ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

লামায় পাহাড় কেটে পানি নিস্কাশনের ঝিরি ও ফসলি জমি ভরাটের অভিযোগ

লামা প্রতিনিধি :: পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ মতে পাহাড় বা পাহাড়ি টিলাভূমি যা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট তা কর্তন বা রূপ পরিবর্তন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই আইনে জড়িতদের ২-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড ও ২-১০ বছর কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। অথচ এ আইনকে বৃদ্ধ্ঙ্গাুলি দেখিয়ে বান্দরবানের লামা পৌরসভা এলাকার বগারঝিরি নামক স্থানে আবদুল মজিদ নামের এক ব্যক্তি নির্বিঘেœ বিশাল আকারের পাহাড় কেটে পানি নিস্কাশনের ঝিরি ও ফসলি জমি ভরাট করে চলেছেন। শুধু বগারঝিরি নয়, পৌরসভার লাইনঝিরি, মধুঝিরি, বড় নুনারবিল পাড়া, সাবেক বিলছড়ি, রাজবাড়ী ও শীলেরতুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে রাতদিন পাহাড় কাটা চলছে। একটি চক্র বিভিন্ন অযুহাতে এসব পাহাড় কাটছে বলে জানান স্থানীয়রা। পাহাড় কাটার সময় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে অর্থদন্ড করলেও থামছেই না পাহাড় কাটা। অব্যাহত পাহাড় কাটার ফলে মারাতœক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার কর্মীসহ সচেতন মহল। তারা পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ বিনাশী কর্মকান্ড বন্ধের দাবী জানান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৫-২০ দিন ধরে পৌরসভা এলাকার বগারঝিরির বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল মজিদ লামা-আলীকদম সড়কের বগারঝিরি নামক স্থানের পশ্চিম পাশে সুযোগ বুঝে কখনো পাম্প মেশিন লাগিয়ে কখনো বা মানুষ দ্বারা পাহাড়ের মাটি কাটছেন। আবার কাটা মাটি পাশের ফসলি জমি ও পাহাড়ি পানি নিস্কাশনের ঝিরিতে ফেলছেন। পাহাড়ের মাটি ঝিরিতে ফেলার কারণে নাব্যতা হ্রাসের পেয়ে পানি নিস্কাশনের ঝিরির গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। সেই সঙ্গে উজাড় করা হয়েছে পাহাড় জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষরাজিও। স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলেও নেই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা। এদিকে লাইনঝিরি এলাকার জনৈক ছায়েদ আলী আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইতিমধ্যে একটি পাহাড়ের প্রায় ১৫ শতাংশ কেটে ফেলেন। বর্তমানেও তার বাড়ীর বিপরীত দিকে বুল ড্রোজার দিয়ে আরেকটি পাহাড় কেটে ফসলি জমি ভরাট করছেন। পাহাড় কাটার বিষয়ে স্থানীয়রা প্রশাসনকে জানালে ছায়েদ আলী কৌশলে ড্রোজার সরিয়ে ফেলেন, পরবর্তীতে আবারো রাতভর পাহাড় কাটা শুরু করেন। একই ভাবে পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে সমান তালে অব্যাহত আছে পাহাড় কাটা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘন করে পাহাড় ও টিলা কাটা অবশ্যই দন্ডনীয় অপরাধ হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাদীদের খোঁজ নিয়ে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে গত বুধবার উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে মধুঝিরি এলাকা থেকে পাহাড় কাটার সময় একটি বুল ড্রোজার আটক করেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে পৌরসভার বগারঝিরির আবদুল আলী চৌধুরীসহ অনেকে চকরিয়া নিউজকে জানায়, পাহাড় কেটে ঝিরি ও ফসলি জমিতে না ফেলার জন্য আবদুল মজিদকে নিষেধ করলেও কোন কথা আমলে না নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন। পরে থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আবদুল মজিদকে পাহাড় কাটতে নিষেধ করলেও থেমে নেই পাহাড় কাটা। প্রতিদিনই কোন না কোন সময় পাহাড় কেটে চলেছেন আবদুল মজিদ। তবে অভিযুক্ত আবদুল মজিদের ছেলে মো. জাকের হোসেন বলেন, পাহাড় কাটা হচ্ছেনা। কিছু পেঁপের চারা লাগানোর জন্য পাহাড় ছাটা হচ্ছে মাত্র।

মানবাধিকার কর্মী এম রুহুল আমিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে প্রতি বর্ষায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। প্রশাসনিকভাবে পাহাড় কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দেদারে পাহাড় কাটা চলছে। অবিলম্বে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে ভয়াবহ পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন তিনি।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহফুজা জেরিন চকরিয়া নিউজকে জানান, প্রশাসন কাউকে পাহাড় কাটার অনুমিত দেয়নি। কেউ পাহাড় কাটলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: