মায়ানমারের অতি-সাম্প্রদায়িক বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সামরিক বাহিনীর গণহারে হত্যা, ধর্ষণ ও লুন্ঠনের শিকার হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে এই নিরীহ মুসলিম সম্প্রদায়। কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ইতিমধ্যে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এখনও সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। নেই খাদ্য, নেই বাসস্থান, নেই শিক্ষা, নেই নিরাপত্তা- আন্তর্জাতিক মহল বরাবরের মতো নিশ্চুপ মানবতার এমন তীব্র দুর্দশার দিনে। কিন্তু কারা এই রোহিঙ্গা? জানতে হলে যেতে হবে অনেক পেছনে। কাহিনী পুরোনো, কিন্তু খুব অজানা নয়।
বর্তমান মায়ানমার (সাবেক বার্মা) এর একটি রাজ্য হলো রাখাইন। এই রাজ্যের সাবেক নাম আরাকান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত আরাকান রাজ্যটি খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোটামুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। দীর্ঘ কয়েকশ বছর ধরে উত্তর আরাকানে ‘আরাকান’ ও দক্ষিণ আরাকানে ‘চাঁদা’ নামক দুটি পৃথক স্বাধীন রাজ্য ছিলো। ত্রয়োদশ শতকে রাজ্য দুটি একত্রিত হয়ে ‘আরাকান রাষ্ট্র’ গঠিত হয়। ১৭৮৫ সালে বার্মারাজ বোধপায়া আরাকানের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে রাষ্ট্রটি দখল করে নিজ রাজ্যভুক্ত করেন। তখন থেকে আরাকান বার্মার একটি প্রদেশ হিসেবেই আছে। ১৯৭৪ সালে মায়ানমার সরকার আরাকান প্রদেশের নাম পরিবর্তন করে ‘রাখাইন স্টেট’ রাখে।
ভৌগলিকভাবে আরাকানের উত্তরে চীন ও ভারত, দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, উত্তর-পশ্চিমে বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তবর্তী নাফ নদী ও পার্বত্য জেলা চট্টগ্রাম। সুদীর্ঘ, সুউচ্চ ‘যুমা’ (Yuma) পর্বতমালা আরাকানকে বার্মা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। যাতায়াত ব্যবস্থার দিক দিয়ে আরাকানের সাথে বার্মার চেয়ে চট্টগ্রামের যোগাযোগই সহজ। ফলে দীর্ঘকাল থেকে বাংলাদেশের সাথে আরাকানের নৃতাত্ত্বিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।
আরাকানের মুসলিমদের বলা হয় রোহিঙ্গা। ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে বার্মার রাজা মেং-শো-আই আরাকান আক্রমণ করেন। আরাকানের রাজা নরমেইখলা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাংলায় পালিয়ে এসে গৌড়ের সুলতান জালালউদ্দীন মুহাম্মদ শাহ’র কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সুলতান তাকে হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য অনেক সৈন্য দান করেন। কিন্তু তার নিজ সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তিনি যুদ্ধে হেরে বন্দী হন বার্মারাজের কাছে। তিনি কৌশলে পালিয়ে আবার গৌড়ে আসেন। এবার সুলতান তাকে আরও সৈন্য দেন, আর দেন একজন ভালো সেনাপতি। এবার যুদ্ধে জয়ী হন নরমেইখলা, ফিরে পান রাজ্য আর স্থাপন করেন এক নতুন রাজধানী, যার নাম রাখেন রোহং। যেসব সৈন্য ও কর্মচারী নরমেইখলার সাথে গৌড় থেকে এসেছিলেন, তারা সকলেই থেকে যান এই রোহং শহরে। এদের বংশধররাই হলো রোহিঙ্গা মুসলমান।
রোহং শহরের বাংলা নাম দাঁড়ায় রোসাঙ্গ। এই নামেই বাংলায় এক সময় ডাকা হতো দেশটিকে। মধ্যযুগীয় বাংলা কাব্যেও একে উল্লেখ করা হয়েছে রোসাঙ্গ হিসেবেই। বর্তমানে অনেকেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে বাংলা ভাষার একমাত্র প্রাচীন চর্চাকেন্দ্র মনে করলেও আরাকান রাজসভায় একসময় বাংলা সাহিত্যের তুখোড় চর্চা হতো। বাংলা কাব্যের অনেক কদর ছিলো আরাকানে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হক ও আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের ‘আরাকান রাজসভায় বঙালা সাহিত্য’ নামক গ্রন্থটি থেকে। মহাকবি আলাওল রোসাঙ্গ রাজসভায় একজন সম্মানিত কবি ছিলেন। তার সমসাময়িক আরও বেশ কিছু কবি চট্টল অঞ্চলে উদ্ভুত হন ও বার্মীভাষী আরাকান রাজগণের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। বিষয়টি কিঞ্চিৎ বিস্ময়কর মনে হলেও এর যুক্তি আছে। ধারণা করা হয় এসব রাজগণের পূর্বপুরুষগণ এসেছিলেন মগধ (দক্ষিণ বিহার) থেকে। মাগধী ভাষা থেকেই বাংলা ভাষার উৎপত্তি। আর তাই হয়তো আরাকান রাজাদের জন্য বাংলা বুঝতে ও বাংলা সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে বিশেষ অসুবিধা হতো না। বাংলা কার্যত হয়ে উঠেছিলো এসব রাজাদের দ্বিতীয় ভাষার মতো। মধ্যযুগের বিশিষ্ট বাংলা কবি দৌলত কাজী তার ‘সতী ময়না‘ কাব্যের প্রস্তাবনায় লিখেছেনঃ
“কর্ণফুলি নদী পূর্বে আছে এক পুরী।
রোসাঙ্গ নগরী নাম স্বর্গ-অবতরী।।
তাহাতে মগধ বংশ ক্রমে বুদ্ধা চার।
নাম শ্রী সুধর্ম রাজা ধর্মে অবতার”।।
এখানে দৌলত কাজী বলছেন, সুধর্ম হচ্ছেন মগধ বংশের রাজা। বলছেন না তিনি কোনো রোসাঙ্গ বংশের রাজা। ১৮৯১ সালে রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘দালিয়া‘ গল্পটির প্রেক্ষাপট ছিলো মুঘল আমলে শাহ সুজার সাথে আরাকান রাজার বিবাদ। গল্পটি যদিও কাল্পনিক, তবুও লক্ষণীয় যে আরাকান রবীন্দ্র চেতনাতেও স্থান পেয়েছিলো।
ব্রিটিশ আমলে আরাকানকে যুক্ত করা হয় বার্মার সাথে, আর গোটা বার্মাকে করা হয় ভারত সাম্রাজ্যের একটা প্রদেশ। আজকের বার্মা তার সীমানা লাভ করেছে বৃটিশ প্রশাসনের কাছ থেকে। আর তাই আরাকান আজ বার্মার অংশ। আরাকান বরাবরই ছিলো একটি পৃথক রাজ্য। বার্মার চাইতে বরং আরাকান নানাভাবে নির্ভর করেছে বাংলাদেশের উপর। বার্মার সাথে আরাকানের একমাত্র যোগাযোগ ছিলো সমুদ্র পথে (এখন অবশ্য বিমান যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে)। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ও আরাকান রাজ্যের মধ্যে একমাত্র সীমান্ত নির্ধারণকারী বস্তু ছিলো নাফ নদী, যা অতি সহজেই পার হওয়া যেতো।
১৯৩৭ সালে বার্মা প্রদেশকে বৃটিশ সাম্রাজ্যের একটি মর্যাদা দেওয়া হয়। ব্রিটিশদের পরেই বার্মার সব বড় বড় সরকারী চাকরী ও ব্যবসা-বাণিজ্য ভারতীয়রা দখল করে নেয়। অল্প সুদে টাকা খাটিয়ে অনেক ভারতীয় কম সময়ে ধনী হয়ে ওঠেন। ভারতীয়রা বার্মায় ব্যবসার জন্য গিয়ে অনেক অপকর্মও করে আসেন। এমনকি অনেক বাঙালিও বার্মার মূল ভূখণ্ডে গিয়ে অনেক অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়েন। শরৎচন্দ্রের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘শ্রীকান্ত‘-এর দ্বিতীয় খন্ড যারা পড়েছেন, তারা জানেন, কেন ও কেমন করে এক হিন্দু বাঙালি যুবক, বর্মী রীতিতে বিয়ে করা তার বর্মী স্ত্রীকে রংপুরে তামাক কেনার কথা বলে ফেলে দেশে পালিয়ে এসেছিলো। এরকম অনেক ঘটনাই তখন ঘটেছে বার্মায়। বর্মীদের মনে আছে অনেকদিনের ক্ষোভ ও ঘৃনা।
আর তাই বার্মা বা বর্তমান মায়ানমারের জাতীয়তাবাদের মূলে যতটা রয়েছে বৃটিশ বিরোধী চেতনা, তার চেয়েও বেশি আছে ভারতীয় বহিরাগত বিরোধী মনোভাব। এখান থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব। বৃটিশ আমলে ভারতবর্ষ হতে বার্মায় যাওয়া হিন্দু ও মুসলমানদের সাথে বার্মা সরকার আদিবাসী রোহিঙ্গা মুসলিমদের গুলিয়ে ফেলেছে। তাই সরকার এদের সবাইকে বহিরাগত মনে করে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে খড়গহস্ত হয়েছে। অথচ বৃটিশ আমলে বার্মায় আসা বহিরাগতরা আর রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায় সম্পূর্ণ আলাদা গোষ্ঠী। এমনকি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী গণতন্ত্রকন্যা অং সান সূচীও এর ব্যতিক্রম নন !
৩৬,৭৭৮ বর্গকিলোমিটারের বর্তমান রাখাইন রাজ্য বরাবরই ছিলো অভাব-অনটন, অবহেলাগ্রস্ত। এখন সেখানে নিজ দেশেরই অধিবাসীদের কসাইয়ের মতো আচরণ, অত্যাচার আর গণহত্যা শুধুই মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানী বাহিনীর বাংলাদেশের মাটিতে চালানো ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার কথা। বাংলাদেশের ভূখন্ডে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে বাস করার অধিকার দিতে যাওয়াও আরেক বিড়ম্বনা। আমাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীন সমস্যাই কম নয়, সেখানে শরণার্থী রোহিঙ্গারা শুধু নতুন সমস্যারই সৃষ্টি করছে। এখন শুধুই হাওয়া বদলের অপেক্ষা। অপেক্ষা এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর সমাধাণের পথ খুঁজে পাবার।
- চকরিয়ায় তিনদিনের কৃষি মেলায় কন্দাল ফসল উৎপাদনে কৃষকেরা উদ্ভুদ্ধ
- হারবাং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে রোগীর ভোগান্তি
- পেকুয়ায় নিখোঁজ স্কুল শিক্ষকের সন্ধান মেলেনি
- চকরিয়ায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করতে হবে -জামায়াত
- পেকুয়ায় ট্রাক চাপায় মুদি দোকানী নিহত
- খুটাখালীতে সকড় সংস্কারের পূর্বেই ইটগুলো গায়েব নীরব
- তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধ সম্ভব” –ইউএনও চকরিয়া
- চকরিয়ায় সেনা কর্মকর্তা হত্যা: মূল হোতা নাছির উদ্দিন ও সহযোগী ডাকাত এনাম গ্রেফতার
- এডভোকেট মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান এর ২৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র
- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সাথে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ শিক্ষকদের মতবিনিময়
- নিপীড়িত গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য জামায়াত কর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে -আবদুল্লাহ আল ফারুক
- লেফটেন্যান্ট তানজিম হত্যার ৬ সন্ত্রাসীকে আটক করেন সেনাবাহিনী
- সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যা ও ডাকাতি,খুন,গুমের প্রতিবাদে খুটাখালী বহলতলীবাসী
- ডুলাহাজারার সংরক্ষিত বনে ডাকাতের আস্তানা, সন্ধ্যার পর শুরু হয় লুটতরাজ
- ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের পরিবারের সাথে সাক্ষাতে সালাউদ্দিন আহমদ
- এডভোকেট মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান এর ২৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র
- নিপীড়িত গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য জামায়াত কর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে -আবদুল্লাহ আল ফারুক
- চকরিয়ায় সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম সরোয়ার খুনের ঘটনায় দুইটি মামলা
- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সাথে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ শিক্ষকদের মতবিনিময়
- খুটাখালীতে সকড় সংস্কারের পূর্বেই ইটগুলো গায়েব নীরব
- চকরিয়ায় অবৈধ বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
- চকরিয়ায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করতে হবে -জামায়াত
পাঠকের মতামত: