই
- চাঁদাদাবী, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চেয়ারম্যান ইউনুছসহ ১২জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
- নাইক্ষংছড়িতে টানা ৩দিন বৃষ্টির পানিতে ১৪ গ্রাম প্লাবিত
- কক্সবাজার আদালতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর যৌতুকের মামলা!
- চকরিয়ায় সমিতির নামে অসহায় পরিবারের দশ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
- চকরিয়ায় উপজেলা পরিষদের পুকুরে ডুবে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু
- আগস্টে ৪৬৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৬
পাঠকের মতামত: