ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে আবদুল হালিম বুখারির জানাজা সম্পন্ন

সিএন  ডেস্ক :: উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, দেশের শীর্ষ স্থানীয় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আবদুল হালিম বোখারীর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানাজা শেষে মাদরাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে মাদ্রাসা জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত দশটা ১৫ মিনিটে পটিয়া মাদ্রাসা মাঠে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আলেম, শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপস্থিতিতে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের মেজ ছেলে পটিয়া মাদ্রাসার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ।

পটিয়া মাদরাসার শুরা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জানাজা শেষে মাদরাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে মাদ্রাসা জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪ মিনিটে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বুখারি। দুপুরে তার মরদেহবাহী গাড়িটি মাদরাসা প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছায়। দীর্ঘ দুই দশক ধরে তিনি এই মাদরাসার মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।

বার্ধক্যজনিত কারণে অনেক দিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বুখারি ।

মুফতি আব্দুল হালিম বুখারী জানুয়ারি ১৯৪৫ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার রাজঘাটা (তৎকালীন সাতকানিয়ার অন্তর্গত) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল গণী বুখারী। তার পরদাদা সৈয়দ আহমদ বুখারী উজবেকিস্তানের বোখারার বাসিন্দা ছিলেন। বৈরী পরিবেশে তিনি চীন-ভারত হয়ে ইয়াঙ্গুনে হিজরত করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে বসতি স্থাপন করেন।

তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাগমারী কলেজ, টাঙ্গাইলে পড়ালেখা করেন।

একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় লেখক, বক্তা, সমাজ সংস্কারক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক উপদেষ্টা, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিব।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরীয়াহ সুপারভাইজারি কমিটির সভাপতি, ইসলামি সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থার সভাপতি এবং জামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত তাওহীদের প্রধান সম্পাদক।

২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি প্রদানের নিমিত্তে আল হাইআতুল উলয়া গঠিত হলে তিনি এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন।

আল্লামা শাহ আবদুল হালিম বোখারী বিদগ্ধ হাদীস বিশারদ ও হক্কানী আলেমেদ্বীন ছিলেন। তাঁর স্বভাবজাত বিনয়ী কথাবার্তায় সবাই খুব সহজেই মুগ্ধ হতেন। ইলমি জ্ঞান-জগতের নানা শাখা-প্রশাখায় তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। তিনি একাধারে একজন ইসলামী পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় বেশ কিছু কিতাবাদিও রচনা করেছেন এই আলেম।

রবিবার অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বুখারি। সেসময় মাদ্রাসা থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে নেয়া হয়। মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্রায় ৭৭ বছর বয়সী আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বুখারি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

প্রতিথযশা ও শীর্ষস্থানীয় এই আলেমের ইন্তেকাল নিঃসন্দেহে দেশ-জাতি ও মুসলিম মিল্লাতের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ্য করে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন।

পাঠকের মতামত: