ওসমান আবির, কক্সবাজার :; বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ। দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে নাফ নদী ও মায়ানমার এবং উত্তরে সুউচ্চ পাহাড় নিয়ে এই উপজেলা গঠিত। পর্যটকদের মনকাড়ার জন্য রয়েছে প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। সম্পদে ঐতিহ্যে টেকনাফ দেশের অন্যান্য উপজেলা হতে স্বতন্ত্রের দাবিদার।
কিন্তু ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ম্লান করে পর্যটকদের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় হলুদ-গোলাপি সর্বনাশা ইয়াবা।ফলে পর্যটন নগরীর বিপরীতে আতঙ্কের শহরে পরিণত হয় টেকনাফ।পর্যটন খাতের আয় থেকে বঞ্চিত হয় সরকার।ইয়াবার কালো গ্রাস ধ্বংস করে টেকনাফ সহ পুরো দেশ।ধ্বংস করে শিক্ষিত ও যুব সমাজ।এক পর্যায়ে ভয়াল রুপ ধারন করলে কঠোর হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।মাদক পাচার কালে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ছোট-বড় অনেক মাদক কারবারী।গ্রেফতার হয় অনেকে।তারপরও থেমে নেই মাদক পাচার।তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি আগের থেকে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।খুব শীঘ্রই টেকনাফ থেকে নির্মূল করা হবে ইয়াবা নামক মরননেশা।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, একসময় টেকনাফের মানুষের ঘুম ভাঙ্গত ইয়াবার গন্ধে।মানুষের গায়ে লেগে থাকত ইয়াবার গন্ধ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানে টেকনাফ থেকে প্রায় ৯০ ভাগ ইয়াবা ব্যবসা নির্মূল করা হয়েছে।খুব শীঘ্রই এই টেকনাফকে মাদকমুক্ত করা হবে। তাই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানের পাশাপাশি টেকনাফের পৌর শহর ও ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ প্রাঙ্গনে বাহারি ফুল গাছের চারা রোপন করে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।যাতে মাদকের গন্ধে নয়, ফুলের গন্ধে টেকনাফের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে।খুব শিঘ্রই এই টেকনাফ থেকে মাদকের বদনাম মুছে যাবে।পর্যটন নগরীতে পরিচিত হবে আগামীর টেকনাফ।
স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, মাদকের বদনামের জন্য পর্যটকরা কক্সবাজার এসেও টেকনাফ না বেড়িয়েই চলে যান। অথচ টেকনাফ গেলে দেখতে পাওয়া যাবে বাংলাদেশ-মায়ানমারের গাঁ ঘেষে বয়ে চলা বঙ্গোপসাগর থেকে উৎপন্ন নাফ নদী। যার মধুর কলতান পর্যটকদের বিভোর করবে।
টেকনাফে আরও দেখতে পাওয়া যাবে ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ, জলিলের দিয়া, নেটং পাহাড়, নোয়াখালীর ঝর্না শাহ পরীর দ্বীপের ঐতিহাসিক ঘোলার চড়, সাবরাং এক্সক্লুসিব ট্যুরিজম পার্ক, সূর্য উদয় ও সূর্য অস্ত যাওয়ার মনোরম দৃশ্য, সৈকতের সাদা বালির চিকচিকে দৃশ্য, জেলেদের মাছধরার দৃশ্য।সৈকতে রাতের দৃশ্য দেখার জন্য সৈকতের পাশে বিভিন্ন হোটেলে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে।টেকনাফ সৈকতে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে লাল কাঁকড়া,শামুক,ঝিনুক ও জেলেদের মাছ ধরার অপরুপ দৃশ্য।
টেকনাফ মডেল থানায় গেলে দেখতে পাওয়া যাবে পুলিশ কোয়ার্টার প্রাঙ্গনে অবস্থিত ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ।কলকাতার পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্জের সঙ্গে টেকনাফের জমিদার ওয়ানথিনের একমাত্র কণ্যা মাথিনের নিবিড় প্রেমের সাক্ষী এই কূপ। শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নেটং পাহাড়ে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে সবুজ শ্যামল হরেক রকম গাছের সারির অপরুপ দৃশ্য।এই পাহাড়ে রয়েছে হাতি, হরিণ, বানর, হুতুম প্যাঁচা,পাহাড়ি মুরগি,ময়ূর মেছো বাঘসহ কয়েক প্রজাতির পশুপাখি ও পাহাড়ে গা বেয়ে নামা ঝিরি ঝরনা।পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে দেখা যাবে নাফ নদী ও মায়ানমারের পাহাড়ের সারি সারি দৃশ্য।
নেটং পাহাড়ের উঁচু থেকে আবার দেখতে পাওয়া যাবে নাফ নদীর মাঝখানে অবস্থিত জলিলের দিয়া।বর্তমানে সেখানে বিদেশী পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে বিশেষ পর্যটন এলাকা।আবার কক্সবাজার থেকে আসার পথে দেখতে পাওয়া যাবে হোয়াইকং থেকে শামলাপুর যাওয়া পথে ঐতিহাসিক কুদুমগুহার অবস্থান। টেকনাফের শেষ সীমানা শাহ পরীর দ্বীপে রয়েছে ডুবুচর যা ঘোলার চর নামে পরিচিত। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজোম পার্ক ও জলিলের দিয়ার নাফ এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম পার্কের কাজ শেষ হলে বিদেশী পর্যটকরা বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস। বাস্তব পদক্ষেপ ও দৃষ্টি আকর্ষণ করলে একদিকে যেমন সরকারি কোষাগারে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা জমা হবে আবার অন্যদিকে পর্যটকের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
পাঠকের মতামত: