স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ::
বেকার যুবকদের লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে লোভনীয় চাকরি দেয়ার নামে বিপুল টাকা আত্মসাত এর মামলায় অভিযুক্ত রামুর বহুল আলোচিত মানবপাচারকারি মনোহরী শর্মা দুলালকে কারাগারে পাঠিয়েছে বিজ্ঞ আদালত। মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে কক্সবাজার চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন জানালে বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃত মনোহরী শর্মা দুলাল রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের রমনীপাহাড় এলাকার বজেন্দ্র শর্মার ছেলে। তার বিরুদ্ধে বেকার যুবকদের বিভিন্ন দেশে লোভনীয় চাকরি দেয়ার নামে বিপুল টাকা আত্মসাত এর অভিযোগ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে একাধিক মামলা রয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজারে দায়ের করা মমালায় গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে তিনি এক বছরের বেশী সময় পলাতক ছিলেন। এসব মামলায় অভিযুক্ত মনোহরী শর্মা দুলালের স্ত্রী রুমা শর্মা এক বছর পূর্বে পুলিশের হাতের গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। এসব মামলায় অভিযুক্ত মনোহরী শর্মা দুলালের ছেলে রাহুল শর্মা এখনো পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাকে আটক করতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে জেলার বহুল আলোচিত মানবপাচারকারি চক্রের অন্যতম হোতা রুমা শর্মার পর এবার তার স্বামী মনোহরী শর্মা দুলালের জামিন নামঞ্জুর হওয়ার খবরে এলাকায় জনমনে স্বস্থি ফিরে এসেছে। উল্লসিত জনতা মনোহরী শর্মা দুলাল ও রুমা শর্মা সহ পাচারকারি চক্রের সকল সদস্যদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি বেকার তরুণ-যুবকদের চাকরি দেয়ার নামে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফিরিয়ে নেয়ারও জোর দাবি জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ছানা উল্লাহ জানিয়েছেন, মনোহরী শর্মা দুলাল ও তার স্ত্রী রুমা শর্মার বিরুদ্ধে লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে চাকরি দেয়ার নামে বেকার যুবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে বিজ্ঞ আদালতে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। রুমা শর্মাকে ইতিপূর্বে পুলিশ আটক করেছিলো।
মামলার বাদি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সুরাজপুর গ্রামের নির্মল কান্তি শর্মার ছেলে শংকর কান্তি শর্মা জানিয়েছেন, রুমা শর্মার ছেলে রাহুল শর্মা লন্ডন প্রবাসী। ছেলেকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে রুমা শর্মা ও তার স্বামী মনোহরী শর্মা প্রকাশ দুলাল মামলার বাদী শংকর শর্মা সহ অনেক বেকার তরুন-যুবককে লন্ডন সহ বিভিন্ন দেশে চাকরি দেয়ার নামে তাদের কাছ থেকে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
শংকর কান্তি শর্মা আরো জানান, মনোহরী শর্মা দুলাল, রুমা শর্মা ও তার সহযোগিরা তাকে লন্ডনে চাকরি দেয়ার নামে ২০১৫ সালে ৯ লাখ ১২ হাজার টাকা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে লন্ডন না পাঠিয়ে নিজেরা চট্টগ্রামে আত্মগোপন করে। পরে এ নিয়ে তিনি রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ লিখিত অভিযোগ দেন এবং রামু থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।
ইউনিয়ন পরিষদে মনোহরী শর্মা দুলাল, তার স্ত্রী রুমা শর্মা ও ছেলে রাহুল শর্মা দোষী সাব্যস্ত হলেও টাকা প্রদানে গড়িমসি করেন। এতে নিরুপায় হয়ে তিনি ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই কক্সবাজার এর উপ-পরিদর্শক মো. শরীফ উল্লাহ ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম অভিযুক্ত রুমা শর্মা ও তার স্বামী এবং ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
প্রতারক চক্রের কাছে সর্বস্ব হারানো শংকর কান্তি শর্মা আরো জানান, জমি, স্বর্ণালংকার, নিজের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল বিক্রি করে তিনি লন্ডনে চাকরির আশ^াসে রুমা শর্মা, মনোহরী শর্মা দুলাল ও রাহুল শর্মাকে ৯ লাখ ১২ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশে চাকরির পরিবর্তে প্রতারিত তিনি এখন মানবেতর সময় পার করছেন। এখন তাকে বিচারের জন্য বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে ঘুরতে হচ্ছে। এরপরও তিনি ন্যায় বিচার পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স জানিয়েছেন, শংকর কান্তি শর্মার অভিযোগ পেয়ে উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছিলো। তদন্তে টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রমানিত হলেও মনোহরী শর্মা দুলাল, রুমা শর্মা ও তার লোকজন টাকা ফিরিয়ে দিতে গড়িমসি করেছিলো।
জানা গেছে, রুমা শর্মা ও তার সহযোগিদের হাতে বিদেশ যাওয়ার নামে প্রতারিত হওয়া অনেক এভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে একাধিক মামলা দায়ের করে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতারিত তরুন-যুবকরা বিদেশে চাকরির প্রলোভনে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থ সহসা উদ্ধারের জন্য বিজ্ঞ আদালত, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
পাঠকের মতামত: