ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

মানুষের জন্য সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দেব: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক :: মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশে সব মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সব মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, ন্যায়পরায়ণতা যেন সৃষ্টি হয়।

শুক্রবার (১৪ আগস্ট) সকালে ৫০ হাজার বার পবিত্র কোরআন খতম এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সমাজসেবা অধিদপ্তর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ দোয়া মাহফিলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে ১৫ আগস্টের শোক বুকে নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আর আমরা কী সহ্য করে আছি। শুধু একটা চিন্তা করে যে, এই দেশটা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন।

তিনি (বঙ্গবন্ধু) দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আমার যতটুকু সাধ্য সেইটুকু করে দিয়ে যাবো, যেন তার আত্মাটা শান্তি পায় এবং এই রক্ত যেন বৃথা না যায়। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৮১ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। স্বাভাবিকভাবে আমার চেষ্টাই ছিল যে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার সয়েছেন—এ দেশের সেই মানুষের জন্য কিছু করে যাব সেটাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। ’

১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে দীর্ঘদিন সেই খুনের বিচার চাইতে না পারার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এই রকম ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। আমি সেই অবস্থা থেকে পরিবর্তন আনতে চাই। এ দেশে সব মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সব মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, ন্যায়পরায়ণতা যেন সৃষ্টি হয়। মানুষের অধিকার যেন সমুন্নত থাকে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে একটা হত্যাকাণ্ড হলে সবাই বিচার চাইতে পারে, মামলা করতে পারে, ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম আমাদের কারও মামলা করার বা বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। সেই অধিকারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে। খুনিদের সমস্ত দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাদের বিভিন্ন দেশে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। তারা পুরস্কৃত হয়েছিল এই খুন করার জন্য। নারী হত্যাকারী, শিশু হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতি হত্যাকারী—তাদের পুরস্কৃত করা হয়। ’

১৫ আগস্টের হত্যাকারীরা ঘৃণ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা হত্যা করেছে তারা ঘৃণ্য। তাদের বিচার করেছি আল্লাহ আমাদের সেই শক্তি দিয়েছেন। ইনডেমনিটি বাতিল করে দিয়ে তাদের বিচার করতে পেরেছি এতে আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করি। ’

১৫ আগস্টের হত্যাকারী এবং হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যে জড়িতদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই খুনিরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরই কিছু বিপথগামী সদস্য এবং কিছু উচ্চপদস্থ ছিল, যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ’

এতিম হওয়ার কষ্টের কথা তুলে ধরে ১৫ আগস্ট দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কষ্ট আরও বুঝলাম ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট। একদিন সকালে উঠে যখন শুনলাম আমাদের কেউ নেই। এই ১৫ আগস্ট আমি হারিয়েছি আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সবসময় ছায়ার মতো আবার বাবার সঙ্গে ছিলেন। ’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। আমার স্বামী তখন জার্মানিতে। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। অল্প কিছু দিনের জন্য। কিন্তু আর দেশে ফিরতে পারিনি। ৬ বছর আমাদের দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। আমার বাবার লাশও দেখতে পারিনি। কবর জিয়ারত করতে পারিনি। আসতেও পারিনি। এভাবে আমাদের বাইরে পড়ে থাকতে হয়েছিল।

এতিম হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হয়ে থাকার মতো কী কষ্ট এটা আমাদের মতো যারা ছিল তারা জানে। আমাদের পরিবারের আত্মীয় স্বজন যারা গুলিতে আহত, যারা কোন বেঁচে ছিল তারাও ওভাবে রিফিউজি হয়ে ছিল দিনের পর দিন। ’

১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে শিশু রাসেল নিহত হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট ভাইটি—আমি এখনো এই প্রশ্নের উত্তর পাই না। তার মাত্র ১০ বছর বয়স। তার জীবনের স্বপ্ন ছিল সে একদিন সেনাবাহিনীতেই যোগদান করবে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, তাকে সেই সেনাবাহিনীর সদস্যরাই নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করলো। তার অপরাধ কী? আমি জানি না। ’

পাঠকের মতামত: